তখন ইমিগ্রেশন পুলিশের এক সদস্য এসে চেক করতে থাকেন আবু সাঈদকে। এক পর্যায়ে তাকে হেনস্তা শুরু করেন।
ওই পুলিশ সদস্য তাকে বিভিন্নভাবে জেরা করতে করতে জানতে চান, কেন তিনি ২০১৮ সালে মালয়েশিয়া গিয়েছিলেন? আবার এখন কেন সিঙ্গাপুর যাচ্ছেন? এক পর্যায়ে আবু সাঈদকে ওই পুলিশ সদস্য বলেও ওঠেন, ‘তুই আসলে ট্যুরিস্ট না। মানবপাচারে জড়িত। ’
এসময় এক সংবাদকর্মীও ওই ফ্লাইটের বোর্ডিং পাস পাওয়ার লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। পরে ওই পুলিশ সদস্যকে পরিচয় দিয়ে ঘটনা জানতে চাইলে তিনি দ্রুত সটকে পড়েন।
কেবল আবু সাঈদ নন, এমন অনেকের অভিযোগ আছে; পাসপোর্ট-ভিসা-টিকিট চেকিংয়ের নামে এয়ারলাইন্সের কাউন্টারের লাইনে দাঁড়ানো যাত্রীদের ডেকে নিয়ে হয়রানি করার। অথচ ভিসা ও পাসপোর্ট চেকিং শেষে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করেই বোর্ডিং পাসের জন্য এয়ারলাইন্সের কাউন্টারে যান যাত্রীরা।
কেবল ট্যুরিস্ট ভিসায় গমনকারীরাই নন, চিকিৎসা, ব্যবসা ও শ্রমিক ভিসার যাত্রীরাও নিস্তার পান না হয়রানি থেকে। বিশেষ করে অপদস্থ হন শ্রমিক ভিসায় যাতায়াতকারীরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি প্রবাসে শ্রম দেওয়া রেমিট্যান্স যোদ্ধারা। বিদেশে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেন তারা। অথচ বিদেশ গমনকালে কিংবা দেশে ফিরে তারাও বিমানবন্দরে হয়রানির কবলে পড়েন।
অনেক যাত্রীর ভাষ্যে, দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ত শাহজালাল বিমানবন্দরে আগে শুধু লাগেজ পেতে দুর্ভোগ পোহাতে হতো। যদিও নানা উদ্যোগের কারণে লাগেজ পেতে আগের চেয়ে ভোগান্তি অনেকটা কম হচ্ছে। এখন যুক্ত হয়েছে ইমিগ্রেশনে হয়রানি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মূলত চাহিদামাফিক টাকা হাতিয়ে নিতে এরকম হয়রানি চালানো হয়। বিমানবন্দরের বাইরেও নানা প্রক্রিয়ায় চলে হয়রানি-ভোগান্তি। বিশেষ করে কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন পুলিশের কতিপয় সদস্যই এর সঙ্গে জড়িত।
সূত্র জানায়, বহির্গমন, পার্কিং লট, ক্যানোপি, কনকোর্স হল, আগমনী কনভেয়ার বেল্ট, টারমাক, রানওয়ে, ড্রাইওয়ে ও অ্যাপ্রোন এলাকায় নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ। আর্মড পুলিশ তৎপর থাকায় বাইরের অপরাধ অনেকটা কমেছে। তবে ভেতরে ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসহ বিভিন্ন দপ্তরের গুটিকয় কর্মকর্তা প্রতিনিয়ত হয়রানি করেন বলে অভিযোগ যাত্রীদের।
সৌদি আরব প্রবাসী নাদির মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, প্রবাসীরা অর্থনীতির চালিকা শক্তি। কিন্তু সেটার কোনো মূল্যায়নই নেই। শাহজালাল বিমানবন্দরে নানা হয়রানির শিকার হতে হয় প্রবাসীদের। অথচ বিদেশের বিমানবন্দরে কতো হাসিমুখে ইমিগ্রেশনে বরণ করে নেওয়া হয়। ঠিক উল্টো আচরণ করা হয় নিজ দেশের বিমানবন্দরে।
সিঙ্গাপুর প্রবাসী আবুল হোসেন শিপলু বলেন, সিঙ্গাপুরের বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা এতো উন্নত, সেখানে চেকিংয়ের নামে ধাপে ধাপে হয়রানি নেই। লাগেজে পেতে সর্বোচ্চ দুই মিনিট লাগে। আমাদের এখানে সবার আগে মানসিকতা পরিবর্তন জরুরি। এটা পরিবর্তন হলে কোনো হয়রানি থাকবে না।
এদিকে শাহজালাল বিমানবন্দরে লাগেজ কেটে চুরি ও স্বর্ণ চোরাচালানসহ বিভিন্ন অভিযোগে সম্প্রতি কাতার এয়ারওয়েজ ও এয়ার এরাবিয়ার কয়েকজন কর্মচারীকে আটক করা হয়। এছাড়া এ বছর একাধিক বিমানকর্মীকেও আটক করে আর্মড পুলিশ। কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদে অপরাধ স্বীকার করায় অনেককে ছেড়ে দেওয়া হয়।
সার্বিক বিষয়ে আলাপ করলে শাহজালাল বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপারেশন্স অ্যান্ড মিডিয়া) মো. আলমগীর হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আর্মড পুলিশের তৎপরতায় বিমানবন্দরের বাইরের অপরাধ পুরোটাই নিয়ন্ত্রণে। ক’দিন আগেও প্রবাসীদের পাসপোর্ট নিয়ে চাঁদাবাজি চক্রের দু’জনকে আটক করা হয়েছে। এছাড়া স্বর্ণ ও ইয়াবা নিয়মিত আটক করা হয়।
তিনি বলেন, এপিবিএন সর্বদা মানুষের নিরাপত্তা ও সেবায় নিয়োজিত। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে যাত্রীদের হারানো মালামাল উদ্ধার করে বাড়ি থেকে ডেকে এনে হাতে তুলে দেওয়া হয়।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন আবু সাঈদ মেহবুব খান বাংলানিউজকে বলেন, নিরাপত্তার জন্যই অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এটাকে হয়তো কেউ মনে করেন হয়রানি। আসলে নাগরিকরা যেন বিদেশে গিয়ে বিপদে না পড়েন এটা নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১৯
টিএম/এইচএ/
আরও পড়ুন
** শাহজালালে দুই জনের সিন্ডিকেটে পার্কিং বাণিজ্য
** শাহজালালে সক্রিয় স্বর্ণ ও ইয়াবা পাচারকারী চক্র