ঢাকা: ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব বাড়ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলের মনোনীত প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থন নিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছে তৃণমূল নেতাকর্মীরা।
নির্বাচনী এই দ্বন্দ্ব পরবর্তী সময়ে সংগঠনে প্রভাব ফেলতে পারে এমন আশঙ্কা করছেন দলের নীতিনির্ধারকরা। যার ফলে তৃণমূল ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে সংগঠন দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে জানান, অতীতে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলের একাধিক চেয়ারম্যান প্রার্থী দাঁড়িয়েছে। তবে তখন ছিলো নির্দলীয় নির্বাচন, ফলে কর্মী-সমর্থকরা বিভক্ত হয়ে পড়লেও সংগঠনে প্রভাব পড়েনি। কিন্তু এবারের বাস্তবতা আলাদা। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হচ্ছে দলীয়ভাবে এবং দলীয় প্রতীকে। আর এ কারণেই নেতাকর্মীদের মধ্যে নির্বাচনী দ্বন্দ্ব দলে প্রভাব ফেলতে পারে, আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আরও জানা যায়, প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নেই ওয়ার্ড পর্যায়ে দলের শক্তিশালী সংগঠন রয়েছে। ওয়ার্ড, ইউনিয়ন পর্যায়ের সংগঠনই তৃণমূলে আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক ভিত্তি। তৃণমূলে সংগঠন শক্তিশালী হওয়ার কারণে এই নির্বাচনের প্রথম ধাপে আওয়ামী লীগ খুবই ভালো করেছে। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মী-সমর্থকরা দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ছে।
গত ২২ মার্চ প্রথম ধাপে ৭২৩টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থীদের বিপরীতে প্রায় সাড়ে ৪শ’ বিদ্রোহী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। এই নির্বাচনে ৫৫০টির বেশি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।
আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, প্রথম ধাপের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছে। আগামী তিন ধাপের নির্বাচনগুলোতেও বিজয়ের এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে, এমনটিই প্রত্যাশা করা হচ্ছে। কিন্তু বিপুল সংখ্যক বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় তৃণমূলের ঐক্য নিয়ে সন্দেহের তৈরি হয়েছে।
এদিকে আগামী ৩১ মার্চ দ্বিতীয় ধাপে ৬৪৩টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই ধাপেও ৫ শতাধিক বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী রয়েছে বলে জানা গেছে। আগামী ২৩ এপ্রিল তৃতীয় ধাপ এবং ৭ মে চতুর্থ ধাপের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেসব নির্বাচনের চিত্রও এক।
বিদ্রোহী প্রার্থীর কারণেই অনেক জায়গায় দলের কর্মী-সমর্থকরা প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব-সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে। বেশ কিছু প্রাণহানীও হয়েছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কর্মীদের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে- তা নিরসন করাও কঠিন হয়ে পড়বে।
সংগঠনের নীতি নির্ধারকরা বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত হলেও মুখ খুলছেন না কেউ। দুই-একজন এ বিষয়ে কথা বললেও নির্বাচনের পর কোনো সমস্যা থাকবে না- এক কথায় উত্তর দিচ্ছেন তারা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, নির্বাচনের পর এটা সমস্যা হবে বলে মনে করি না। দল ক্ষমতায় আছে, এ কারণে অনেকেই চেয়ারম্যান হতে চান। তাই প্রার্থীর সংখ্যা বেশি। এটা এমন কোনো ব্যাপার না। সবকিছু দলের নিয়ন্ত্রণেই আছে।
সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থীতো জাতীয় নির্বাচনের সময়ও ২/১ জায়গায় থাকে। ইউনিয়ন পরিষদে একটু বেশি। অনেক জায়গায় বিদ্রোহী প্রার্থীর সমস্যা আছে। আবার কোথাও কোথাও বিদ্রোহী প্রার্থী নেই। তবে যেখানে সংগঠন শক্তিশালী সেখানে কোনো সমস্যা হবে না।
বাংলাদেশ সময়: ১০০৩ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০১৬
এসকে/এটি