ঢাকা: শীর্ষস্থানীয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও রায় কার্যকর আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য বিশাল বিজয় বলে মনে করছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধীদের এই বিচারে সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা আরও বেড়েছে যা দলের জন্য বড় ধরনের রাজনৈতিক সফলতা বলেও মনে করেন তারা।
ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা ছিলো আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইস্তেহারে প্রধান প্রতিশ্রুতিগুলোর মধ্যে ছিলো মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে যারা এদেশে গণহত্যা, গণধর্ষণসহ ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিলো তাদের বিচার করা। সরকার গঠনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল করে এই বিচারের ব্যবস্থা করে।
আওয়ামী লীগ নেতাদের মতে, বিচার শুরু থেকে বিচারের রায় কার্যকর করা পর্যন্ত অনেক বড় বড় প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় সরকারকে। সকল প্রতিকূলতা পেরিয়ে ইতোইমধ্যে ডজনখানেক শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর বিচার, এর মধ্যে ৬ জনের ফাঁসির রায় কার্যকর, দুইজনের আজীবন কারাদণ্ডসহ কয়েকজনের মুত্যুদণ্ডের রায় সেই প্রতিশ্রুতি পূরণে সফলতা দেখিয়েছে সরকার।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির অন্যতম সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিলো যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তরিকভাবে সেই ব্যবস্থা করেছেন। শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়েছে আওয়ামী লীগ জনগণকে যে প্রতিশ্রুতি দেয় তা বাস্তবায়ন করে।
এটি আওয়ামী লীগের বিশাল রাজনৈতিক বিজয়। প্রতিশ্রুতি রক্ষা করায় জনগণ আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে পুননির্বাচিত করবে বলেও মনে করেন তিনি।
এদিকে এখন পর্যন্ত যে ছয়জনের ফাঁসি হয়েছে তারা হলেন, জামায়াতের আমীর মতিউর রহামন নিজামী, আলী আহসান মুজাহিদ, কাদের মোল্লা, কামারুজ্জামান, মীর কাসেম আলী একং বিএনপির শীর্ষ স্থানীয় নেতা সালাহউদ্দিন কাদের(সাকা) চৌধুরী।
জামায়াতের সর্বোচ্চ নেতা গোলাম আজমের আজীবন কারাদণ্ড হয়। পরে কারাগারেই তার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়। জামায়াতের আরেক শীর্ষ স্থানীয় নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আজীবন কারাদণ্ড হয়েছে। এছাড়া আরও তিনজন চৌধুরী মঈনুদ্দিন, আশরাফুজ্জামান ও বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির রায় হয়েছে। তারা দেশের বাইরে পালিয়ে আছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, যাদের বিচার ও বিচারের রায় কার্যকর হয়েছে তাদের মধ্যে অনেকেই নানাভাবে স্বাধীন দেশে প্রভাবশালী হয়ে উঠেছিলেন। এদের দুইজন বিএনপির নেতৃত্বাধীন সরকারের মন্ত্রী হয়েছিলেন। দেশি ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন শক্তির সঙ্গে কারো কারো বড় ধরনের যোগাযোগ ছিলো। বিএনপি নেতা সাকা চৌধুরী এদের অন্যতম। মীর কাশেমের অর্থনৈতিক ভিত ছিল অত্যন্ত শক্ত। অর্থনৈতিক শক্তি দিয়ে নানাভাবে পরিস্থিতি পাল্টে দেয়ার চেষ্টাও হয়েছে বলে অভিযোগ আছে। শুদু তাই নয়, জামায়াতের অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি এই মীর কাসেম। এদের ফাঁসির রায় কার্যকর সরকারের জন্য অত্যন্ত চ্যালেঞ্জ ছিলো।
দীর্ঘ দিন ধরে দেশে স্বাধীনতার পক্ষের সকল রাজনৈতিক দল ও ছাত্র সংগঠন, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবি সংগঠনসহ প্রগতিশীল মানুষ যুদ্ধারাধীদের বিচার দাবি করে আসছিলো। এই দাবিতে বড় বড় গণআন্দোলনও সংগঠিত হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে বিচার শুরু করে তা অব্যাহত রাখা এবং শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও রায় কার্যকর আওয়ামী লীগের প্রতি জনগণের আস্থা আরও বেড়েছে বলে দলের নীতিনির্ধারকরা জানান। সেই সঙ্গে বিএনপির মিত্র জামায়াতের নেতাদের এই বিচার রাজনৈতিকভাবেও আওয়ামী লীগের জন্য সুদূর প্রসারি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির অপর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, দীর্ঘদিন পরে হলেও আওয়ামী লীগ সরকার শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের সঠিক ও আন্তর্জাতিক মানের বিচার করেছে। এটি বিশাল রাজনৈতিক অর্জন। এর মধ্য দিয়ে সরকার ও আওয়ামী লীগের প্রতি জনগণের আস্থা আরও বেড়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০২০৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০১৬
এসকে/আরএইচএস