ঢাকা: হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের আমদানি শাখায় পড়ে আছে শত শত অখালাসকৃত লাগেজ। ব্যবসায়িক ও ব্যক্তিগত প্রয়োজনে আমদানিকৃত পণ্য নিয়মিতই চুরি যাচ্ছে কার্গো ভিলেজ থেকে।
কার্গোভিলেজে অখালাসকৃত পণ্য কত পরিমাণে রয়েছে তার সঠিক হিসাবও নেই কর্তৃপক্ষের কাছে। সব মিলিয়ে যেন এক গোলক ধাঁধায় পরিণত হয়েছে শাহজালালের কার্গো ভিলেজ।
সমন্বয় নেই কার্গো ভিলেজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যেও। অখালাসকৃত পণ্যের তালিকা নিয়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে ঢাকা কাস্টমস হাউজ ও বিমান বাংলাদেশের মধ্যে।
কার্গো ভিলেজ থেকে হরহামেশা ছোটখাট পণ্য চুরির পাশাপাশি বড় আকারের পণ্য চুরির বিষয়ও নজর এসেছে কর্তৃপক্ষের। সাত মাস আগে জুলাই মাসে মরিয়ন এন্টারপ্রাইজ এর হংকং থেকে আনা ২০ হাজার পিস মোবাইল হ্যান্ড সেট এর ৪৮০ পিস কার্গো ভিলেজের ১ নং গোডাউন থেকে চুরি হয়।
কার্গো ভিলেজ সূত্রে জানা যায় এই ৪৮০টি মোবাইল হ্যান্ড সেটের মূল্য ছিলো প্রায় ৩৮ লক্ষ টাকা। ঢাকা কাস্টমস হাউজ সূত্রে জানা যায় এ সব অব্যবস্থাপনার মূলে আছে বিমান বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও স্বেচ্ছাচারিতা। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের থেকে কার্গো ভিলেজ লিজ নিয়েছে বিমান বাংলাদেশ।
অব্যবস্থাপনার কারণে কার্গো ভিলেজ থেকে প্রতিনিয়তই বড় বড় চালানের কিছু অংশ চুরি গেলেও প্রতিষ্ঠানগুলো বিমান কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে ভয় পায়।
অভিযোগ রয়েছে, কার্গো ভিলেজের নিয়ন্ত্রণ হাতে থাকার কারণে পরবর্তীতে আমদানির ক্ষেত্রে এসব প্রতিষ্ঠানকে নানাভাবে হয়রানি করে বিমান। এছাড়া ২১ দিন পর পর অখালাসকৃত পণ্যের তালিকা ঢাকা কাস্টমস হাউজের কাছে জমাদানের কথা থাকলেও বিমান বাংলাদেশ তা করছে না বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
ঢাকা কাস্টমস হাউজ থেকে জানা যায় যায়, চলতি মাসের ১৫ তারিখে কর্তৃপক্ষ লিখিতভাবে বিমান বাংলাদেশের কাছে অখালাসকৃত পণ্যের তালিকা চাইলেও তারা তা দেয়নি।
শুধু তালিকাই নয় অব্যবস্থাপনার কথাও জানালেন কার্গো ভিলেজে অবস্থানরত ঢাকা কাস্টম হাউজের ডেপুটি কমিশনার শহীদুজ্জামান সরকার।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, অখালাসকৃত পণ্যের তালিকা এখনো আমরা বিমান বাংলাদেশের কাছ থেকে পাইনি। তাছাড়া অখালাসকৃত পণ্যের কোনটি কোথায় আছে তা তারা কখনোই আমাদের জানান না। ফলে সরকারি দায়িত্ব পালনে অসুবিধার মুখোমুখি হচ্ছি আমরা।
তবে এসব অভিযোগ মানতে নারাজ বিমান বাংলাদেশ এর বিমান কার্গো কমপ্লেক্স এর আমদানি শাখা।
বিমান কার্গো কমপ্লেক্স এর আমদানি শাখার ব্যবস্থাপক মো. আজিজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের সব কিছুই নিয়ম অনুযায়ীই হচ্ছে। আমরা ২১ দিনেও খালাস হয়নি এমন পণ্যের তালিকা ঢাকা কাস্টমস হাউজকে দিয়েছি। কিন্তু তারা এখনো কেন পাননি সে বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না।
কার্গো ভিলেজ থেকে পণ্য চুরির যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি এখন মিটিং আছি। এসব বিষয়ে কথা বলতে পারবো না। ’ তারপর একাধিকবার তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।
ঢাকা কাস্টমস হাউজ থেকে জানা যায়, প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫ হাজার কনসাইনমেন্ট হয় কার্গো ভিলেজে। এসব কনসাইনমেন্টের ৯৬ ভাগ খালাস হলেও নানা কারণে ৪ ভাগ খালাস হয় না। আইন অনুযায়ী কোনো পণ্য আমদানির ২১ দিনের মধ্যে খালাস না হলে তার মালিকানা সরকার নিয়ে নিতে পারে। পরে নিলামে বিক্রি হয় এসব পণ্য। বিমান বাংলাদেশ ছাড়াও ৫৪টি কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে কনসাইনমেন্ট আসছে বাংলাদেশে।
বাংলাদেশ সময: ১৪১৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৬
ইউএম/আরআই