ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

এভিয়াট্যুর

দক্ষ জনবলের অভাবে লেজেগোবরে বিমান

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৫, ২০১৬
দক্ষ জনবলের অভাবে লেজেগোবরে বিমান

অদক্ষ, অকর্মা আর অল্প জনবলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে এখন লেজেগোবরে অবস্থা। জাতীয় পতাকাবাহী এই প্রতিষ্ঠানকে ঢেলে সাজাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রচেষ্টা এবং কোটি কোটি টাকার বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠানটি মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না। 

ঢাকা: অদক্ষ, অকর্মা আর অল্প জনবলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে এখন লেজেগোবরে অবস্থা। জাতীয় পতাকাবাহী এই প্রতিষ্ঠানকে ঢেলে সাজাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রচেষ্টা এবং কোটি কোটি টাকার বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠানটি মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না।

 
 
বরং মাথাভারি প্রশাসন, আর আমলাদের লালফিতার দৌরাত্ম্যে রাষ্ট্রীয় এয়ারলাইন্সটি তার পুরনো বদনামের দিকেই ফিরে যাচ্ছে।  
ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের ইউনিয়নবাজি আর কাজের প্রতি অনীহা ছাড়াও ঘরের ভেতরে সৃষ্ট নানা কারণে মাঝে মাঝেই অশান্তও হয়ে পড়ছে বলাকা ভবন। যার প্রভাবে ক্রমাগত লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হচ্ছে বিমান।   
 
জন্মের পর থেকে, এমনকি ২০০৭ সালে একটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তরের পরও প্রায় ৪৫ বছর বয়সী বিমানের কোনো সাংগঠনিক কাঠামো ও সঠিক জনবল পরিকল্পনা তৈরি হয়নি। সঠিক মানবসম্পদের উন্নয়নে নিতান্তই অবহেলা, ব্যবস্থাপনায় আমলাদের আধিপত্য বিস্তার এবং বিশ্বের শীর্ষ বহুজাতিক পেশাদার এয়ারলাইন্স পরিচালনায় সক্ষম হতে পারে- এমন সব পদক্ষেপ না থাকা ও সুপারিশ উপেক্ষা করাকেই বিমানের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দায়ী করা হচ্ছে।
 
অনেকেই বলছেন, বিমানের সাবেক চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন আহমেদ প্রতিষ্ঠানটিকে কিছুটা উন্নতির দিকে নিতে শুরু করলেও নতুন ব্যবস্থাপনা তার সকল অর্জনকেই হারাতে শুরু করেছেন।  
 
বছর খানেক আগেও বিমানের যে সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছিলো, এখন আর তা নেই। সে সময় কিংবা তারও বছর খানেক আগে বিমান কিছুটা হলেও লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছিলো। কিন্তু এখন তা আবার কমতে শুরু করেছে।  
 
বিমানের জন্য প্রয়োজনীয় জনবল স্বল্পতা আগে থেকেই ছিলো, এখনো রয়েছে। কিন্তু  বিদ্যমান জনবলের অধিকাংশের মধ্যে প্রয়োজনীয় দক্ষতার অভাব এখন আরও প্রকট হয়ে উঠেছে। এই প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের মধ্যে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনে সঠিক কাজটি করে যাওয়া, গ্রাহকদের সঠিক সেবা দিয়ে ব্যবসার পরিবেশ তৈরি ও উন্নত করা, এমনকি সঠিক আচরণ ও কথা বলার ধরন-ধারণ নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।  
 
ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে সাধারণ স্তর পর্যন্ত সর্বত্রই সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি, কাজের যোগ্যতা, দূরদর্শিতা এবং সাধারণ জ্ঞানের মারাত্মক অভাব রয়েছে বলেও মনে করছেন অনেকে।
 
আসছে জানুয়ারিতে বিমানের বয়স সাড়ে চার দশক পূর্ণ হতে চলেছে। কিন্তু এ দীর্ঘ সময়েও দক্ষ এয়ারলাইন্স পরিচালনার লক্ষ্যে একটি দক্ষ ব্যবস্থাপনা ক্যাডার গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে জাতীয় পতাকাবাহী উড়োজাহাজ সংস্থাটি। শুধুমাত্র এতোগুলো বছরই নষ্ট করা হয়নি, রাষ্ট্রের সন্মান বাড়াতে আকাশপথের সেবার গুরুত্বকেও উপেক্ষা করা হয়েছে।
 
এয়ারলাইন্সের সাফল্য নির্ভর করে প্রযুক্তি, যোগাযোগ, উড়োজাহাজ ও এর সরঞ্জামের সর্বোত্তম ব্যবহারের ওপর। কিন্তু এর সবগুলো উপাদানেরই অভাব বিমানের বর্তমান ব্যবস্থাপনায় রয়েছে।  
বিদ্যমান ব্যবস্থাপনার পেশাদারিত্বের সামর্থ্য অর্জনে দক্ষতার অভাব যেমন রয়েছে, সকল স্তরে তেমনি রয়েছে যোগ্যতাসম্পন্ন কর্মীরও ঘাটতি।  
 
সম্প্রতি বিমানের মহাব্যবস্থাপক পদে ডজনখানেক নিয়োগ হলেও ওই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের পর্যাপ্ত দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি। দক্ষ নির্বাহী ক্যাডার নিয়োগও হয়নি খুব একটা।  
 
বিমানের ভেতরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য কার্যকর প্রশিক্ষণ কর্মসূচি থাকলেও সঠিক উদ্যোগের অভাবে তা কাজে লাগছে না।  
 
এদিকে ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো জাতীয় পতাকাবাহী বিমানের বহরে নতুন কয়েকটি দ্রুতগামী ও আধুনিক প্লেন যোগ হয়েছে এবং আরো আসার অপেক্ষায় রয়েছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, সেগুলো পরিচালনায় তেমন কোনো নিজস্ব দক্ষ জনবল নেই প্রতিষ্ঠানটির।
 
লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হওয়ার স্বপ্ন পূরণে নতুন এসব উড়োজাহাজ আনতে বিপুল বিনিয়োগ করেছে বিমান। এরই মধ্যে দশটি নতুন বোয়িং উড়োজাহাজের মধ্যে চারটি বোয়িং বি ৭৭৭-৩০০ ইআর ও দু'টি বোয়িং বি৭৩৭-৮০০ যুক্ত হয়েছে। বাকি চারটি বোয়িং বি৭৮৭’র মধ্যে দু'টি ২০১৮ সালে এবং ২০১৯ সালের মধ্যে অন্য দু'টি বিমানের হয়ে আকাশে উড়বে।
 
এই আধুনিক বহর বিমানকে অবশ্যই একটি নতুন যুগে প্রবেশ করাতে সক্ষম হতে পারতো। কঠোর মান নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নেওয়া এবং দক্ষতার উন্নয়নের মাধ্যমে লাভজনক যুগ শুরুর আশাও করতে পারে এয়ারলাইন্সটি। কিন্তু দক্ষ এবং প্রয়োজনীয় কর্মীর অভাব, দুর্বল সেবা হয়ে রয়েছে বড় প্রতিবন্ধকতা। এ ছাড়াও লাভজনক হতে প্রয়োজনীয় অন্য বিষয়গুলোরও মারাত্মক অভাব রয়েছে।  
 
এসব ক্ষেত্রে বর্তমান পরিস্থিতি এতোটা উদ্বেগের যে, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও বহরের আধুনিকায়ন এবং সমস্যা চিহ্নিতকরণে উপযুক্ত জনবলের অভাব ব্যাপকভাবেই অনুভূত হচ্ছে।  

এ অবস্থা মোকাবেলায় অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে বিশাল ওই বিনিয়োগ গচ্চা যাবে বলেই আশঙ্কা রয়েছে।  
 
সব মিলিয়ে একটি লেজেগোবরে প্রতিষ্ঠানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বিমান, যে পরিস্থিতি শিগগিরই পরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না।  
 
বাংলাদেশ সময়: ০৭৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০১৬
এএসআর/এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।