নীলফামারী: উত্তরের সৈয়দপুর বিমানবন্দরে মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কারচালকদের চালবাজিতে বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা। ঢাকা থেকে আকাশপথে আসা যাত্রীদের বেসরকারি এয়ারলাইন্সের বাস ব্যবহার করতে দেওয়া হচ্ছে না।
এমনকি যাত্রী নিয়ে আসা কোনো মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কারেও যাত্রীদের উঠতে দেওয়া হচ্ছে না। ফলে বিমানবন্দরে এক অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা চলে এলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
বর্তমানে সৈয়দপুর-ঢাকা রুটে প্রতিদিন নয়টি ফ্লাইট চলাচল করছে। এর মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি, ইউএস-বাংলার চারটি ও নভোএয়ারের চারটি করে ফ্লাইট চলাচল করছে। একটি চক্র বিমানবন্দর এলাকার মাইক্রোবাস ও কার ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে। ওই চক্রটি যাত্রীরা কোন গাড়িতে যাবেন, তা নিয়ন্ত্রণ করছে। অভিযোগ রয়েছে চাঁদাবাজিরও। প্রায় ক্ষেত্রেই যাত্রীদের হতে হচ্ছে নাজেহাল।
অভিযোগ রয়েছে, ঢাকা থেকে ফ্লাইটে এলে যাত্রীদের বেসরকারি এয়ারলাইন্সের বাস ব্যবহার করতে দেওয়া হয় না। বাধ্য হয়ে তাদের দ্বারা পরিচালিত মাইক্রোবাসে দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে আসতে হয়। এতে এয়ারলাইন্সের বাসগুলো কোনো কোনো ক্ষেত্রে যাত্রীশূন্য হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে এ অবৈধ কর্মকাণ্ড চললেও স্থানীয় প্রশাসন বা সৈয়দপুর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
এদিকে ওই সিন্ডিকেটটি পুরো সৈয়দপুর বিমানবন্দর তাদের দখলে নিয়ে প্রকাশ্যেই দম্ভোক্তি করে- ঢাকা থেকে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে নামার পর যাত্রীদের তাদের মাইক্রেবাসে করেই নিজ নিজ গন্তব্যে যেতে হবে। বেসরকারি এয়ারলাইন্সের বাসগুলো শুধু যাত্রী বিমানবন্দরে আনতে পারবে, কিন্তু কোনো যাত্রীকে বিমানবন্দর থেকে নিতে পারবে না।
তারা বলেন, বিমানবন্দর থেকে গন্তর্বে যাওয়ার বিষয়টি মাইক্রোবাস সমিতির কথায় চলবে, এখানে পুলিশ প্রশাসন বা অন্য কারও কর্তৃত্ব চলবে না। এভাবেই যাত্রীদের জিম্মি করে চলছে তাদের রমরমা ব্যবসা।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ যাত্রী ও বেসরকারি এয়ারলাইন্স সূত্রে জানা গেছে, রংপুর, দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁও এ তিন জেলার ঢাকাগামী নিজেদের যাত্রীদের নিজস্ব মাইক্রেবাস ও বাসে করে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে নিয়ে আসে বেসরকারি এয়ারলাইন্স ইউএস বাংলা ও নভোএয়ার। এজন্য রংপুর থেকে যাত্রীপ্রতি ২৫০ টাকা, দিনাজপুর থেকে যাত্রীপ্রতি ৩০০ টাকা ও ঠাকুরগাঁও থেকে যাত্রীপ্রতি ৩৫০ টাকা ভাড়া নেওয়া হয়। বাস ও মাইক্রোবাসগুলো শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় যাত্রীরা স্বাচ্ছন্দ্যে বিমানবন্দরে যেতে পারেন।
কিন্তু ঢাকা থেকে বেসরকারি এয়ারলাইন্সের যে নয়টি ফ্লাইট সৈয়দপুর বিমানবন্দরে আসে, সেসব ফ্লাইটের যাত্রীদের কাউকেই আর ওই এয়ারলাইন্সের গাড়ি ব্যবহার করতে দেয় না ওই সিন্ডিকেট। চক্রটি বিমানবন্দর এলাকাটি তাদের দখলে নিয়ে সব যাত্রীদের তাদের লক্কর ঝক্কর মার্কা মাইক্রোবাসে উঠতে বাধ্য করে। যাত্রীরা অনেকে প্রতিবাদ করে ওই চক্রের সদস্যদের দ্বারা লাঞ্ছিত হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। গত কয়েকদিন ধরে আবার ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন তারা। সৈয়দপুর থেকে রংপুরে ৩৫০ টাকা, ঠাকুরগাঁওয়ে ৫০০ টাকা এবং দিনাজপুরে ৪৫০ টাকা গুণতে হচ্ছে যাত্রীদের। তারা নিজেরা ভাড়া বাড়ানোর পাশাপাশি এয়ারলাইন্সের গাড়িগুলোকেও তাদের নির্ধারিত ভাড়া নিতে বাধ্য করছে।
যাত্রীরা নিরুপায় হয়ে যখন ওই চক্রের গাড়িতে চড়ে গন্তব্যে যান, তখন দুই বেসরকারি এয়ারলাইন্সের গাড়িগুলো বিমানবন্দরের টার্মিনালের পেছনে অলস বসে থাকে।
এদিকে বেসরকারি এয়ারলাইন্সের চালক ও হেলপাররা জানান, তারা বেসরকারি এয়ারলাইন্সে চাকরি করেন। তারা যাত্রী নিয়ে সৈয়পুর বিমানবন্দরে যেতে পারবেন। কিন্তু ঢাকা থেকে আসা যাত্রীদের বহন করতে পারেন না। প্রতিবাদ করলেই চলে নির্যাতনের শিকার হতে হয়।
তারা আরও জানান, বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোর কর্মকর্তারা কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় সৈয়পুর বিমানবন্দর এখন ওই সিন্ডিকেটের দখলে।
এ ব্যাপারে ইউএস-বাংলার সৈয়দপুর বিমানবন্দরে কর্মরত কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, আমরা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে অনেকবার বলেছি, কিন্তু কাজ হয় না।
একই কথা জানান, নভোএয়ারের এক কর্মকর্তাও। তবে তারা নিজেদের নাম পর্যন্ত বলতে রাজি হননি। তারা জানান, আমরা নাম বলে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হলে বিচার কে করবে?
নীলফামারী জেলা মাইক্রোবাস ও পিকআপ ভ্যানচালক সমিতির সভাপতি মানিক অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বিমানবন্দরে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটছে না।
এ বিষয়ে সৈয়দপুর বিমানবন্দর ব্যবস্থাপক সুশান্ত দত্ত জানান, বিমানবন্দরের বাইরের ঘটনা আমার দেখার বিষয় নয়। ঘটনাটি আমার কানে এসেছে। খুব শিগশিগরই উভয়পক্ষকে নিয়ে বসে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যাটির সমাধান করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২০
এসআই