ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

এভিয়াট্যুর

এয়ার টার্বুলেন্স নিয়ে ১০ সত্য, ভয় নেই, সতর্ক থাকুন

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৬
এয়ার টার্বুলেন্স নিয়ে ১০ সত্য, ভয় নেই, সতর্ক থাকুন

দূর আকাশে হঠাৎ যদি কেঁপে ওঠে উড়োজাহাজ। আর এরপর যদি কাঁপতেই থাকে, মনে হতে থাকে কোনও কিছু এসে আঘাত করছে আপনার ফ্লাইটটিকে, নয়তো বা মনে হতে কোনো কিছুর সঙ্গে চাপ লাগছে আর থরথর করে কাঁপছে গোটা আকাশযানটি, তাহলে! ওটা এয়ার টার্বুলেন্স।

এতে ভয়াবহ একটা আতঙ্ক কিন্তু আরোহীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। ফ্লাইটের ভেতরে ছোটখাটো দুর্ঘটনাও ঘটে। তবে এতে বড় বিপদের কোনো আশঙ্কা নেই!  পাইলট আর বিমান চলাচল বিশেষজ্ঞরা বলছেন তাদের কিছু অভিজ্ঞতার কথা। সাম্প্রতিক সময়ের একটি ঘটনা ঘটে যায় গত ডিসেম্বরের শেষভাগে। সেদিন এয়ার কানাডার একটি ফ্লাইট যাচ্ছিলো টরন্টো থেকে সাংহাই। পথে ফ্লাইটটি পড়ে বড় ধরনের এয়ার টার্বুলেন্সে। এতটাই আচমকা আর এতটাই বেশি যে, অক্সিজেন  মাস্কগুলো নেমে আসে যাত্রীদের সামনে। আর যাত্রীরা যেসব কম্বল গায়ে জড়িয়ে বসে-ঘুমিয়ে ছিলেন সেগুলো উড়ে গিয়ে এর গায়েরটা অনে্যর গায়ে পড়তে থাকে। পরের দিন নিউইয়র্ক টাইমসে খবর বের হয় এয়ার কানাডার ফ্লাইটে টার্বুলেন্সে ২১ জন আহত। ২০১৪ সালে ডেনভার থেকে বিলিংস যাচ্ছিলো ইউনাইটেড'র একটি ফ্লাইট। সেদিন এতই মারাত্মক টার্বুলেন্স হচ্ছিলো যে, এক নারী যাত্রী তার সিট থেকে ছিটকে উঠে মাথায় সিলিংয়ের সঙ্গে আঘাত পেয়ে রক্তাক্ত হন, আহত হন আরও চার জন।

বলার অপেক্ষা রাখেনা, দূর আকাশে এমন ঘটনা আতঙ্কের বটে। কিন্তু এটাও সত্য, একটু পরেই সবকিছু হয়ে যায় ঠিকঠাক। টার্বুলেন্সের কারণে ফ্লাইট বিধ্বস্ত হয়েছে এমন কোনো একটি উদাহরণও নেই।

পাইলট আর বিমান চলাচল বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন এমন টার্বুলেন্সের দশ সত্য...

এক. টার্বুলেন্সে আঘাতপ্রাপ্ত হয় ঠিকই তবে খুব কম

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন এডমিন্সট্রেশন জানিয়েছে এমন এয়ার টার্বুলেন্সে বছরে গড়ে ৫৮ আরোহী আঘাতপ্রাপ্ত হন। আর তাদের মধ্যে দুই-তৃতিয়াংশ ফ্লাইট ক্রুকিংবা যাত্রী যারা সিটবেল্টটি না বেঁধেই বসেছিলেন। তার মানেই হচ্ছে- যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রতি বছর যে আট কোটি মানুষ আকাশযানে ভ্রমণ করেন তাদের মধে্য মাত্র ২০ জন এয়ার টার্বুলেন্সের শিকার। আর এই টার্বুলেন্স সাধারণত ৩০ হাজার ফুট কিংবা তারও বেশি উঁচু আকাশেই ঘটে।

দুই: সাধারণত এয়ার টার্বুলেন্স অক্ষতিকর

টার্বুলেন্স স্রেফ একটি বাতালের চাপ, ঝড়ঝঞ্ঝা, জেট স্ট্রিম, পাহাড়ের কাছাকাছি এলাকা থেকে উড়ে যাওয়ার কারণে হয়। আর তা প্রায় সব ফ্লাইটেই কমবেশি হয়।

তিন: পাইলটরা যানেন কখন ও কোথায় টার্বুলেন্স হতে পারে

অনেক ক্ষেত্রই পাইলটরা আগে থেকেই জানেন কখন ও কোন আকাশে টার্বুলেন্স হতে পারে। তখন তারা আরোহীদের সিট বেল্ট বেঁধে নেওয়ার নির্দেশনা দিতে পারেন। এছাড়াও পাইলটদের কাছে, ফ্লাইট পূর্ববর্তী আবহাওয়া রিপোর্ট থাকে, ককপিটের রাডার থেকে তথ্য পাওয়া যায়, আর ওই অঞ্চলে উড়ে চলা অন্যান্য ফ্লাইট থেকেও তথ্য আসে ফলে সতর্ক থাকার সব সুযোগই থেকে যায়।

চার: ক্লিয়ার এয়ার টার্বুলেন্স একটি ভিন্ন গল্প

বলা হয় ক্লিয়ার এয়ার টার্বুলেন্স সবচেয়ে বিপজ্জনক। মেঘহীন পরিষ্কার আকাশে যখন সবকিছু স্পষ্ট চোখে পড়ে তখনই হঠাৎ আসা এয়ার টার্বুলেন্স এমনকি রাডারেও ধরা পড়ে না। এমন ক্ষেত্রে এয়ার ক্রুরা নিজেদের আসনে ছুটে গিয়ে বসার সময় টুকুও পান না, কিংবা যাত্রীরা কেউ আসনে না থাকলে সেখান পর্যন্ত ফিরতেও পারেন না, সিটবেল্ট বাঁধতেও পারেন না অনেকে। আর এ পর্যন্ত টার্বুলেন্সের কারণে যতজন আঘাত প্রাপ্ত হয়েছেন তার অধিকাংশই এই ক্লিয়ার এয়ার টার্বুলেন্সের কারণে।

পাঁচ:  ক্লিয়ার এয়ার টার্বুলেন্স বাড়ছে

বিজ্ঞানীদের মতে, মারাত্মকধরনের ক্লিয়ার এয়ার টার্বুলেন্সের হার বাড়ছে। এই শতকের মাঝের দিকে তা বর্তমান সময়ের চেয়ে দ্বিগুনেরও বেশি বেড়ে যাবে বলেই আশঙ্কা করছেন তারা। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণেই এমনটা ঘটছে। সুতরং ফ্লাইট ঝাঁকুনির এমন সমস্যা বাড়তেই থাকবে।

ছয়: টার্বুলেন্সের কারণে প্লেন বিধ্বস্ত হবে না

মনে হবে ফ্লাইট বুঝি বিধ্বস্ত হয়ে যাচ্ছে, ‌কিন্ত তা হবে না, তা এই টার্বুলেন্স যতই মারাত্মক হোক! প্লেনগুলো এ ধরনের এয়ার টার্বুলেন্সে সহনীয় করেই নির্মিত হয়।

সাত: পাইলটরাও এমন পরিস্থিতিতে করণীয় সম্পর্কে প্রশিক্ষিত

শান্ত থাকুন! পাইলট এমন পরিস্থিতিতে করণীয় সম্পর্কে জানেন, পুরোপুরি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত রয়েছেন। এ অবস্থায় পাইলট অতি সতর্কতায় আবহাওয়ার ধরন দেখেই পরবর্তী উড্ডয়ন পরিকল্পনা নেন। পরিস্থিতি বুঝে সবচেয়ে নিরাপদ রুট কোনটা হবে তা বেছে নেন। আর টার্বুলেন্স যখন এসেই যায় তখনো তারা থাকেন শান্ত, সুস্থির।

আট: সিটবেল্ট বাঁধা থাকাই ভালো

ক্লিয়ার এয়ার টার্বুলেন্স যতটা বাড়ছে তাতে এর কারণে ক্ষতি এড়াতে সবসময় সিটবেল্ট বেঁধে রাখাই ভালো। এটা খুব স্বাভাবিক একটা কাজ, তবে তা আপনাকে ঝুঁকিমুক্ত রাখবে।

নয়: প্লেনেও শিশুদের গাড়ির আসন ব্যবহার

এয়ার টার্বুলেন্সে শিশুদের ঝুঁকি একটু বেশি। বিশেষ করে কোলের শিশুদের জন্য। কারণ এমন পরিস্থিতিতে আপনার কোল থেকে শিশুটি ছিটকে যেতে পারে। ইউনাইটেড'র ফ্লাইটে এমন একটি ঘটনা ঘটেছেও। এ জন্য কথা উঠেছে বাচ্চাদের জন্য তাদের গাড়ির আসন ব্যবহার করাই ভালো।

দশ: টার্বুলেন্সেই যাতে না পড়তে হয় সেই উদ্যোগ

এয়ারলাইন্সগুলো একটি নতুন প্রযুক্তি পরীক্ষা নিরীক্ষা করছে যা নিশ্চিত করা গেলে এ ধরনের এয়ার টার্বুলেন্স এড়ানো যাবে। এটি এক ধরনের আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মি যার মাধ্যমে এয়ার টার্বুলেন্সর অস্তিত্ব বুঝে ফেলা যাবে এবং তা এড়িয়ে যেতে পারবেন পাইলটরা।

বাংলাদেশ সময় ১০২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৬
এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।