শেখ হাসিনা বলেন, ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করবো আমরা। ওই সময় যুদ্ধাপরাধী স্বাধীনতাবিরোধী খুনি, রাজাকার এবং যারা অগ্নিসন্ত্রাসকারী তারা যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে।
বুধবার (১২ ডিসেম্বর) কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
এদিন সকালে সড়ক পথে ঢাকা থেকে রওয়ানা হয়ে দুপুরে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় পৌঁছান শেখ হাসিনা। সেখানে তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করেন। পরে সেখান থেকে নিজ নির্বাচনী এলাকা কোটালীপাড়ায় শেখ লুৎফর রহমান কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত জনসভায় অংশ নেন।
নিজ নির্বাচনী এলাকায় জনসভা করার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এ সময় তার সঙ্গে তার ছোট বোন শেখ রেহানাও মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। শেখ হাসিনার এ জনসভায় জনতার ঢল নামে। বৃহস্পতিবার সড়ক পথে ঢাকায় ফেরার সময় ৭টি পথ সভায় বক্তব্য রাখবেন তিনি।
নির্বাচনী জনসভায় শেখ হাসিনা বলেন, এই কোটালীপাড়ার সভার মাধ্যমে আমি সারা বাংলাদেশের জনগণের কাছে সেই আবেদন জানাই, আগামী নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। আজকে যারা ওই মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী, যুদ্ধাপরাধের দায়ে যাদের সাজা হয়েছে তাদের দোসরদের নির্বাচনে প্রার্থী করেছে, তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী, স্বাধীনতার শত্রু যুদ্ধাপরাধী, গণহত্যা পরিচালনাকারী, অগ্নিসন্ত্রাসকারীদের নিয়ে যারা আজকে নির্বাচনের মাঠে নেমেছে, তাদের উপযুক্ত জবাব আপনাদের দিতে হবে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে জনগণের সেবা করার সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, যেহেতু এটি আমার প্রথম নির্বাচনী সভা। কাজেই এই সভা থেকে সমগ্র দেশবাসীর কাছে, এই আবেদন জানাই, আমি নৌকা মার্কায় ভোট চাই, জনগণের সেবা করতে চাই, বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ হিসাবে গড়ে তুলতে চাই। জাতির পিতার স্বপ্ন আমি পূরণ করতে চাই। কাজেই আমি সবার সাহায্য চাই। দোয়া চাই। সারা দেশে নৌকা মার্কায়, যাকে যেখানে প্রার্থী করেছি তাদের সবাইকে ভোট দেবার জন্য আমি দেশবাসীর কাছে আহ্বান জানাচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন। আমি প্রথমেই জাতির পিতার মাজার জিয়ারত করে প্রথম নির্বাচনী সভা আজকে কোটালীপাড়ার মাটি থেকে শুরু করলাম। কারণ, আপনারাই তো আমাকে আশ্রয় দিয়েছেন। আমি জানি অন্য প্রার্থী যারা, তারা তাদের এলাকায় যান। কাজ করে সময় পায়। আমি সেই সময় দিতে পারি না। কারণ, আমার তিনশটি এলাকাকে দেখতে হয়। আমাকে সমগ্র বাংলাদেশের কাজ করতে হয়। উন্নয়নের জন্য কাজ করতে হয়। সেই দায়িত্বটা আপনারা নিয়েছেন।
তিনি বলেন, আজকে বাবাহারা, ভাইহারা আমি আপনারা দায়িত্ব নিয়েছেন এবং প্রতিবার নির্বাচনে সে দায়িত্ব আপনারা পালন করেন, আপানারাই ভোট দেন। আপনারাই নির্বাচিত করেন। আর আপনাদের ভোটেই নির্বাচিত হয়ে আমি বাংলাদেশের সরকার প্রধান হিসাবে দেশের সেবা করার সুযোগ পাই। আমি আপনাদের কাছে আমার কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। এই দায়িত্ব আপনারা পালন করেছেন। এখনো আমি আপনাদের কাছে সেই দায়িত্ব দিয়ে যাচ্ছি, আমার আপনজন বলতে একটা ছোট বোন আছে, আর আছেন আপনারা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি একটি কথাই আপনাদের কাছে বলতে চাই, আমার তো চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। আমার একটাই লক্ষ্য যে, স্বপ্নটা জাতির পিতা দেখেছিলেন, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা। বাংলাদেশের মানুষকে উন্নত জীবন দেওয়া। সেই লক্ষ্যটা অর্জন করাই আমার একমাত্র লক্ষ্য। প্রতি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেবো। প্রতিটি মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পাবে। আমরা ব্যাপকভাবে প্রকল্প নিয়েছি রাস্তাঘাট, পুল-ব্রিজ থেকে শুরু করে মানুষ কর্মসংস্থান পাচ্ছে, ভোকেশনাল ট্রেনিং এর ব্যবস্থা আমরা করে দিচ্ছি। দেশে-বিদেশে চাকরির ব্যবস্থা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করছি।
জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কবিতার পঙ্ক্তি উচ্চারণ করে বলেন, বিদায়ের আগে আমি শুধু এইটুকু বলে যেতে চাই, নিঃস্ব আমি রিক্ত আমি দেবার কিছু নেই, আছে শুধু ভালোবাসা দিয়ে গেলাম তাই।
জনসভায় বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানার পক্ষে বক্তব্য রাখেন চিত্রনায়ক রিয়াজ ও চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ। তারা নৌকার পক্ষে ভোট চেয়ে বলেন, এবারের নির্বাচন আমাদের অস্তিত্বের লড়াই। বাংলাদেশের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করতে হবে।
কোটালীপাড়া আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুভাষ চন্দ্র জয় ধরের সভাপতিত্বে জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কর্নেল (অব.) ফারুক খান, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক শেখ মো. আব্দুল্লাহ প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১৮
এসকে/এমজেএফ