ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ মে ২০২৪, ২২ শাওয়াল ১৪৪৫

এভিয়াট্যুর

সৈয়দপুর থেকে রাইসুল ইসলাম

রিজিওনাল এয়ার হাব সৈয়দপুর!

সৈয়দপুর থেকে রাইসুল ইসলাম || ছবি: জি এম মুজিবুর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৪৮ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০১৬
রিজিওনাল এয়ার হাব সৈয়দপুর! ছবি: জি এম মুজিবুর/ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধার ওপারেই পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি। পাশেই হাতছানি দিয়ে ডাকছে দার্জিলিং, সিকিম, কালিম্পং।

হাতের নাগালে নেপালও। বাংলাবান্ধার পার্শ্ববর্তী স্থলবন্দর বুড়িমারী পার হলেই ভুটান। আর ডানের দিকে আসাম মেঘালয়সহ ভারতের সাত রাজ্য- ‘সেভেন সিস্টার্স’। সৈয়দপুর বিমানবন্দর থেকে সড়কপথে বুড়িমারী কিংবা বাংলাবান্ধা পৌঁছানো খুবই সহজ।

তাই আকাশপথে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে নেমে সেখান থেকে বুড়িমারী কিংবা বাংলাবান্ধা হয়ে নেপাল, ভুটানসহ ভারতের দার্জিলিং, কালিম্পং কিংবা শিলিগুড়িগামী যাত্রীর সংখ্যা দিন দিনই বাড়ছে।

এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত হলে সৈয়দপুর হবে এ অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ ‘রিজিওনাল এয়ার হাব’। আর সেজন্য বেশিদিন অপেক্ষাও করতে হচ্ছে না। সৈয়দপুর বিমানবন্দরে শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের কাজ।       

নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ এবং ভারতের উত্তর পূবাঞ্চলীয় এসব এলাকা নিযে উপ আঞ্চলিক ‘বিবিআইএন জোট’ সম্প্রতি আনুষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। ইতোমধ্যেই জোটের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে হয়েছে মোটর যান চলাচল চুক্তি (এমভিএ) স্বাক্ষর। এই চুক্তির মধ্য দিয়ে জোটের চার দেশের মধ্যে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হবে। এরই মধ্যে বিবআইএন মোটর যাত্রা কর্মসূচি সম্পন্নও করা হয়েছে।

চারটি ভিন্ন ভিন্ন দেশ অথচ ভৌগলিকভাবে খুবই নিকটবর্তী এসব এলাকার মধ্যে আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি তৈরি করাই এই উপ আঞ্চলিক জোটের লক্ষ্য। আর এই আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি বাস্তবায়নে আকাশপথে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হাব হতে যাচ্ছে সৈয়দপুর।

অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে দেশের অন্যতম ব্যস্ত বিমানবন্দর সৈয়দপুর। এই মুহূর্তে চারটি বিমান সংস্থা প্রতিদিন একাধিক ফ্লাইট পরিচালনা করছে সৈয়দপুরে। খুব শিগগিরই একে উন্নীত করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক মানে। এর মধ্য দিয়ে উত্তরবঙ্গের একমাত্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হবে সৈয়দপুর। ফলে এর সরাসরি সুফল পাবে বৃহত্তর রংপুর ও দিনাজপুরের বিভিন্ন জেলার মানুষ। এছাড়া উপ আঞ্চলিক জোটের আওতায় রিজিওনাল কানেক্টিভিটির দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে সৈয়দপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।

ইতোমধ্যেই সৈয়দপুর বিমানবন্দর ব্যবহারের আগ্রহ প্রকাশ করেছে ভুটান। ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে যে বিমানবন্দরটি রয়েছে, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া হলেই অনেক সময়ই সেখানে বিঘ্নিত হয় ফ্লাইট পরিচালনার কার্যক্রম। সেক্ষেত্রে ভুটানগামী আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলো খুব সহজেই অবতরণ করতে পারবে সৈয়দপুরে।

বুড়িমারী সীমান্ত দিয়ে সৈয়দপুর থেকে খুব বেশি দূরে নয় ভুটানও। একই সমীকরণে নেপাল, ভারতের শিলিগুড়ি সহ সেভেন সিস্টার্স এলাকার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ হবে সৈয়দপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।

বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গের অফিসিয়াল অ্যাসাইনমেন্ট শুরু করেছিলাম সৈয়দপুর দিয়ে। ইউএস বাংলার সকাল নয়টা ৪৫ মিনিটের ফ্লাইটে চমৎকার আতিথেয়তায় সিক্ত হয়ে ‘পিন পয়েন্ট’ শিডিউল টাইমে অবতরণ করলাম সৈয়দপুর বিমানবন্দরে।

বিমানবন্দরটি ছোটো, কিন্তু অবাক হলাম যাত্রীর ভীড় দেখে। বর্তমানে চারটি এয়ারলাইন্স ফ্লাইট পরিচালনা করছে সৈয়দপুরে। ঢাকা থেকে আসা ফ্লাইটগুলো একে একে অবতরণ করছিলো। যাত্রীদের ভীড়ে তখন রীতিমত হইহাট্টা বিমানবন্দরের লাউঞ্জে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিদেশিকেও দেখা গেল সেখানে। খবর নিয়ে জানলাম তারা সৈয়দপুর ইপিজেড কেন্দ্রিক বিদেশি ব্যবসায়ী।

এর আগে ঢাকা থেকে যাত্রা শুরুর আগে শাহজালাল বিমানবন্দরে ইউএস বাংলার কাউন্টারে আলাপ হয় এয়ারলাইন্সটির সার্ভিস ম্যানেজার মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে। অনেক খুটিনাটি তথ্য দেয়ার পাশাপাশি তিনি তুলে ধরলেন ‘রিজিওনাল হাব’ হিসেবে সৈয়দপুরের সম্ভাবনার কথাও।

জানালেন, সম্প্রতি বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে ম্যান ইমিগ্রেশন চালু হওয়ায় শিলিগুড়ি কিংবা দার্জিলিং যেতে ইচ্ছুক অনেক যাত্রীই এখন সৈয়দপুর বিমানবন্দর ব্যবহার করছেন। সৈয়দপুর নেমে খুব সহজেই সড়ক পথে পৌঁছে যাওয়া যায় বুড়িমারী কিংবা বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে নেপাল ও ভুটানগামী ট্রানজিট যাত্রীরাও ঢাকা থেকে কম সময়ে ভারতের সীমান্তে পৌঁছাতে বেছে নিচ্ছেন সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে। এ কারণে দিন দিন বেড়েই চলেছে এই রুটের যাত্রী সংখ্যা।

২০১৪ সালের অক্টোবরে যেখানে সপ্তাহে তিনটি ফ্লাইট নিয়ে এই রুটে যাত্রা শুরু করে ইউএস বাংলা, সেখানে অল্প কদিনের ব্যবধানেই এখন সপ্তাহের প্রত্যেক দিনই দুটি করে ফ্লাইট পরিচালনা করছে এয়ারলাইন্সটি।

এছাড়া সৈয়দপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত হলে এখান থেকে নেপাল ভুটান কিংবা চীনের কুনমিংয়ের সঙ্গেও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনার সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন মাহবুবুর রহমান।

এছাড়া বৃহস্পতিবারই সৈয়দপুরে রুট চালু করে অপর বেসরকারি ফ্লাইট পরিবচালনাকারী প্রতিষ্ঠান নভো এয়ার।

জানা গেল, খুব শিগগিরই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত হতে যাচ্ছে সৈয়দপুর বিমানবন্দর। ২০১৭ সালের মধ্যেই রানওয়ে বর্ধিতকরণসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

তাই বলা যেতে পারে, সেদিনের আর খুব বেশি দেরি নেই যখন ‘রিজিওনাল এয়ার হাব’ হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে সৈয়দপুর ‘আন্তর্জাতিক’ বিমানবন্দর।

বাংলাদেশ সময়: ০৬৪৯ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০১৬
আরআই/এমএমকে

** ‘কখনও টাইমিং মিস করে না ইউএস বাংলা’

** ফাঁকা হচ্ছে ঢাকা, চাপ আকাশপথেও

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।