দোহার থেকে ফিরে: একটি রিকশা ঘিরে সন্ধ্যার পর মকসুদপুরের রাস্তায় বিজয় উল্লাস। ‘চান ভাই, জাহানারা আপা, ভয় নাই, আর কী চাই, ফুটবল, তালগাছ...’।
ব্যতিক্রমী এমন স্লোগানে আটকে গেল কান। এক সঙ্গে দু’জনের নামে স্লোগান। কারণ জানতে চাইতেই উচ্ছ্বসিত কয়েকজন বলছিলেন, ‘এক ঘরে দুই জন, স্বামী-স্ত্রী দু’জনই মেম্বার। ’ মানে স্বামী ইউপি সদস্য ও স্ত্রী ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
আরও জানা গেলো, চান মিয়া একবার নয়, টানা তৃতীয়বার চেষ্টা করে এবার বিজয়ী হয়েছেন। আর প্রথমবারই সংরক্ষিত আসনে নির্বাচন করে বিজয়ী হয়েছেন স্ত্রী জাহানারা বেগম। চান মিয়ার বিজয়ের আনন্দে মাত্রা বেড়েছে তার স্ত্রীর বিজয়ে। দু’জনই এখন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নির্বাচিত সদস্য।
সাধারণ সদস্য (মেম্বার) পদে বেসরকারি ফলাফলে চান মিয়া মাত্র ১ ভোটে, আর জাহানারা বেগম সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে বিজয়ী হয়েছেন ৩২৪ ভোটে, চান মিয়া ৪ নম্বর ওয়ার্ডে এবং জাহানারা বিজয়ী হয়েছেন সংরক্ষিত ৪,৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডে।
শুধু এক ইউনিয়নের এক ওয়ার্ডে বা বা এক বাড়িতে নয়, একঘরেই এখন দু’জন মেম্বার। তারা এখন জনপ্রতিনিধি। স্বামী-স্ত্রীর বিজয়কে এলাকাবাসী বলছেন ‘বিশ্ব রেকর্ড’। কারণ এরকম নজির তাদের জানা নেই।
স্বামী-স্ত্রীর বিজয়ে তাই উল্লাস ঢাকার অদূরে দোহার উপজেলার ৭ নম্বর মকসুদপুর ইউনিয়নের তিন ওয়ার্ডের পাড়ায়-মহল্লায়। ঢাক-ঢোল পিটিয়ে বিজয় উল্লাস করছেন এলাকাবাসী।
দোহারের নয়টি ইউনিয়নের মধ্যে পাঁচটিতে ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে মঙ্গলবার (২২ মার্চ)।
জাহানারাকে নিয়ে বিজয় মিছিল এসে থামলো মকসুদপুরের রাস্তার পাশে তিন দোকানের মোড়ে, সেখানেই ঢাক-ঢোল পিটিয়ে উল্লাস। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে আরও উল্লাস, ‘চান ভাই আসুক, দু’জনের ছবি নেন। বিশ্ব রেকর্ড হইছে...’।
ততক্ষণে কথা হয় জাহানারা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এলাকার মানুষ এবার আমাদের দু’জনকে জোর করে ইলেকশনে দিছে। ভোট দিয়ে পাস করেছে। সবার দিকে নজর দেবো। ’
বেসরকারি ফলাফল অনুযায়ী, সংরিক্ষত ওয়ার্ডে জাহানারা বেগম পদ্মা কলেজ কেন্দ্রে তালগাছ প্রতীকে ৮০১, সাহিনপুকুর প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৭৭৬ ও মধুর খোলা কেন্দ্রে পেয়েছেন ৫৩১ ভোট। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ফেরদৌসী বেগম পেয়েছেন যথাক্রমে ৪৬৫, ৫৬৩ ও ৭৫৬ ভোট। একটি কেন্দ্রে হারলেও জাহানারা জিতেছেন দুই কেন্দ্রে।
এবার বিজয় মিছিলের অগ্রভাবে ফুলের মালা পরিয়ে চান মিয়াকে নিয়ে এলো এলাকার বাসিন্দারা।
‘তিনবার ইলেকশন করছি, প্রথমবার ১ ভোটে ফেল, দ্বিতীয়বার ২৬ ভোটে ফেল, আর এবার মাত্র ১ ভোটে জিতছি’ বেসরকারি ফলাফল দেখিয়ে বললেন চান মিয়া।
উচ্ছ্বসিত চান মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, ‘জনগণ দাঁড় করে দিছে, জনগণের জন্য কাজ করবো। ’
এক ঘরে দু’জন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। জনগণের জন্য, এলাকার জন্য কী করতে চান এমন প্রশ্নের জবাবে চান মিয়া বলেন, ‘জনগণের সাথে মিলে মিশে কাজ করবো। ’
‘আমরা সবার দিকে থাকাবো’, বললেন জাহানারা বেগম।
তিন ছেলে ও এক মেয়ের বাবা-মা চান মিয়া ও জাহানারা বেগম। ৩৭ বছর বয়সী জাহানারা বেগম এসএসসি পাস করেছেন। চল্লিশোর্ধ্ব শিক্ষিত তার স্বামীও।
এলাকার ষাটোর্ধ্ব কাওসার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘সবাই ভোট দিয়েছে। সবাই কাজ করছি, জিতছে। এক বাড়িতে দুই মেম্বার, কাজ হবেই। ’
কাওসার হোসেন, আব্দুল আলিমসহ একাধিক ভোটার জানান, জাহানারা বেগম সংরক্ষিত আসনে বিজয়ী হলেও এক ইউনিয়ন পরিষদে স্বামী-স্ত্রীর মতামতে নির্ভর করবে অনেক সিদ্ধান্ত।
বাংলাদেশ সময়: ০৪১৯ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০১৬
এমআইএইচ/টিআই