ঢাকা: জনসমর্থন পেতে ব্যর্থ হয়েই বিএনপি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন বর্জনের চিন্তা করছে বলে মনে করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তাদের মতে, প্রথম দুই ধাপের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পর পরবর্তী ধাপের নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার চিন্তা বিএনপির ‘পলায়নপর মনোবৃত্তি’ নমুনা।
গত ২২ মার্চ ও ৩১ মার্চ ইউনিয়ন পরিষদের প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আগামীতে আরও চার ধাপে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ তুলে বিএনপি বাকি ধাপের নির্বাচন বর্জন করতে পারে বলে হুঁশিয়ার করছেন দলটির নেতারা। বিএনপির নীতি-নির্ধারক পর্যায়ের নেতারাও এমনটি ভাবছেন বলে শোনা যাচ্ছে।
বিএনপির এহেন অভিযোগকে নির্বাচন বর্জনের পাঁয়তারা বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতারা। তাদের মতে, দীর্ঘ দিন ধরে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকায় নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবি হয়েছে। আর এই লজ্জা থেকে রেহাই পেতেই বিএনপি নির্বাচন বর্জনের চিন্তা-ভাবনা করছে।
আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবি বিএনপির অতীত গণবিরোধী, দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডই এই ভরাডুবির জন্য দায়ী। তারা আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াও করেছে, মানুষ হত্যা করেছে। এ কারণে দলটি জনগণের কাছে পরিত্যক্ত, প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন, আবার জনগণের আস্থা অর্জনে তাদের কাছে যাওয়ার চেষ্টাও বিএনপির নেই। বিএনপির জন্ম ক্ষমতাবলয়ের মধ্য থেকে। ক্ষমতার বাইরে থেকে এই দলটির রাজনীতি ও নির্বাচন করতে অভ্যস্ত নয়। আর এ কারণেই এই নির্বাচনে বিএনপি ও এর প্রার্থী, কর্মী-সমর্থকরা জনগণের কাছে যায়নি। নির্বাচনে তার ফলই তারা পেয়েছে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর কাছে জানতে চাওয়া হলে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ‘হ্যাঁ-না’ ভোটের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ক্ষমতার মধ্যে থেকে সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রেখে মসৃণ পথে তাদের নির্বাচন করার অভ্যাস। সেটা তারা আর পারছে না, তাই তাদের আর ভাল লাগছে না। তারা তাই নির্বাচন বর্জনের চিন্তা করছে। আসলে এই নির্বাচনে তারা জনগণের কাছে যায়নি। কেননা ক্ষমতার বাইরে থেকে তারা রাজনীতি করতে অভ্যস্ত নয়।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফও শনিবার দলের এক সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এমন কথাই বলেন। হানিফের বক্তব্য, নির্বাচনে বিএনপি জনগণের কাছে যেতে ব্যর্থ হয়েছে। সেজন্য তাদের চরম ভরাডুবি হয়েছে। তাই লজ্জার হাত থেকে বাঁচতে তারা এখন বাদবাকি নির্বাচন থেকে বের হওয়ার চিন্তা করছে। হঠাৎ করে বিএনপির নির্বাচন বর্জনের কথা ভাবার কারণ, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তাদের দুঃশাসনে জনগণ তাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, আমরা এখন নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছি।
আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি জনগণের ওপর খড়্গ চালিয়েছিল। জ্বালাও-পোড়াও করেছিল, মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছিল। সে কারণে জনগণ বিএনপির সঙ্গে নেই।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, এটা এক ধরনের পলায়নপর মনোবৃত্তি। তারা অতীতেও মাঝপথে নির্বাচন বর্জন করেছে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে। তারা নির্বাচনে জিতলে বলবে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে, আর হারলে বলবে নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হয়নি। তারা যেসব অভিযোগ করছে, সেসবের সুরাহার জন্য আইন-আদালত আছে, নির্বাচন কমিশন আছে। তারা সেখানে যেতে পারে।
নির্বাচন বর্জনের এই সংস্কৃতি ভাল নয়, জনগণ এটাকে ভালোভাবে নেয় না উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপি দেশবিরোধী, গণবিরোধী অবস্থান নেওয়ার কারণে তারা ইউপি নির্বাচনে পরিত্যক্ত হয়েছে। নির্বাচনে জনগণের রায় না পাওয়ায় বর্জনের মতো হঠকারী সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ভাবছে। বিএনপি একটি হঠকারী রাজনৈতিক দল। তারা যেসব অভিযোগ করছে সেসবের কোনো সত্যতা নেই।
তিনি পাল্টা প্রশ্ন রাখেন, ‘বিএনপির সময় যেসব নির্বাচন হয়েছে, তাতে যেসব ঘটনা ঘটেছে, সেই পরিসংখ্যান কী বলে?’
বাংলাদেশ সময়: ০০২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৩, ২০১৬
এসকে/এইচএ/জেএম