ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

এভিয়াট্যুর

এবার বিমানের পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০১৬
এবার বিমানের পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ

ঢাকা: একের পর এক পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র জালিয়াতির ধারাবাহিকতায় এবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া ভুল প্রশ্নের কারণে পরীক্ষার্থীরা বিভ্রান্তির শিকার হয়েছেন বলেও দাবি তুলেছেন ভুক্তভোগীরা।

 

মঙ্গলবার বিকালে (১৬ আগস্ট) বিমান ট্রেনিং সেন্টারে (বিএটিসি) অনুষ্ঠিত গ্রাউন্ড সার্ভিস অ্যাসিসট্যান্ট পদের এ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র কেন্দ্রের বাইরে নিয়ে উত্তর খুঁজতে দেখা গেছে কজনকে। তড়িঘড়ি করে এক ঘণ্টার মধ্যেই পরীক্ষার সব খাতা দেখে পরদিন বুধবার সকালেই ফলাফল প্রকাশ করা হয়। বৃহস্পতিবার এ পদের মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। গুঞ্জন রয়েছে প্রতিটি প্রশ্ন ৫০ হাজার টাকা করে বিক্রি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়-বিমান অভিজ্ঞতা সম্পন্ন গ্রাউন্ড সার্ভিস অ্যাসিসট্যান্ট এর ২৫ পদের জন্য ১০০ নাম্বারের এমসিকিউ পদ্বতিতে এক ঘণ্টার পরীক্ষা আয়োজন করে। এতে কয়েকশ’ আবেদন জমা পড়লেও বিমান মাত্র ৪৫ জনকে পরীক্ষায় অংশ নিতে বাছাই করে। এ অবস্থায় সোমবার রাতেই গুঞ্জন ওঠে প্রশ্নপত্র ফাঁসের।

মঙ্গলবার সকাল দশটায় পরীক্ষা কেন্দ্রের সামনে গিয়ে দেখা যায়- বেশ কজন পরীক্ষার্থী উত্তর তৈরি করছে। এ সময় একজনকে দ্রুত বিএটিসির অধ্যক্ষ পার্থ কুমার পান্ডের রুমে গিয়ে যোগাযোগ করে প্রশ্ন সম্পর্কে নিশ্চিত হতে দেখা গেছে।

এদিকে ওই প্রশ্নে ব্যাপক ভুল ত্রুটি ছিল বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিমানের একজন পরিচালক। তিনি উদাহরণ টেনে বলেন-একটি প্রশ্ন ছিল, একটি উড়োজাহাজে কতগুলো আসন থাকে। পেলেটের ওজন কতো? এ প্রশ্নটি সম্পূর্ণ ভুল। কারণ এতে উল্লেখ করা হয়নি কি ধরনের উড়োজাহাজ -ছোট না বড়, বোয়িং না এয়ারবাস। একই পেলেটেরও উড়োজাহাজ ভেদে তারতম্য রয়েছে। সেটা সুনির্দিষ্ট না করলে সদুত্তর দেয়া কোন পণ্ডিতের পক্ষেই সম্ভব নয়। এ ধরনের ৭টি ভুল প্রশ্ন ছিল।

প্রশ্ন উঠেছে-কারা এ প্রশ্নপত্র তৈরি করেছে। বিমান সূত্র জানায়- গ্রাউন্ড সার্ভিস অ্যাসিসট্যান্ট পদটি কাস্টমার সার্ভিসের হওয়ায় প্রশ্নপত্র তৈরির দায়িত্ব ছিল এই বিভাগের পরিচালকেরই। কিন্তু বিমানের কেন্দ্রীয় প্রশাসনের পরিচালক বেলায়েত হোসেন তাতে বাধা দিয়ে নিজেই তার অধীনস্থ হিউমান রিসোর্সের দোহাই দিয়ে বিএটিসির অধ্যক্ষ পার্থ কুমার পান্ডের কাছে পাঠিয়ে দেন। ওই অধ্যক্ষ নিজে কোন দিন কাস্টমার সার্ভিসে চাকরি না করলেও অপ্রাসঙ্গিক ও ভুল প্রশ্নপত্র তৈরি করেন। আবার তার অফিস থেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠছে।

মূলত ২৫টি পদের চাকরি নিয়ে হরিলুট করার জন্যই পরিচালক বেলায়েত, ম্যানেজার সুদীপ ও বারী সিন্ডিকেট মিলে কাস্টমার সার্ভিসকে বাদ দিয়ে এ পরীক্ষার দায়ভার নিজেরাই করায়ত্ত করে ফেলেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিচালক বেলায়েত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন- প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগের কথা মিডিয়ার কাছ থেকেই শুনেছি। তবে তা কতোটা সত্য মিথ্যা সেটা খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।

এদিকে বিতর্কিত ওই পরীক্ষায় প্রথমে ৩০ জন পাস করলেও পরে পরিচালক প্রশাসনের অফিসে বসে আরও কজনকে পাস করানোর জন্য ১০ নম্বর গ্রেস দেয়া হয়। মূলত একজন প্রভাবশালী কর্মকর্তার প্রার্থীকে পাস করানোর জন্য দশ নম্বর স্পেশাল গ্রেস দিয়ে পাস করানো হয়। প্রথমে সিদ্ধান্ত ছিল পাঁচ নম্বর গ্রেস দেয়ার। কিন্তু তাতে ওই পরিক্ষার্থী পাস করেনি। পরে দশ নম্বর দেয়ার পর ওই প্রার্থীকে উত্তীর্ণ দেখিয়ে মৌখিক পরীক্ষায় হাজির হতে বলা হয়। এ ধরনের জালিয়াতিতে বিমানের তোলপাড় শুরু হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০১৬
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।