ঢাকা: জোরেসোরে এগিয়ে চলেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের প্রস্তুতির কাজ। ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন সম্মেলনের প্রস্তুতির কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।
আগামী ১০ ও ১১ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে দেশের প্রাচীনতম ও ঐতিয্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক জাতীয় সম্মেলন। এই সম্মেলনের প্রস্তুতি উপলক্ষে ১১টি উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। উপ-কমিটিগুলো আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে নিয়মিত বসছে। সকাল-বিকাল নেতাকর্মীরা কার্যালয়ে আসছেন। দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে কার্যালয়।
এদিকে সম্মেলন উপলক্ষে গঠিত উপ-কমিটিগুলো সাজসজ্জা, দলের গঠনতন্ত্র সংশোধন-সংযোজন, আপ্যায়ন, শৃঙ্খলা, অভ্যর্থনাসহ বিভিন্ন কাজের প্রস্তুতি নিচ্ছে। সারা দেশে জেলাগুলোতে কাউন্সিলের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। আগামী ৩০ মে’র মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের কাছ থেকে কাউন্সিলরদের তালিকা আহ্বান করা হয়েছে।
এবারের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে দলে গুণগত কিছু পরিবর্তন আনা হবে বলে জানা গেছে। এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে দলের ভবিষ্যৎ কার্য পদ্ধতি ও পরিকল্পনা নির্ধারণ হবে। সে অনুযায়ী আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে অগ্রসর হবে দল। আর এ কারণেই দলের ঘোষণা পত্র ও গঠনতন্ত্রে কিছু সংযোজন ও সংশোধন আনার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ঘোষণা পত্রে দেশের সার্বিক উন্নয়নের চিত্র তুলেধরা হবে। আগামীতে করণীয় বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেওয়া হবে। সে অনুযায়ী সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচি গৃহীত হবে।
দলের গঠনতন্ত্রকে আরও যুযোপযোগী, আধুনিক ও উন্নত করতে গঠনতন্ত্র উপ-পরিষদ কাজ শুরু করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক দেশের রাজনৈতিক দলের গঠনতন্ত্র নিয়ে এই কমিটি কাজ করছে। যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টি, কনজারভেটিভ পার্টি, ভারতের কংগ্রেস, বিজেপি, তৃণমূল কংগ্রেসসহ কানাডা, অস্ট্রেলিয়ার রাজনৈতিক দলগুলোর গঠনতন্ত্রকে রেফারেন্স হিসেবে কাজে লাগানো হচ্ছে বলে জানা গেছে। সংশোধনী রিপোর্ট তৈরি হচ্ছে। গঠনতন্ত্র উপ-পরিষদ আগামী ১৫ জুনের মধ্যে তাদের রিপোর্ট চূড়ান্ত হবে।
প্রস্তুতি কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নেতারা জানান, কাউন্সিলর, ডেলিগেট ছাড়াও দেশি ও বিদেশি আমন্ত্রিত অতিথিরা সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। দেশের বিভিন্ন প্রগতিশীল ও স্বাধীনতার পক্ষের রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দকে সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হবে।
এ সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। উপমহাদেশের প্রাচীন রাজনৈতিক দল ভারতের কংগ্রেস, সে দেশের ক্ষমতাসীন বিজেপি, যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টি ও কনজারভেটিভ পার্টি, যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেটিক পার্টি ও রিপাবলিকান পার্টি, চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি, শ্রীলংকা, নেপালের ক্ষমতাসীন পার্টিসহ অন্যান্য দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো হবে বলে জানা গেছে। এবার সব চেয়ে বেশি সংখ্যক বিদেশি রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হবে বলে আরও জানা গেছে। সেই সঙ্গে সম্মেলনে উপস্থিত গুরুত্বপূর্ণ বিদেশি অতিথিদের বক্তব্য দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হবে।
এদিকে সম্মেলন উপলক্ষ্যে রাজধানীসহ সারা দেশে জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশ তৈরি হবে। এ জন্য সম্মেলন উপ-পরিষদ ইতোমধ্যেই বেশ কিছু পরিকল্পনা তৈরি করেছেন বলে জানা গেছে। ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে সাজসজ্জা করে মনোরোম পরিবেশ তৈরি করা হবে।
এছাড়া সম্মেলনের সাত দিন আগে থেকে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে সাজসজ্জা ও আলোকসজ্জা করা হবে। এছাড়া জেলা ও উপজেলা শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থান এবং দলের কার্যালয়ে তিন দিনব্যাপী আলোকসজ্জার ব্যবস্থা হবে। সম্মেলন উপলক্ষে ডিজিটাল ব্যানার, ফেস্টুন, লিফলেট তৈরি হবে। আওয়ামী লীগের সুদীর্ঘ ইতিহাস ও ঐতিয্য তুলে ধরে ডিজিটাল ডিসপ্লের ব্যবস্থা করা হবে।
সম্মেলনে শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য দলের দুই হাজার স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত করা হবে। সম্মেলনস্থল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে ৮০টি টিমে ভাগ হয়ে কাজ করবে।
সম্মেলনের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং সম্মেলনের অর্থ-উপ কমিটির সভাপতি কাজী জাফরুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে যে নতুন কমিটি আসবে সেই কমিটি আগামী ২০১৯ সালে যে নির্বাচন হবে সেই নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ করবে। এই সম্মেলনে আমরা নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে এমন একটি কেন্দ্রীয় কমিটি নিয়ে আসবো যে কমিটি নিয়ে আসবো যে কমিটির মাধ্যমে সংগঠন আরও গতিশীল হবে এবং সকল কার্যক্রম দ্রুত ও সুচারুভাবে সম্পাদন হবে। সম্মেলনে দলের গঠনতন্ত্রে কিছু পরিবর্তন আসবে। সম্মেলনের প্রস্তুতির কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। প্রতিটি উপ-কমিটি তাদের সভা করে কার্যক্রম হাতে নিয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০০৪০ ঘণ্টা, মে ১২, ২০১৬
এসকে/এমজেএফ