ঢাকা: উত্তরাঞ্চলের একসময়ের সবচেয়ে ব্যস্ততম পাবনার ঈশ্বরদী বিমানবন্দরে প্রায় দু’দশক ধরে ফ্লাইট পরিচালনা কার্যক্রম নেই। মাঝে ২০১৩ সালে ক’মাস ফ্লাইট চলাচল করলেও এখন আবার খাঁ খাঁ করছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও স্বাধীনতাযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দরটির রানওয়ে।
বিমানবন্দর ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বলছে, ফ্লাইট পরিচালনায় তারা বরাবরই প্রস্তুত। নোটিশ পেলেই পরিচালনা কার্যক্রম শুরু হতে বিলম্ব হবে না। কিন্তু এয়ারলাইন্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বক্তব্য, ফ্লাইট পরিচালনায় যতটা নিরাপত্তা দরকার, ঈশ্বরদী বিমানবন্দরে তা নেই। দু’দশক ধরে দু’পক্ষের এমন অবস্থানে কার্যত ঝুলে আছে বিমানবন্দরটির ভাগ্য।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সূত্রে জানা যায়, স্বাধীনতার পর থেকে উত্তরাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি ফ্লাইট উঠানামা করতো ঈশ্বরদী বিমানবন্দরে। কিন্তু নানা কারণে ১৯৯৬ সালে বিমানবন্দরটি বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ প্রায় ১৭ বছর পর ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে পুনরায় ফ্লাইট পরিচালনা শুরু হয় ঈশ্বরদীতে। কিন্তু চার মাসের মাথায় ২০১৪ সালের মার্চ মাসে আবারও বন্ধ হয়ে যায় এখানকার কার্যক্রম।
এ বিষয়ে ঈশ্বরদী বিমানবন্দরে ফ্লাইট পরিচালনাকারী বেসরকারি এয়ারলাইন্স নভোয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মফিজুর রহমানের সঙ্গে আলাপ করলে তিনি জানান, উড়োজাহাজ অবতরণের জন্য যে প্রশস্ত রানওয়ে দরকার তা ঈশ্বরদী বিমানবন্দরের নেই।
মফিজুর বাংলানিউজকে বলেন, ঈশ্বরদী বিমানবন্দরের রানওয়েতে ছোট প্লেন নামতে পারবে। আমাদের যে মডেলের প্লেন রয়েছে তা ল্যান্ডিংয়ের জন্য অন্তত ৯৮ ফুট প্রশস্ত রানওয়ে প্রয়োজন। ঈশ্বরদী বিমানবন্দরের রানওয়ের প্রস্থ ৭৫ ফুট। তাই আমাদের ইচ্ছে থাকলেও ঈশ্বরদীতে কোনো ফ্লাইট পরিচালনা করা সম্ভব নয়।
আলাপ করলে ফ্লাইট পরিচালনাকারী ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) কামরুল ইসলাম জানান, রানওয়ে সংকটের পাশাপাশি ঈশ্বরদী বিমানবন্দরের দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনাও এখানে ফ্লাইট বন্ধ রাখার অন্যতম কারণ।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ঈশ্বরদী বিমানবন্দরে অগ্নিনির্বাপণের জন্য যেসব গাড়ি প্রয়োজন তা নেই। তাছাড়া, তিন দিকেই নেই নিরাপত্তা বেষ্টনী। ফলে যখন ফ্লাইট ল্যান্ড করে, তখন উৎসুক জনতা রানওয়ের কাছাকাছি চলে আসে। যা অনিরাপদ।
কামরুল বলেন, ইউএস বাংলার ফ্লাইট নামতে অন্তত ১০০ ফুট প্রশস্ত রানওয়ের প্রয়োজন। অথচ ঈশ্বরদী বিমানবন্দরের রানওয়ে ৭৫ ফুট প্রশস্ত।
তবে, এ ধরনের ‘অক্ষমতা ও দুর্বলতা’র কথা অস্বীকার করেছেন ঈশ্বরদী বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আব্দুর রশীদ। তার দাবি, অগ্নিনির্বাপণের গাড়ি না থাকলেও ফ্লাইট পরিচালনার জন্য অন্যসব ব্যবস্থাপনা ঈশ্বরদী বিমানবন্দরের রয়েছে।
আব্দুর রশীদ বাংলানিউজকে বলেন, ঈশ্বরদী বিমানবন্দর ১৯৯৬ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়ার ১৭ বছর পর ২০১৩ সালে পুনরায় ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করে। কিন্তু চার মাস পরেই ২০১৪ সালের ২৯ মার্চ ফের ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ হয়ে যায়। ওই চার মাসে সফলতার সঙ্গে ৫২টি ফ্লাইট ওঠানামা করে এই বিমানবন্দরে। কিন্তু তারপর কোনো এয়ারলাইন্স এখানে আর ফ্লাইট পরিচালনা করেনি।
তিনি আরও বলেন, আমরা ফ্লাইট পরিচালনার জন্য প্রস্তুত। এক সপ্তাহের নোটিশে ফ্লাইট পরিচালনার সব ব্যবস্থা করতে পারি। কিন্তু কেন বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলো ফ্লাইট পরিচালনা করছে না, তা আমি বলতে পারবো না।
বেবিচক সূত্রে জানা যায়, ঈশ্বরদী বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য ৪ হাজার ৭০০ ফুট। আর প্রস্থ ৭৫ ফুট। তবে অগ্নিনির্বাপণের কোনো গাড়ি নেই এখানে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এটির কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। তখন বিমানবন্দরটি ‘হিজলি বেস এরিয়া’ নামে পরিচিত ছিল।
দেশে বর্তমানে ১১টি বিমানবন্দর রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও আটটি অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর। অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরগুলোর মধ্যে খুলনা বিভাগের অন্তর্ভুক্ত খান জাহান আলী বিমানবন্দরের কাজ চলমান রয়েছে। বন্ধ কেবল ঈশ্বরদী বিমানবন্দরটিই।
বাংলাদেশ সময়: ০১২৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০১৬
ইউএম/এইচএ/