আর এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নিরীহ প্রবাসী বাংলাদেশিরা। ঝামেলা এড়াতে প্রবাসীরাও ধুঁকছেন দালালদের দিকে।
তবে কাস্টমস কর্মকর্তারা যাত্রীদের দালালদের কাছে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তারা বলছেন, কাস্টমসে সরাসরি এসে যাত্রীরা সহজেই সেবা নিতে পারেন। এখানে দালালদের কোনো আশ্রয়-প্রশ্রয়ের সুযোগ নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় দু’শতাধিক দালাল তৎপর রয়েছে কাস্টমস অফিস ঘিরে। কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে এ কাজটি দালালরা করে বলে অভিযোগ রয়েছে। জানা যায়, প্রতিদিন শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিভিন্ন যাত্রীর কাছে পাওয়া শুল্কযুক্ত বিভিন্ন মালপত্র আটক করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। তখন কাস্টমস গোডাউনে মালপত্র আটক রেখে ডিএমএ (ডিটেনশন ম্যামো) মামলা দিয়ে যাত্রীদের ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে শুল্ক পরিশোধের মাধ্যমে মালপত্র খালাস করতে বিমানবন্দর কাস্টমসে আসেন যাত্রীরা। এসময় তারা ওই চক্রের খপ্পরে পড়েন।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের যাত্রী (অপর্যটক) ব্যাগেজ (আমদানি) বিধিমালা, ২০১২-এর ৯ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, একজন যাত্রী অনধিক ১০০ গ্রাম ওজনের স্বর্ণালংকার অথবা ২০০ গ্রাম রৌপ্যের অলংকার (এক প্রকার অলংকার ১২টির বেশি হবে না) সব ধরনের শুল্ক ও কর পরিশোধ ব্যতিরেকে আমদানি করতে পারবেন।
অর্থাৎ, বিদেশ থেকে আসার সময় একজন যাত্রী শুল্ক-কর ব্যতীত সর্বোচ্চ ১০০ গ্রাম স্বর্ণ সঙ্গে আনতে পারবেন। তবে এক প্রকারের অলংকার ১২টির বেশি হতে পারবে না। ১০০ গ্রামের অতিরিক্ত আরও ১০০ গ্রাম পর্যন্ত অলংকার HS-Code (২০১৪-১৫) অনুযায়ী গ্রামপ্রতি ১৫শ টাকা হারে শুল্ক-কর পরিশোধসাপেক্ষে আনা যাবে।
এমনই একজন ভুক্তভোগী সৌদি প্রবাসী সিলেটের নাদির মিয়া। সৌদি থেকে ১১৭ গ্রাম ওজনের একটি বার নিয়ে আসেন দেশে। কিন্তু বিপত্তি ঘটে বিমানবন্দরে। প্রথমে স্বর্ণ বিষয়টি অস্বীকার করলেও পরে স্বীকার করেন। পরে কাস্টমস গোডাউনে মালপত্র আটক রেখে ডিএমএ (ডিটেনশন ম্যামো) মামলা দিয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কয়েকদিন পরে স্বর্ণ নিতে কাস্টমসে এলে ক্লিয়ারিং ফরওয়ার্ডিং এজেন্ট নামধারী চক্রের এক সদস্য ১২ হাজার টাকা দেওয়ার বিনিময়ে কাজটি করে দিতে পারবেন বলে জানান।
পরে তিনি ১০ হাজার টাকা দিয়ে স্বর্ণটি খালাস করে নিয়ে যান। নাদির মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, টাকা নেওয়ার পর নানা টালবাহানা করে ওই দালাল। এক সপ্তাহ ঘোরানোর পর মাল খালাস করে দেয়। প্রথমে বলেছিল একদিনেই কাজটি করে দেবে। জানা যায়, বিমানবন্দরে আটক মালপত্রের মধ্যে স্বর্ণবার, স্বর্ণালঙ্কার, মোবাইল ফোনসেট, শাড়ি, থ্রি-পিসসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স পণ্য রয়েছে। বিমানবন্দর থেকে ডিএমএ আটক ওই মালপত্রের নথি, মামলার কপি ও যাত্রীর মোবাইল ফোন নম্বর মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে পাচার করা হয় দালালচক্রের কাছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আটক পণ্য খালাসের নামে বিভিন্ন যাত্রীর মোবাইল নম্বরে ফোন করে তাদের বিমানবন্দরে নিয়ে আসে ওই চক্রটি। পণ্য খালাসের নামে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা, পাসপোর্ট নম্বর, মামলার নথিপত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র রেখে দেয় তারা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা কাস্টম হাউসের কমিশনার মোয়াজ্জেম হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, মানুষ কেন দালালদের কাছে যায় আমার বুঝে আসে না। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর অফিসে দালাল পরিহার করুন লিখে টাঙিয়ে দিয়েছি। কেউ দালালদের কোনো আশ্রয়-প্রশ্রয় দিলে কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, কেউ যদি কোনো দালালকে হাতেনাতে প্রমাণসহ ধরিয়ে দিতে পারে, কঠিন শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০১৯
টিএম/এএ
** শাহজালালে লাগেজ পেতে দুর্ভোগ কমলেও কমেনি যাত্রী হেনস্থা
** যত্রতত্র আবর্জনা, ডাস্টবিনগুলো নিজেই রুগ্ন শাহজালালে
** শাহজালালে দুই জনের সিন্ডিকেটে পার্কিং বাণিজ্য
** শাহজালালে সক্রিয় স্বর্ণ ও ইয়াবা পাচারকারী চক্র