রাজনৈতিক কোনো কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ হলে সেটা রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করবে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দল। কিন্তু কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি ও নাশকতা চালানোর চেষ্টা হলে প্রশাসনিকভাবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর ব্যবস্থা নেবে।
অক্টোবর থেকে সরকার পতনের জোরালো আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। ইতোমধ্যেই দলটি আগামী শনিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় সমাবেশের কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়াও অক্টোবর থেকে মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছে।
সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এবং জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া নিয়মতান্ত্রিক কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি দিলে তাদের কোনো আপত্তি নেই। এসব দল ও জোটের যেকোন রাজনৈতিক কর্মসূচিকে রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করতে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দল মাঠে থাকবে। এ কারণেই আগামী শনিবার রাজধানীতে সমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছে ১৪ দল। অক্টোবর থেকে বিভাগীয় পর্যায়ে ১৪ দলের আরো কর্মসূচি থাকবে। ইতোমধ্যে নির্বাচনী প্রচার চালাতে মাঠে রয়েছে আওয়ামী লীগ। দলটির এসব কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে জানান নীতিনির্ধারকরা।
সরকার ও আওয়ামী লীগের ওই নীতিনির্ধারকরা আরো জানান, গত নির্বাচনকে বানচাল করতে বিএনপি-জামায়াত জোট সহিংসতা ও নাশকতা চালিয়েছিলো। এবার যাতে তারা সেই পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সে ব্যাপারে সরকার ও আওয়ামী লীগ সতর্ক রয়েছে। আন্দোলনের কর্মসূচির নামে কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা হলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী দিয়ে সরকার তা কঠোরভাবে দমন করবে। বিএনপির অনেক নেতাকর্মীর নামেই বিভিন্ন সময় সহিংস ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে একাধিক মামলা রয়েছে। আবার নতুন করে কোনো সহিংসতা চালানোর চেষ্টা হলে তাদের গ্রেফতার ও আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও এ বিষয় স্পষ্ট করেছেন। বৃহস্পতিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) এক সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আন্দোলনের নামে সভা-সমাবেশে যদি নৈরাজ্য, নাশকতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হয়, তাহলে আমরা রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করবো। আর সহিংসতা ও নাশকতার ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। আমরা সবদিক থেকে প্রস্তুত আছি। শান্তিপূর্ণ সমাবেশ হলে আমরা রাজনৈতিকভাবে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে মোকাবেলা করবো। আর সহিংসতা ও নাশকতার দিকে যদি বিএনপি ও তার দোসররা পা বাড়ায় তাহলে তার দাঁতভাঙা জবাব দেবে জনগণ।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, তাদের অপচেষ্টা, অপরাজনীতি অনেক হয়েছে। আমরা কোনো চ্যালেঞ্জ করতে চাই না। হঠকারী কথা বলার পার্টি আওয়ামী লীগ না। ড. কামাল হোসেনকে নিয়ে কী বলবো? ১৯৭৮ সালের নির্বাচনের আগে ৩ জুন পল্টনের জনসভায় ড. কামাল হোসেনের বক্তৃতা দেওয়ার কথা ছিলো। এটাই ছিলো ৭৫ এর পরে প্রথম প্রকাশ্য সভা। তার নাম মাইকে প্রচার করা হয়েছিলো। কিন্তু আগের দিন রাতেই তিনি প্লেনে চরে দেশের বাইরে চলে যান। জনসভার আগে দেশ ছেড়ে যাওয়া নেতা, আরেকজন রেললাইন ধরে দৌড়ে পালানো নেতা (এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী), একজন বিদেশে পালাতক (তারেক রহমান); এরা কী করবে তার পাল্টা চ্যালেঞ্জ দেওয়ার কিছু নেই! তবে কেউ বাড়াবাড়ি করার চেষ্টা করলে, অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, বিএনপি তো কত হুমকিই গত ১০ বছর ধরে দিয়ে আসছে। বাস্তবে তো কিছুই দেখিনি। এখন আগামী মাস থেকে কী করবে আগে দেখি। তারা যদি শান্তিপূর্ণভাবে কোনো কর্মসূচি করে, ভাঙচুর না করে, মানববন্ধন করে তাহলে তো আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আর যদি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি করতে চায়, সহিংসতা করতে চায় তাহলে তো সরকার আছে। নির্বাচনকালীন সরকার গঠন না হওয়া পর্যন্ত এই সরকার, এই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ই তো থাকবে, তারা দেখবে। আমরা বিএনপি বা কোনো জোটের পাল্টা কোনো কর্মসূচি দেবো না। আমরা নির্বাচনী প্রচারে মাঠে আছি, প্রচার কার্যক্রম চালিয়ে যাবো।
বাংলাদেশ সময়: ০০০৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৮
এসকে/এমজেএফ