তিনি বলেছেন, নৌকা স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। দেশকে সমৃদ্ধির পথ দেখিয়েছে।
মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) বিকেলে সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় শেখ হাসিনা বক্তৃতা করছিলেন। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এটি ক্ষমতাসীন দলের প্রথম প্রচারণামূলক সভা।
সভায় নৌকা মার্কায় ভোট চাওয়ার এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত নেতা-কর্মী-সমর্থক ও জনতাকে হাত তুলে অঙ্গীকার করতে বলেন। জনতাও হাত তুলে নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার ওয়াদা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতির কাছে।
জনসভায় যোগদানের আগে প্রধানমন্ত্রী বেশ কিছু উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
সরকারের উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা উন্নয়নের ছোঁয়া সিলেটের প্রতিটি ইউনিয়নে পৌঁছে দিয়েছি। সিলেটের উন্নয়নের জন্য আমরা ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। আজ একযোগে ৩৫টি প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়েছে। এর আগে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে সিলেটে বিমানবন্দর, ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, রেললাইন নির্মাণসহ অসংখ্য উন্নয়নকাজ করেছে।
‘আওয়ামী লীগ জনগণের জীবনের মান উন্নয়ন করে। আমি আজ সিলেটে এসেছি। আমাদের নির্বাচনের প্রচারণা শুরু এখান থেকেই শুরু। ’
তিনি সিলেটসহ দেশবাসীকে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নকাজের কথা স্মরণ করিয়ে বলেন, আমরা বিনা পয়সায় শিক্ষার্থীদের বই দিচ্ছি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ল্যাব তৈরি করে দিয়েছি। প্রতিটি এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ করছি, যেন ঘরে বসেই উচ্চশিক্ষা লাভ করা যায়। আমরা হাতে-কলমে শেখার জন্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ব্যবস্থা করেছি। আমরা এভাবে উন্নয়নের পথ সুগম করে দিয়েছি।
‘আজ ৮ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। সারাদেশে ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিত করেছি। বঙ্গবন্ধু ক্ষেপণাস্ত্র খুব শগগির উৎক্ষেপণ করা হবে। এরইমধ্যে প্রায় নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলবো ঘোষণা দিয়েছিলাম। আজ বাংলাদেশকে ডিজিটালে রূপান্তরিত করেছি। ’
প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য-কৃষিখাতেও সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম তুলে ধরে বলেন, জাতির পিতা চেয়েছিলেন, বাংলায় একটি মানুষও না খেয়ে থাকবে না, বিনা চিকিৎসায় কেউ মারা যাবে না। আমি তার আদর্শে এগিয়ে চলেছি। আমরা বিভিন্নভাবে দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। আজ বাংলাদেশ উন্নয়নে বিশ্বের কাছে রোল মডেল হয়েছে।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় বাংলাদেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেছেন, তাদের কারণে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। তাদের আমলে বাংলা ভাইয়ের সৃষ্টি, জঙ্গিবাদের সৃষ্টি। ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার দেশে হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল। ২০০৫ সালে ৬৩টি জেলায় একযোগে বোমা হামলা হয়। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এতে আইভী রহমানসহ আওয়ামী লীগের ২২ জন নেতাকর্মী নিহত হন। সেই হামলার ক্ষত এখনও অনেকে বয়ে বেড়াচ্ছে। বিএনপি ধ্বংস করতে জানে, সৃষ্টি করতে জানে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকানোর নামে সন্ত্রাস-তাণ্ডব চালিয়েছিল। সেসময় অনেক মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। সিএনজি চালিককে পুড়িয়ে মেরেছে তারা। অনেক মানুষ কর্মক্ষমতা হারিয়েছে। হাজার হাজার গাছ কেটে ফেলে। আমরা গাছ লাগাই, তারা গাছ কেটে ফেলে, আমরা রাস্তা করি, তারা ধ্বংস করে। তবে আমরা তাদের সেই জ্বালাও-পোড়াও কঠোর হাতে দমন করেছি। জনগণ যখনই তাদের প্রতিরোধ করেছে, তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট ভাষায় বলেন, আমি একটা কথা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, এদেশে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদের জায়গা নেই। অভিভাবকদের বলবো, তাদের সন্তান কোথায় যায়, কাদের সঙ্গে মেশে তা খেয়াল রাখতে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর নেবেন। জঙ্গিবাদের মূলোৎপাটন করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমরা ২০২১ সালে বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী পালন করবো মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে। ২০৪১ সালের মধ্যে এ দেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধ স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ। বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। এ দেশের মানুষ বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে এগিয়ে যাবে।
সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমানের সভাপতিত্বে ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী ও মহাগর আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিনের যৌথ পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, কেন্দ্রীয় সদস্য বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ও রফিকুল ইসলাম।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, বিদ্যুৎ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী, প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা তারেক সিদ্দিকী, নির্বাচন উপদেষ্টা রাশেদুল আলম প্রমুখ।
এর আগে সকালে সিলেট পৌঁছেই হয়রত শাহজালাল (র.), শাহপরান (র.) ও গাজি বুরহান উদ্দিন (র.) মাজার জিয়ারত করেন প্রধানমন্ত্রী। বিকেল ৩টা ১ মিনিটে তিনি জনসভাস্থলে আসেন। এ সময় মঞ্চের পাশে ৩৫টি প্রকল্পের উন্নয়ন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। বিকেল ৪টায় বক্তব্য শুরু করে ৪টা ৩৯ মিনিটে বক্তব্যের সমাপ্তি টানেন প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০১৮
আরআর/এইচএ/
** সিলেট থেকে শুরু আ’লীগের নির্বাচনী প্রচারণা
** বিএনপি-জামায়াতের কারণে বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়