ঢাকা: চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বাংলাদেশ সফরকে সরকারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। শুধু সরকারের জন্যই নয়, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের রাজনীতির অনুকূলে বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা।
আগামী ১৪ অক্টোবর চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বাংলাদেশ সফরে ঢাকায় আসছেন। চীনের প্রেসিডেন্টের এই সফরকে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দুই দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করছে ক্ষমতাসীনরা। তার এই সফরের সময় বাংলাদেশের প্রস্তাবিত ২৫টি মেগা প্রকল্পের জন্য দুই বিলিয়ন ডলার (এক লাখ ৮৪ হাজার কোটি টাকা) ঋণের বিষয় চূড়ান্ত হবে বলে জানা গেছে।
এই সফরে বঙ্গোপসাগরে পায়রায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে চীনের সহায়তার বিষয়টিও চূড়ান্ত হবে। চীনের প্রেসিডেন্টের এ সফরে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অধীনে ঋণ সহায়তার সমঝোতা চুক্তি সই হবে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা জানান, বর্তমান বিশ্বপ্রেক্ষাপটে চীন অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত শক্তিশালী দেশ। সে হিসেবে বিশ্বরাজনীতিতেও চীনের বড় ধরনের প্রভাব রয়েছে। বিশ্বের পরাশক্তিগুলোর মধ্যেও চীন অন্যতম। বাংলাদেশের রাজনীতিতে চীন ও ভারত ইতোমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই দুই দেশকেই সমানভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগ।
মহান মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে ভারতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের একটা ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। ভারতের পাশাপাশি চীনের সঙ্গেও সম্পর্ক উন্নয়নে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুইবার চীন সফর করেছেন। গত কয়েক বছরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামসহ দলের বেশ কয়েকটি প্রতিনিধি দল সেখানে ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে দফায় দফায় চীন সফর করেছেন।
আওয়ামী লীগের ওই নীতিনির্ধারকদের মতে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের সঙ্গে ভারতের বর্তমান সরকারের সম্পর্ক অত্যন্ত দৃঢ়। বিশেষ করে গত ২০১৪ সালের ০৫ জানুয়ারির নির্বাচন এবং এর পরবর্তী পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে ভারত অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়ে আসছে।
তবে ওই নির্বাচন এবং নির্বাচনের পর সরকারের প্রতি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কোনো কোনো দিক থেকে প্রশ্ন তোলার চেষ্টা হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি এই সরকারকে সরাতে এবং আগাম নির্বাচন দিতে সরকারের উপর আন্তর্জাতিক চাপ তৈরির প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এ প্রেক্ষাপটে বিশ্বরাজনীতিতে প্রভাবশালী চীনের প্রেসিডেন্টের এই সফর রাজনৈতিক দিক থেকেও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক হবে বলে দলের ওই নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, চীনের প্রেসিডেন্টের এই সফর দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও উচ্চতায় পৌঁছাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তারই স্বীকৃতি এটা। এই সফরে বাংলাদেশের উন্নয়ন কার্যক্রমে চীনের সহযোগিতা আরও প্রসারিত হবে। আওয়ামী লীগের রাজনীতির জন্যও একটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
এদিকে, চীনের প্রেসিডেন্টের এই সফরের সময় সরকার পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্প, পায়রায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, সীতাকুন্ড-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূল সুরক্ষা ও মেরিন ড্রাইভ এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ, বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ ও জোরদার প্রকল্প, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ, চট্টগ্রামের আনোয়ারায় চীনের জন্য বিশেষায়িত শিল্পাঞ্চল প্রতিষ্ঠাসহ ২৫টি মেগা প্রকল্পকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে সহযোগিতার জন্য প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের এই সফরে চীনের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই হবে বলে সরকার সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এ বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, চীন সবদিক থেকেই বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দেশ। এই সফরের অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার ও সহযোগিতা বাড়বে। চীনের এখানে বিনিয়োগের প্রসার ঘটবে। উন্নয়ন সহযোগী চীনের প্রেসিডেন্টের এই সফর একটা সুদূরপ্রসারি প্রভাব ফেলবে। আমাদের সরকারের জন্য এ সফরকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০১৬
এসকে/এসএনএস