ঢাকা: হাঙ্গেরি যাওয়ার পথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৭৭ এয়ারক্রাফট যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে তুর্কমেনিস্তানে জরুরি অবতরণের ঘটনায় সংসদীয় কমিটিতে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। এ ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে বেসামরিক বিমান পরিবহন পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেননের ওপরও।
মন্ত্রী নিজেই সাংবাদিকদের এ কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, চারদিনের সফর শেষ করে প্রধানমন্ত্রী দেশে ফেরার আগেই এ ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি দেওয়া হবে।
সোমবার (২৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে সংসদের ফটকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন মন্ত্রী।
রাশেদ খান মেনন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ভিভিআইপি ফ্লাইটটি কীভাবে এ অবস্থার মধ্য দিয়ে গেল তা নিয়ে সংসদীয় কমিটির আজকের বৈঠকে আমাদের সদস্যরা অত্যন্ত ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আমাকে দায়ী করেও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। এতে লজ্জার কিছু নেই। কিন্তু ঘটনা যেটা এরইমধ্যে ঘটেছে, সেটার জন্য সিভিল এভিয়েশনের পক্ষ থেকে একটি, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পক্ষ থেকে একটি এবং মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
মন্ত্রী জানান, বিমানের গঠিত কমিটিকে আগামী ১ ডিসেম্বরের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্য দুই কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে এক সপ্তাহের মধ্যে।
“তবে এরইমধ্যে বিমানকে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী ফেরার আগেই যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা যেন নেওয়া হয়। যেহেতু ফ্লাইটটি ফিরে এসেছে, তাই সেই ফ্লাইটে যার দায় পাওয়া যাবে তার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ”
মন্ত্রী বলেন, একটি ফ্লাইটে বিভিন্ন গ্রুপ থাকে, তারা বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করে। আজকে (সোমবার) তারা (বিমান) দেখবে কারা জড়িত, আগামীকালের (মঙ্গলবার) মধ্যে মোটামুটিভাবে প্রাথমিকভাবে যারা দায়ী তারা চিহ্নিত হয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রী আসার আগেই জড়িতদের শাস্তি দেওয়া হবে। চূড়ান্ত রিপোর্ট তো হবেই। তার আগে প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ীই শাস্তি দেওয়া হবে।
তিনি ঘটনা তুলে ধরে বলেন, আমাদের একটি রিপোর্ট দিয়েছে। সেই রিপোর্টে বলা হয়েছে ইঞ্জিনের ‘ফুয়েল’ প্রেসার কমে যাচ্ছিল। নিয়ম হচ্ছে, এ ধরনের ঘটনা যদি ঘটে তাহলে সঙ্গে সঙ্গে পাইলটের দায়িত্ব হচ্ছে নিকটবর্তী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্লাইট অবতরণ করানো। পাইলট অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে নিকটস্থ আশগাবাদ বিমানবন্দরে নেমেছে। ফ্লাইটের ইঞ্জিনিয়াররাই এটা খুঁজে বের করে প্রধানমন্ত্রীকে নিরাপদে বুদাপেস্টে পৌঁছে দিয়েছেন।
মন্ত্রী বলেন, ফ্লাইট ছাড়ার আগে পরীক্ষা-নিরীক্ষার দায়িত্বে বেশ কিছু বিভাগ রয়েছে। এজন্য যখন ফ্লাইটটা এসে গেছে, তখন আজ এবং আগামীকালের মধ্যে প্রাথমিকভাবে খুঁজে বের করা যাবে কে বা কারা জড়িত।
এক প্রশ্নের জবাবে রাশেদ খান মেনন বলেন, আমরা আপনাদের আশ্বস্থ করছি, ভিভিআইপিদের চলাচলের জন্য আলাদা এক্সিকিউটিভ জেট কেনা হবে। এ নিয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আমার আলাপ হয়েছে। তিনি বলেছেন অর্থ দেবেন এবং শিগগির এটা কেনা হবে।
সংসদীয় কমিটির সভাপতি সাবেক মন্ত্রী লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, আজকের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর ফ্লাইটে যান্ত্রিক ত্রুটির ঘটনার বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে। সেটা নিয়ে আমাদের জানানো হয়েছে, এরইমধ্যে তিনটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা এ ব্যাপারে গভীরভাবে অসন্তোষ প্রকাশ করেছি।
“আমরা দেখেছি এর আগেও প্রধানমন্ত্রীর দেশে ফেরার সময় একটি ফ্লাইট এয়ারপোর্টে নামার সময় রানওয়েতে ত্রুটি দেখা দিয়েছিল। ওই ঘটনায় কী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল তা জানতে চাইলে, তারা জানিয়েছে ব্যবস্থা নিয়েছে। তবে আমরা তাতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছি। বলেছি ওই ঘটনায় যে ধরনের দায়িত্বহীন আচরণ করা হয়েছে তাতে আরও বেশি শাস্তি দেওয়া উচিত ছিল। ”
ফারুক খান বলেন, সংসদীয় কমিটির আজকের বৈঠকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী দেশে ফেরার আগেই যারা দোষী তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হোক। আমরা তাদের তদন্ত রিপোর্ট দেখে প্রয়োজন মনে করলে সংসদীয় কমিটির পক্ষ থেকে একটি উপ-কমিটি গঠন করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০১৬
এসএম/এইচএ/