ঢাকা: প্রথম সব কিছুর অভিজ্ঞতাই রোমাঞ্চকর। সেটা যদি হয় আবার প্লেনে চড়া, তবে তো কথাই নেই।
বলছি, ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স এর কথা। প্রথম প্লেনে ওড়ার অভিজ্ঞতার সঙ্গে এই এয়ারলাইন্সের সময়ানুবর্তিতা ও সেবা পেয়ে মুগ্ধই হতে হলো।
বুধবার (৩ আগস্ট) ইঞ্জিনচালিত নৌকায় বন্যা উপদ্রুত এলাকা রৌমারী-রাজীবপুরের চষে বেড়াচ্ছিলাম। হঠাৎ সহকর্মী কান্ট্রি এডিটর শিমুল সুলতানা উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে ডাক দিলেন। বন্যায় ডুবে যাওয়া জনপদে ভাসমান ঘর-বাড়িগুলো দেখছিলাম তখন।
তার এভাবে দৃষ্টি আকর্ষণে এগিয়ে গেলাম। কী হয়েছে? জানতে চাইতেই তিনি বললেন, ‘বস (এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেন) মেসেজ পাঠিয়েছেন। ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সে আমাদের জন্য টিকিট বুকড করা হয়েছে। ’
তিনি জানালেন, ৪ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে ফ্লাইট, সৈয়দপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা হবে।
ব্যাপারটা শুনেই ভেতরে কেমন অনুভূতি হয়েছিল, সেটা বোঝানোর মতো নয়। তবে কীভাবে সৈয়দপুর যাওয়া যায়, তা নিয়ে ভাবনায় পড়ে গেলাম। তৎক্ষণাৎ আলোচনা শুরু করলাম। কারণ পূর্ব নির্ধারিত শিডিউল পরিবর্তন না করলে কুড়িগ্রামের রৌমারী থেকে সৈয়দপুর আসা মোটেই সহজ হবে না।
পরিকল্পনা পাল্টে নিয়ে দ্রুত কাজ সেরে ফিরছিলাম। পথে বিজিবি (বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ) ক্যাম্পে না যেতে পেরে খুব মন খারাপ করলেন স্টাফ ফটো করেসপন্ডেন্ট দীপু মালাকার। ২০০১ সালে বিজিবি (তৎকালীন বিডিআর) ও বিএসএফ (ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর) এর মধ্যে ঘটে যাওয়া গুলিবিনিময়ের স্মৃতিচিহ্ন এবং নিহত বিডিআর জওয়ানদের কবর দেখতে না পারাটাই তার মন খারাপের কারণ।
যেতে হবে বহুপথ। এরমধ্যে নদী পথেই আড়াই ঘণ্টা কাটাতে হবে। তাই বাধ্য হয়ে দীপুর আগ্রহ দমিয়ে আমরা ছুটলাম কুড়িগ্রাম। সেখানে থেকে রাতে রংপুরে যাত্রাবিরতি।
খোঁজ নেওয়া হয় ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সে। জানা গেল, এয়ারলাইন্সেরই গাড়ি সকাল ৯টায় রংপুর থেকে যাত্রীদের সৈয়দপুর বিমানবন্দরে নিয়ে যাবে। তাই ঘুম থেকে উঠে সরাসরি পুলিশ লাইন্স হলে উঠলাম। সেখানে যথাসময়ে এসে হাজির ইউএস বাংলার গাড়ি। প্রায় ঘণ্টাখানেকের যাত্রা শেষে আমরা পৌঁছালাম সৈয়দপুর বিমানবন্দরে।
এরপর বোডিং পাস নিয়ে ওয়েটিং রুমে অপেক্ষা। তখন ঘড়ির কাঁটায় ১০টা ৩৫ মিনিট। আমাদের ডাকা হলো। যাত্রীরা একে একে উঠে গেলেন ইউএস বাংলার এয়ারক্রাফটে। আমরা ইচ্ছে করেই লাইনে সবার পেছনে দাঁড়ালাম। যেন ইচ্ছেমতো সেলফি তোলা যায়। অবশেষে প্লেনের সিটে বসলাম।
ঠিক ১০টা ৫০ মিনিট। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আছি। একটা রোমাঞ্চকর অনুভূতি হচ্ছিলো। প্লেন ওড়ার সময় নাকি অনেক ঝাঁকি লাগে, তাই শক্ত করে ধরে রইলাম সিটের হাতল। কিন্তু কিছুই হলো না। কিছুদূর চলার পর ডানে-বায়ে একটু দোল খেয়ে একটানে আকশে উঠে গেল এয়ারক্রাফট বিএস-১৫২। এর আগেই বিনয়ের স্বরে সিট বেল্ট লাগানোর পরামর্শ দিলেন ইউএস বাংলার ক্রুরা।
মিনিট পনের আকাশে ওড়ার পর মনে হচ্ছিল, যেন নিজেই উড়ছি। সাদা-শুভ্র মেঘের পর মেঘ পেছনে ফেলে উড়ছি। সে কী আনন্দ! এর মাঝে হোমমেড কেক আর বার্গারও দিয়ে গেলেন এয়ারলাইন্স কর্মীরা। সেগুলো খাওয়া শেষ হওয়ার আগেই লাউড স্পিকারে পাইলটের ঘোষণা এল, ‘আপনাদের বাঁয়ে এখন যমুনা সেতু, দেখে নিতে পারেন। ’ তখন প্লেনের জানালা দিয়ে সবাই চিলের মতো চোখে যমুনা সেতু উপভোগে মনোযোগী।
মিনিট দশেক চলার পর আবারও ঘোষণা, ‘আমরা অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই হযরত শাহজালাল (র) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবো। ’ ঠিক ১১টা ৪০ মিনিটেই আমরা অবতরণ করলাম ঢাকায়। একেবারে সময় মেনে। নিরাপদ ও সময়ানুবর্তী যাত্রীসেবার সাক্ষী হয়ে।
ইউএস বাংলা এরইমধ্যে আকাশপথের যাত্রীদের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। তাই হয়তো আমাদের ফ্লাইটে একটি সিটও খালি ছিল না। জনপ্রিয়তার শক্তিতে সম্প্রতি এ এয়ারলাইন্স আন্তর্জাতিক রুটেও চলাচল শুরু করে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৯ ঘণ্টা, আগস্ট ০৫, ২০১৬
ইইউডি/জিসিপি/এইচএ