শনিবার (১০ মার্চ) কক্সবাজারের একটি হোটেলে আয়োজিত ইউএস-বাংলার দ্বিতীয় কাস্টমার সাকসেস সামিটে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করছিলেন মন্ত্রী। সামিটে অংশ নিয়েছেন দেশ-বিদেশের ৮০০ ট্রাভেল এজেন্ট ও কর্পোরেট অফিসের উর্ধ্বতন প্রতিনিধি।
মন্ত্রী বলেন, নির্ধারিত সময়ে ফ্লাইট পরিচালনা করে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও সুনাম ছড়িয়ে দিচ্ছে ইউএস-বাংলা। নতুন নতুন গন্তব্যে পরিচালিত হচ্ছে তাদের ফ্লাইট।
বর্তমান সরকার বিমান পরিবহন ও পর্যটন খাতের উন্নয়নে কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আধুনিক করার উদ্যোগ হাতে নেওয়া হয়েছে। ফলে বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর এয়ারক্রাফট নামার উপযোগী হবে বিমানবন্দরটি। অত্যাধুনিক টার্মিনাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নত দেশে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করা যাবে এখান থেকে।
মন্ত্রী এ সময় বেসরকারি এয়ারলাইন্সের উন্নয়নে মনিটরিং সেল গঠনের ঘোষণা দেন।
অনুষ্ঠানে কানাডার হাইকমিশনার বেনিয়ট প্রিফনটেইন বলেন, ইউএস-বাংলা বাংলাদেশের সুনাম দেশের বাইরে ছড়িয়ে দিচ্ছে। বেসরকারিখাতে এটি সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে ভাল এয়ারলাইন্স।
অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব) সভাপতি মঞ্জুর মোর্শেদ মাহবুব বলেন, অত্যন্ত সুন্দরভাবে দেশে ও দেশের বাইরে ফ্লাইট পরিচালনা করছে ইউএস-বাংলা। এটা খুব ভাল দিক। তবে সরকারের প্রণোদনা বাড়ানো দরকার।
ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ ও জেএমজি এয়ার এরইমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অন্য দেশগুলোর চেয়ে এখানে ফুয়েল চার্জ ও হ্যান্ডেলিং চার্জ বেশি। এটা কমানো দরকার। অন্যথায় বেসরকারি বিমান পরিবহন খাত দুর্বল হয়ে পড়বে। দেশি এয়ারলাইন্স টিকিয়ে রাখতে সরকারের উচিত একটি মনিটরিং সেল তৈরির মাধ্যমে সমস্যা খুঁজে বের করে তার সমাধান করা।
ইউএস-বাংলার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ইউএস-বাংলা আগামী ৩ এপ্রিল থেকে চীনের গুয়াংজু রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করবে। এরপর সৌদি আরবের জেদ্দা ও রিয়াদ, ইতালির রোম এবং যুক্তরাজ্যের লন্ডন রুটেও ফ্লাইট পরিচালনা পরিকল্পনাধীন রয়েছে।
আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, গত তিন বছরে দেশের অন্যতম এয়ারলাইন্সে পরিণত হয়েছে ইউএস-বাংলা। এ সময়ে আমরা ৩৫ হাজারের বেশি ফ্লাইট পরিচালনা করেছি। যা দেশের ইতিহাসে বিরল।
তিনি বলেন, ২০১৪ সালে মাত্র দু’টি এয়ারক্রাফট দিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল দেশের সব অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করা। আমরা সেটা বাস্তবায়ন করে এখন দেশের বাইরেও ফ্লাইট পরিচালনা করছি।
তিনি সম্মেলনের বিষয়ে বলেন, এ ধরনের সম্মেলন করার প্রধান উদ্দেশ্যই হচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যারা ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তাদের সবাইকে এক সুতোয় গাঁথা, ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসাকে উৎসাহিত করা, আর দেশের পর্যটন শিল্পকে আরও বিকশিত করা। যাত্রা শুরুর প্রথম দিন থেকে আমরা ফ্লাইট শিডিউল ও যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে আসছি। আমরা ব্যবসায়িক সম্পর্কের মাধ্যমে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সকে করতে পেরেছি আপনাদের এয়ারলাইন্স।
সামিটে উল্লেখযোগ্য আয়োজনের মধ্যে ছিল বেস্ট সেলার অ্যাওয়ার্ড, ট্রাভেল ও কর্পোরেট পার্টনারদের সঙ্গে ইউএস-বাংলার দ্বিপাক্ষিক বৈঠক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতে ফানুস ফেস্টিভালসহ অনেক ইভেন্ট।
বাংলাদেশ ছাড়াও এশিয়ার সাতটি দেশ ওমান, কাতার, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ভারত ও নেপালের ট্রাভেল পার্টনারদের মধ্যে ২০১৭ সালের ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ‘বেস্ট অব দ্য বেস্ট সেলার অব দ্য ইয়ার’ নির্র্বাচিত চট্টগ্রামের ‘বি ফ্রেশ ট্রাভেলস্’কে অনুষ্ঠানে পুরস্কৃত করা হয়। এছাড়া ইউএস-বাংলার অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গন্তব্যের ট্রাভেল এজেন্টদের মধ্যে যারা বেস্ট সেলার নির্বাচিত হয়, তাদের মধ্যেও সম্মাননা স্মারক ও সার্টিফিকেট বিতরণ করা হয় সামিটে।
‘ফ্লাই ফাস্ট-ফ্লাই সেফ’ শীর্ষক স্লোগানে ২০১৪ সালের ১৭ জুলাই ৭৬ আসনবিশিষ্ট দু’টি ড্যাশ৮-কিউ৪০০ এয়ারক্রাফট দিয়ে ঢাকা-যশোর ফ্লাইট পরিচালনার মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে ইউএস-বাংলা। এখন অভ্যন্তরীণ সব রুট ছাড়িয়ে সিঙ্গাপুর, কুয়ালালামপুর, ব্যাংকক, দোহা, মাস্কাট, কাঠমুন্ডু ও কলকাতা রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে এয়ারলাইন্সটি।
বর্তমানে ইউএস-বাংলার প্লেনবহরে চারটি ড্যাশ৮-কিউ৪০০ ও চারটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ এয়ারক্রাফট রয়েছে। ২০১৮ সালের মধ্যে আরও তিনটি ড্যাশ৮-কিউ৪০০, তিনটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ এবং দু’টি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর এয়ারক্রাফট যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষের।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যাত্রা শুরুর পর থেকে ইউএস-বাংলার ৯৮ দশমিক ৭ শতাংশ অন-টাইম ফ্লাইট পরিচালনা ও আন্তর্জাতিক মানের ইন-ফ্লাইট সার্ভিস যাত্রীসাধারণের কাছে এটিকে নির্ভরযোগ্য এয়ারলাইন্সের স্বীকৃতি দিয়েছে এবং এরইমধ্যে প্যাসিফিক এশিয়া ট্রাভেল অ্যাসোসিয়েশন (পাটা) ও ট্রাভেল বিষয়ক অন্যতম পত্রিকা দি বাংলাদেশ মনিটর কর্তৃক সেরা এয়ারলাইন্সের স্বীকৃতি পেয়েছে এটি।
দেশীয় বিমান পরিবহনখাতে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সই একমাত্র কোম্পানি যা আইএসও ৯০০১:২০০৮ সার্টিফাইড এয়ারলাইন্স এবং নিউইয়র্ক সিটির ডিভিশন অব কর্পোরেশনের একমাত্র তালিকাভূক্ত বাংলাদেশি এয়ারলাইন কোম্পানি। আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা রয়েছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ফ্রিকোয়েন্ট ফ্লাইয়ার প্রোগ্রাম ‘স্কাই স্টার’সহ অনেক সেবাধর্মী ও সময়োপযোগী সার্ভিস উল্লেখযোগ্য। স্কাই স্টার কার্ড ব্যবহারকারীরা নির্ধারিত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে আকর্ষণীয় ডিসকাউন্ট সুবিধা পেয়ে থাকেন।
এছাড়াও যাত্রীদেরকে বেশ কয়েকটি সার্ভিস দিয়ে এভিয়েশন শিল্পে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে ইউএস-বাংলা। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- আন্তর্জাতিক রুটের বিজনেস ক্লাসের যাত্রীদের পিক-ড্রপ সার্ভিস, আন্তর্জাতিক ফ্লাইট অবতরণের পর ১০ মিনিটে ল্যাগেজ ডেলিভারি, ওয়েজ আর্নার্সদের জন্য বিমানবন্দরে প্রবাসী সহায়তা ডেস্ক, সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য ২০ শতাংশ মূল্যছাড়, সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তা ও গলফারদের ১০ শতাংশ মূল্যছাড়সহ বিভিন্ন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে ইএমআই ও নানাবিধ যাত্রীসুবিধা।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩১ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০১৮
ইইউডি/এইচএ/
** চীনের পর জেদ্দা-রিয়াদ-রোম-লন্ডনে রুটেও উড়বে ইউএস-বাংলা
** কক্সবাজারের আকাশে ঝলমলে রোদ
** আকাশপথে আস্থার নাম ইউএস-বাংলা