ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আওয়ামী লীগ

সাক্কুর জয় ও সীমার পরাজয়ের নেপথ্যে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৩ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০১৭
সাক্কুর জয় ও সীমার পরাজয়ের নেপথ্যে মনিরুল হক সাক্কু, আনজুম সুলতানা সীমা, আ হ ম মুস্তাফা কামাল, অ্যাডভোকেট আফজাল খান ও আ ক ম বাহার উদ্দিন

কুমিল্লা: কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আনজুম সুলতানা সীমাকে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মত মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপির প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু। এখন চলছে এ নির্বাচনে জয়-পরাজয় নিয়ে হিসাব-নিকাশ।

এরমধ্যে দলীয় পরিমণ্ডলে আলোচনা চলছে দুই আওয়ামী লীগ নেতা সীমার বাবা অ্যাডভোকেট আফজাল খান এবং আ ক ম বাহার উদ্দিন এমপির অন্তর্কোন্দল, বিএনপির প্রার্থী সাক্কুর সঙ্গে আ ক ম বাহারের সখ্য,  দলের অন্য নেতাদের ‘ফটোশেসন প্রচারণা’ এবং পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামালের সংসদীয় এলাকা সদর দক্ষিণের ওয়ার্ডগুলোতে সাক্কুর ব্যালটে বেশি ভোট পড়া ইত্যাদি নিয়ে। বিএনপি নেতারা এই জয়কে ধানের শীষের পক্ষের ভোট বললেও ক্ষমতাসীন দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা দুষছেন উল্লিখিত কারণগুলোকেই।

আফজাল খান ও আ ক ম বাহার অন্তর্কোন্দল
জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের চোখে, কুমিল্লার রাজনীতিতে কিংবদন্তিতুল্য ঘটনা হচ্ছে আফজাল খান- আ ক ম বাহার দ্বৈরথ। এ দ্বৈরথ নিয়ে বহু গল্পও প্রচলিত আছে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে। যেমন, বিএনপির প্রয়াত নেতা কর্নেল (অব.) আকবর হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তিনি নিজের এলাকা কুমিল্লায় আসতেন কম। এর জবাবে বিএনপির এ নেতা বলতেন, তার কুমিল্লা যাওয়ার দরকার হয় না, কারণ সেখানে তার দু’জন কর্মী (আফজাল-বাহার) রয়েছেন, যারা তার নির্বাচনী মাঠ ঠিক রাখেন। তার ওই রকম কথায় আফজাল-বাহারের দ্বৈরথের সুফল নেওয়ার ইঙ্গিত মেলে। বিগত সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর অস্তাচলে যায় আফজালের রাজনীতি। অন্যদিকে বাহার এখন সদর আসনের ক্ষমতাসীন দলীয় সংসদ সদস্য। কিন্তু ভোটের আগে নৌকার প্রার্থী সীমার প্রচারণায় নিজের কর্মীদের সক্রিয় অংশগ্রহণের দাবি বাহার করলেও মাঠে তারা নিষ্ক্রিয়ই ছিলেন বলে অভিযোগ আফজালপন্থিদের।  

দলীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ, কেন্দ্রের পক্ষ থেকে অন্তর্কোন্দল ভুলে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে মাঠে থাকতে বলা হলেও সক্রিয় ছিলেন না বাহার গ্রুপের নেতাকর্মীরা। বাহারের সঙ্গে সীমার বাবা আফজালের পারিবারিক বিরোধ থাকায় তিনি নির্বাচনে সীমার পক্ষে তেমনভাবে কাজ করেননি। অনেকে অভিযোগ করেছেন, নির্বাচনের আগে যারা দিনে আফজাল ও সীমার পক্ষে ছিলেন, রাতে তারা সাক্কুর হয়ে কাজ করেছেন। আর ভোটের দিন তারা দিনে সীমার নৌকা প্রতীকের ব্যাজ পরলেও ভোট দিয়েছেন ধানের শীষে, বিজয়ী করেছেন সাক্কুকে।  

এমনও আলোচনা হচ্ছে, নির্বাচনে যেসব কেন্দ্রে নৌকার ব্যাজধারী বেশি কর্মী দেখা গেছে, সেখানেই ধানের শীষের পক্ষে ভোট বেশি পড়েছে। সে কারণে বলা হচ্ছে, ‘আফজাল-বাহার দ্বন্দ্বের বলি’ হয়েছেন সীমা।
 
এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট আফজাল খান বলেন, ‘আওয়ামী লীগের লোকজনের বেইমানির কারণেই এটা হয়েছে। কে কে ‘বেইমানি’ করেছে, এ বিষয়ে আমি এখন কিছু বলবো না। ’ 

বাহার-সাক্কু সখ্য
কুমিল্লার রাজনীতিতে সবসময়ই আলোচ্য বিষয় বিএনপির সাক্কু ও আওয়ামী লীগের বাহারের বোঝাপড়ার বিষয়টি। আফজালপন্থি নেতাকর্মীরা মনে করেন, গতবারের সিটি নির্বাচনে এমপি বাহারের সমর্থন পেয়ে সাক্কু মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবারও একই পথে এমপি বাহার হেটেছেন। তার নেতাকর্মীদেরও তেমন সক্রিয়ভাবে নৌকার প্রচারণায় দেখা যায়নি। এবারও সাক্কুর বিজয়ে এমপি বাহারের গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল।  

মুস্তাফা কামালের সদর দক্ষিণে ধানের শীষের জয়
সিটি করপোরেশনের অধীন সদর দক্ষিণের ৯টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার প্রায় ৬০ হাজার। পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামালের সংসদীয় এলাকা এখানটায়ই। সংসদ নির্বাচনের ফলাফল বিবেচনায় এখানে সীমার নেতাকর্মীরা নৌকার প্রতীকে বেশি ভোট পাওয়ার আশা করলেও উল্টো ধানের শীষে পড়েছে ৪ হাজারেরও বেশি ভোট। আবার সেখানে নৌকার মেয়র প্রার্থী হেরে গেলেও জিতে গেছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত বেশিরভাগ কাউন্সিলর। এই ফলাফলেরও কোনো রহস্যভেদ করতে পারছেন না স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
 
কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের ‘ফটোশেসন প্রচারণা’
সীমা আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর কেন্দ্রের অসংখ্য নেতাকর্মী কুমিল্লায় সফর করে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন। কিন্তু তৃণমূল কর্মীদের অভিযোগ, শহরের কয়েকটি বিপণী বিতানেই বেশির ভাগ নেতা ‘প্রচারণার নামে ফটোসেশন‘ করে ঢাকায় চলে গেছেন। আর তাদের পেছনে পেছনে ছুটেছেন জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এই ছোটাছুটি করা স্থানীয় নেতারা নৌকার পক্ষে ভোট চাওয়ার বদলে চেয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতাদের মনোযোগ আর্কষণ করতে এবং মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগের কমিটিতে নিজেদের নাম অর্ন্তভূক্ত করার পথ সুগম করতে। ফলে ফটোসেশনের প্রচারণায় কার্যত বন্দি ছিল সীমার ভাগ্য।  

বিএনপি নেতাকর্মীরা বরাবরই কুমিল্লাকে তাদের দলের ঘাঁটি হিসেবে দাবি করেন। সাক্কুর জয়ে তারা সেই দাবিই এখন জোর গলায় করছেন ফের। কিন্তু আ হ ম মুস্তাফা কামাল, আফজাল খান অথবা আ ক ম বাহার উদ্দিনদের মতো নেতার কুমিল্লা নগরে কি সে দাবি প্রতিষ্ঠিত হয়? সংসদের প্রতিনিধিত্বের বিচার কী বলে?

বাংলাদেশ সময়: ২২৩০ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০১৭
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

আওয়ামী লীগ এর সর্বশেষ