খুলনা: খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) সংঘর্ষের ঘটনায় ছাত্রলীগের সভাপতিসহ ৪০ জনের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়েছে।
হামলায় আহত বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের মুন্সী আশিকুজ্জামান কমল সোমবার (০৩ অক্টোবর) রাতে বাদী হয়ে পাঁচজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৩০ থেকে ৪০ জনের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি করেন।
সাধারণ ডায়েরিতে মূল অভিযুক্ত পাঁচজন হলেন- ১. কুয়েট ছাত্রলীগের সভাপতি সাফায়েত হোসেন নয়ন ২. বঙ্গবন্ধু হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহানুর রহমান ৩. সাধারণ সম্পাদক দীপংকর দাস ৪. সহ-সভাপতি মাহমুদুল হাসান সজিব ৫. সহ-সভাপতি আদিশ চাকমা।
সাধারণ ডায়েরির এজাহারে কমল বলেন, ২ অক্টোবর (রোববার) রাতে আমিসহ হলের অন্যান্য ছাত্ররা নবগঠিত হল কমিটি আয়োজিত অনুষ্ঠানে মাদকের বিরুদ্ধে কথা বলে বের হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। এ সময় উল্লেখিত আসামিরাসহ আরও ৩০ থেকে ৪০ জন আমাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় এক নম্বর আসামি আমাকে হত্যা করার হুমকি দেন এবং গোপনে আরও অন্যান্য আসামিদের সঙ্গে থাকা অগ্নেয়াস্ত্র রাম দা, চাপাতি, রড, হর্টার বের করে আমাদের ওপর হামলা করেন।
এক নম্বর আসামি অস্ত্র দিয়ে ফাঁকা গুলি করেন এবং অন্যান্য আসামিদের নির্দেশ দেন আমাদের প্রতিহত করতে। ঠিক সেই সময় দুই নম্বর আসামি বাম হাতে থাকা রড দিয়ে আমার পা ভেঙে ফেলার উদ্দেশ্যে সজোরে আঘাত করে। তিন নম্বর আসামি আমার সাঙ্গে থাকা মাহির মুন্সীকে চাপাতি দিয়ে মেরে ফেলার জন্য আঘাত করেন। চার নম্বর আসামি এস এম শাহাদাত কবির তাসিবকে রামদার উল্টো দিক দিয়ে ডান হাতে আঘাত করে তার বুড়ো আঙুল জখম করেন। চার নম্বর আসামির সঙ্গে থাকা আরও ২০ থেকে ৩০ জন তাকে মারধর করেন। পাঁচ আসামিসহ আরও অজ্ঞাত ২০ থেকে ২৫ জন রড ও চাপাতি দিয়ে আমিনুর ইসলাম বুলবুল ও এম এম ফিরোজ ইসলামকে মারাত্মকভাবে মাথায় ও হাতে জখম করেন।
আহতরা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকৎসাধীন। তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলেও কমল এজাহারে উল্লেখ করেন।
কমল নিজেকে সাধারণ ছাত্র উল্লেখ করে মামলা করলেও তিনি কুয়েট ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক ও মাহির মুন্সী ছাত্রলীগ কর্মী।
অন্যদিকে ঘটনার সঙ্গে নিজের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে অভিযুক্ত সাফায়েত হোসেন নয়ন বলেন, আমার ও সাধারণ সম্পাদকের ওপর বহিরাগতরা অতর্কিত গুলি বর্ষণ করেন। সামান্যের জন্য আমরা প্রাণে বেঁচে যাই।
মঙ্গলবার (০৪ অক্টোবর) বেলা পৌনে ১২টার দিকে খানজাহান আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশরাফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, কমল কুয়েট ছাত্রলীগের সভাপতিসহ আরও চার জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৩০ থেকে ৪০ জনকে অভিযুক্ত করে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, কুয়েট ছাত্রলীগের হল কমিটি গঠন নিয়ে বঞ্চিত নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং অন্যদের মধ্যে মতবিরোধ চলছিলো। হল কমিটিতে বিএনপি ও জামায়াত পরিবার থেকে উঠে আসা শিক্ষার্থীদের স্থান পাওয়া নিয়ে এ মতবিরোধ।
রোববার রাতে বঞ্চিত নেতা-কর্মীরা হলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ ও সবার মতামতের ভিত্তিতে করতে সভাপতির কাছে গেলে সভাপতি সাফায়েত হোসেন নয়ন তাদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। এ সময় বঞ্চিত নেতা-কর্মীরা ফজলুল হক হল ও বঙ্গবন্ধু হলের সামনে জড়ো হলে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা তাদের ওপর হামলা চালান। হামলায় বহিরাগতরাও অংশ নেয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, গার্ড, ডাইনিং বয়সহ ১০ জন আহত হন।
এ ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার সাধারণ শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা ও ক্লাস বর্জন করে হামলার সুষ্ঠু তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৪, ২০১৬
এমআরএম/জিপি/এমজেএফ