ময়মনসিংহ: সব জল্পনা-কল্পনা ও প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলেন দলটির বিদায়ী সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
দেশজুড়ে তৃণমূল নেতাকর্মীদের কাছে জনপ্রিয় ও ক্যারিশম্যাটিক এ রাজনীতিবিদ দলটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেননি।
তবে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হয়ে বাংলানিউজকে বলেছেন, ‘আজ নেত্রী কথা বলেছেন। আজ কোনো কথাই বলবো না। কাল (সোমবার) আমি অনুভূতি জানাবো’।
রোববার (২৩ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৬টার দিকে বাংলানিউজের সঙ্গে
মোবাইলে মিনিট দুয়েক কথা বলেন তিনি।
মন্ত্রিত্বকে জনস্বার্থে নিবেদন করে কাজের মাধ্যমেই দলীয় নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের নজর কেড়েছেন ওবায়দুল কাদের।
দলের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে তাকে ঘিরেই দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে কৌতুহলের মাত্রা ও আকাঙ্খা ছিল বেশি। অবশেষে তাদের সে প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে।
কর্মী অন্ত:প্রাণ রাজনীতিবিদ ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে বেশ ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন। তবে মোবাইল ফোনে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আজ মিডিয়ার সঙ্গে কোনো কথা বলবো না। আজ নেত্রীই বলেছেন’।
‘আগামীকাল (সোমবার) ভবিষ্যত পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলবো। নিজের অনুভূতি জানাবো’।
আওয়ামী লীগের রাজনীতির সবচেয়ে সঙ্কটময় মুহূর্তে পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে দীর্ঘ আড়াই বছর কারাগারের বন্দিশালায় কাটিয়েছেন ছাত্রলীগের সে সময়কার সভাপতি ওবায়দুল কাদের। তার সময়ে নতুন আলোকবর্তিকা আর প্রাণ নিয়ে টগবগিয়ে ওঠে ছাত্রলীগ।
২০০১ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধু কন্যার সার্বক্ষণিক রাজনীতির ‘বিশ্বস্ত প্রহরী’ ছিলেন ওবায়দুল কাদের।
এখনো বয়ে বেড়াচ্ছেন একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলার ক্ষত। দলের দু:সময়ে আন্দোলন-সংগ্রামে ছিলেন নিরন্তর। ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিনের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ও তাকে কারাগারে সইতে হয়েছে অসহনীয় নির্যাতন। ওই সময় ১৯ মাস কেটেছে জেলে।
জরুরি সরকারের বিদায়ের পর দিন বদলের পানসিতে চড়ে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার। প্রথম দিকে মন্ত্রিত্ব পাননি ওবায়দুল কাদের। পরে প্রথম মেয়াদের শেষদিকে তাকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। আর নাম পরিবর্তিত হয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় করার পর থেকে পরের দুই মেয়াদেও সামলাচ্ছেন মন্ত্রণালয়টি।
সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলার নীতিতে অবিচল, কর্মী অন্ত:প্রাণ রাজনীতিবিদ ওবায়দুল কাদের নিজের কর্মগুণেই দেশের রাজনীতিতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ঠাঁই করে নিয়েছেন। মিনিট, ঘণ্টা হিসেব করে সময়ের সদ্ব্যবহার করেন।
কাজের মতো কথা বলাতেও রয়েছে তার নিজস্ব স্টাইল। যা ছন্দবদ্ধ, শৈল্পিক সাবলীল উচ্চারণ শিল্প সুন্দর।
২০০২ সালে ১৭তম কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী ছিলেন ওবায়দুল কাদের। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন তিনি। ওই সময় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান আব্দুল জলিল।
২০০৯ সালের ২৪ জুলাইয়ের কাউন্সিলেও সাধারণ সম্পাদক হতে পারেননি বঙ্গবন্ধু কন্যার এ ‘বিশ্বস্ত ছায়াসঙ্গী’।
সেবার প্রথমবারের মতো সাধারণ সম্পাদক হন সৈয়দ আশরাফ। দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য তালিকায় ঠাঁই পান ওবায়দুল কাদের। ২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সম্মেলনে আর প্রার্থী হননি ওবায়দুল কাদের। দ্বিতীয়বারের মতো আবারো সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন সৈয়দ আশরাফ।
এবার কেন্দ্র থেকে তৃণমূল স্তরের নেতাকর্মীরা মনে করেছিলেন, চমক হিসেবে দলীয় সভাপতি দলের সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন আনবেন। নেত্রীও বার বার সে চমকের কথাই বলেছেন।
অবশেষে চমক এলো। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আলোচনার অগ্রভাগে থাকা নেতা ওবায়দুল কাদের ঠিকই দলের সাধারণ সম্পাদক হলেন।
** নেতাকর্মীদের ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত কাদের
বাংলাদেশ সময় ১৯৪৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০১৬
এমএএএম/এএসআর