আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক সূত্র জানায়, দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়নের চিঠি দেওয়া হলেও জোটের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত কে থাকছেন কে থাকছেন না, জোট-মহাজোটকে কতটি আসন ছাড়তে হবে তার ওপর সব কিছু নির্ভর করছে।
প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করার আগে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী কারা হচ্ছেন সে বিষয়টিও পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। আসন ভাগাভাগি চূড়ান্ত না হওয়ায় শরিক দলগুলোকে যার যার মতো মনোনয়ন জমা দিতে বলা হয়েছে। এরপর নির্বাচন কমিশনে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে পর সমঝোতা হতে পারে। সেটা না হলে প্রত্যাহারের আগের দিন আসন ভাগাভাগি চূড়ান্ত করা হবে। আওয়ামী লীগ ২৩১ জনকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছে। প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া শুরু করেছেন। আগামী ২৮ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন।
মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি ২০০ আসনে মনোনয়ন জমা দেবে। দলের নিজস্ব প্রতীক লাঙল নিয়ে নির্বাচন করবে দলটি। এ কারণে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আগ পর্যন্ত জাতীয় পার্টির সঙ্গে আসন ভাগাভাগি চূড়ান্ত করার সুযোগ রয়েছে। আসন ভাগাভাগি চূড়ান্ত হওয়ার পর বাকি আসনগুলো থেকে প্রার্থী প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে।
১৪ দলের শরিক দলগুলো নির্বাচন করবে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকায়। ১৪ দলের সঙ্গেও আসন ভাগাভাগি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। এ জোটের শরিক দলগুলোকেও তাদের প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা দিতে বলা হয়েছে। ১৪ দলের বিষয়টি চূড়ান্ত হতেও নির্বাচন কমিশন থেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আগ পর্যন্ত গড়াতে পারে।
আগামী ২ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের শেষ দিন। আর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ৯ ডিসেম্বর। এর আগের দিন পর্যন্ত সমঝোতার সুযোগ রয়েছে। ফলে এ সময়ের মধ্যে জোট-মহাজোটের আসন ভাগাভাগি চূড়ান্ত করতে কোনো সমস্যা হবে না বলে আওয়ামী লীগের ওই সূত্রগুলো জানায়।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন। সোমবার (২৬ নভেম্বর) সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের যাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে যদি জোটের প্রার্থী অধিকতর গ্রহণযোগ্য হয় আমাদের প্রার্থী প্রত্যাহার করে জোটকে ছাড় দেওয়া হবে। আমরা ২৩১ জনকে চিঠি দিয়েছি। জাতীয় পার্টি, ১৪ দল, যুক্তফ্রন্ট অন্যান্য দল সব মিলিয়ে ৬৫ থেকে ৭০টি আসন ছাড়ের জন্য রাখা হয়েছে। এর বেশি হবে না। স্কুটনি’র (নির্বাচন কমিশনে প্রার্থিতা বাছাইয়ের পর) পরের দিন পর্যন্ত সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় এনে জোটের তালিকা প্রকাশ করবো। আজ তালিকা প্রকাশের কথা থাকলেও কৌশলগত কারণে এই মুহূর্তে তালিকা প্রকাশ করা হচ্ছে না।
তিনি আরো বলেন, আমরা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করছি। প্রতিপক্ষের কৌশলও আমাদের দেখতে হবে।
১৪ দলের শরিক বাংলাদেশ জাসদকে একটি আসন ছেড়ে দেওয়ার কথা নিশ্চিত করা হয়েছে। সেটি হলো দলটির কার্যকরী সভাপতি মঈনুদ্দিন খান বাদল (চট্টগ্রাম-৮)। এ দলের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধানকে (পঞ্চগড়-১) ছাড়া হয়নি। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন বলে জানা গেছে। এছাড়া দলের সভাপতি শরিফ নুরুল আম্বিয়াও নড়াইল-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিতে পারেন।
এ জোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টিকে এখন পর্যন্ত ৫ জনকে নিশ্চিত করা হয়েছে। বর্তমানে এ পার্টির এমপি ৬ জন। এর মধ্যে নড়াইল-২ আসনটি ওয়ার্কার্স পার্টিকে দেওয়া হচ্ছে না। ওয়ার্কার্স পার্টি ৭টি আসন দাবি করছে। তবে এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ থেকে নিশ্চিত করে কিছু জানানো হয়নি। বিষয়টি বিবেচনায় আছে বলা হয়েছে। ওয়ার্কার্স পার্টি ৩৪টি আসনে প্রার্থী জমা দেবে। জোটের সঙ্গে সমঝোতার পর বাকিগুলো প্রত্যাহার করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৮
এসকে/এমজেএফ