বুধবার (২৩ জানুয়ারি) এক বিবৃতিতে এ দাবি জানিয়েছেন সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ ইয়াছিন চৌধুরী সিআইপি ও সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী তাপস বিশ্বাস।
বিবৃতিতে বলা হয়, প্রায় ৬ মাস এ রুটে বিমানের বড় উড়োজাহাজ বন্ধ থাকায় সীমাহীন দুর্ভোগে আছেন ওমান প্রবাসী প্রায় ৮ লাখ বাংলাদেশি।
চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম-মাস্কাট রুটে সপ্তাহে তিন দিন ৪১৯ আসনের বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর এবং বাকি ৩ দিন ১৬২ আসনের বোয়িং ৭৩৭ চলাচল করে থাকে। প্রতিবছর হজ মৌসুমে হাজিদের সুবিধার্থে বড় উড়োজাহাজ বোয়িং ৭৭৭ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয় এবং হজ শেষে আবার চালু করা হয়। কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় গত হজ মৌসুমে মধ্য জুলাই থেকে এই রুটে বোয়িং ৭৭৭ বন্ধ রাখা হয়। হজ শেষে ২৭ আগস্ট থেকে ফিরতি ফ্লাইট শুরু হয়ে ২৫ সেপ্টেম্বর শেষ হয়। আশা করা হয়েছিল অক্টোবর প্রথম সপ্তাহ থেকে ওমান রুটে আবার বড় উড়োজাহাজ চলাচল শুরু হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তা আর চালু হয়নি। সপ্তাহে সাত দিনই চলছে বোয়িং ৭৩৭।
সরকারি নিদের্শনা মোতাবেক বাংলাদেশ বিমান বিনামূল্যে প্রবাসীদের মরদেহ পরিবহন করে। এখন সপ্তাহে সাত দিনই বোয়িং ৭৩৭ চলাচল করায় সে সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, বোয়িং ৭৩৭ দিয়ে এ রুটে চলাচলকারী বাংলাদেশের বেসরকারি বিমান সংস্থা রিজেন্ট এয়ারওয়েজ ও ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের মরদেহ পরিবহনের সক্ষমতা নেই। তারপরও এমন পরিস্থিতিতে সমিতির অনুরোধে রিজেন্ট এয়ারওয়েজ বেশ কয়েকটি মরদেহ বিনামূল্য দেশে পাঠিয়ে সহযোগিতা করেছে এবং করছে। কিন্তু সংস্থাটির ১৮৬ আসনের বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজে সবসময় মরদেহ সংকুলান করা সম্ভব হয় না। ফলে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে বিদেশি বিমান সংস্থার ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে ওমান প্রবাসীদের। কিন্তু বিদেশি বিমানে ১৭০ ওমানি রিয়াল (৩৭ হাজার টাকা) চার্জ গুনতে হয়। প্যাকেজিং ও প্রসেসিংয়ের জন্য ৩০০ ওমানি রিয়াল (৬৬ হাজার টাকা) দিতেই যখন শ্রমিক শ্রেণি এবং অসহায় প্রবাসীদের সামর্থ্য হয় না সেখানে বাড়তি ৩৭ হাজার টাকা চার্জ কিভাবে দিতে পারেন। কিন্তু এখন বিদেশি বিমানের বাড়তি চার্জ জোগাতে সবারই হিমশিম খেতে হচ্ছে।
এ ছাড়া এমিরাত, কাতার এয়ারওয়েজের মতো বিদেশি বিমানের ট্রানজিটের কারণে দীর্ঘযাত্রার ঝক্কি মরদেহ বা অসুস্থ রোগীর ক্ষেত্রে অনেক পীড়াদায়ক জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, সবচেয়ে বেশি দুর্গতি চট্টগ্রামগামী প্রবাসীদের। কারণ সব বিদেশি বিমান শুধু ঢাকায় অবতরণ করে। ওমান প্রবাসীর ৬৫ ভাগই চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষ। যে কারণে বিমানসহ দেশের সব বিমানসংস্থা ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়েই ওমান যাতায়াত করে। এভিয়েশন আইন অনুয়ায়ী বিদেশি বিমানগুলো সে সুবিধা পায় না।
বড় উড়োজাহাজ সংকটের কারণে বাংলাদেশ বিমান অসুস্থ যাত্রী নেওয়াও বন্ধ করে দিয়েছে উল্লেখ করে নেতৃবৃন্দ জানান, বোয়িং ৭৭৭-৩০০ সচরাচর বোডিং ব্রিজে যুক্ত করা হয় বলে অসুস্থ ও শারীরিক অক্ষম যাত্রীদের হুইল চেয়ার সহজে তোলা যায়। আর বোয়িং ৭৩৭ সবসময়ই দূরবর্তী বে’তে পার্কিং করা হয় এবং সেখান থেকে বাসে টার্মিনালে যাত্রী আনা-নেওয়া করা হয়। এ ক্ষেত্রেও বিদেশি বিমানের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। সেখানে একজন অ্যাটেনডেন্টসহ আড়াই-তিন লাখ টাকা খরচ হয় প্রবাসীর।
ব্যাগেজ ভোগান্তি বিষয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, অন্যান্য সংস্থার মতো ওমান থেকে দেশগামী যাত্রীকে ৪৫ কেজি ব্যাগেজ সুবিধা দিয়ে থাকে বিমান বাংলাদেশ। যাত্রীপ্রতি ৩০ কেজি সক্ষমতা সম্পন্ন বোয়িং ৭৩৭ যোগে একসঙ্গে সব ব্যাগেজ আনা সম্ভব নয়। তাই দেশে পৌঁছে সঙ্গে সঙ্গে ব্যাগেজও পায় না অনেক প্রবাসী। দিন, সপ্তাহ পরে সেই ব্যাগেজ পাচ্ছেন তারা।
বড় উড়োজাহাজ সংকটের কারণে বাংলাদেশ বিমান মাস্কাট রুটের যাত্রীও হারাচ্ছে বলে মনে করে চট্টগ্রাম সমিতি। কারণ ছোট উড়োজাহাজের জন্য বেসরকারি বিমানসংস্থা দু’টির সব যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা নেই। তাই বিদেশি বিমান সংস্থাগুলো লুফে নিচ্ছে সেই সুযোগ।
চট্টগ্রাম সমিতি এ বিষয়ে বিমান প্রতিমন্ত্রী এবং সরকারের সর্বোচ্চ মহলের হস্তক্ষেপ ও সহযোগিতা কামনা করেছে। সপ্তাহে ২-৩টি ৭৭৭-৩০০ উড়োজাহাজের ব্যবস্থা করলেই সংকট নিরসন হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০১৯
এআর/টিসি