রোববার (৬ জানুয়ারি) নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদাসহ পুরো কমিশনের সঙ্গে এক বৈঠকে বসে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচ টি ইমামের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ধন্যবাদ জানায়।
বৈঠকের পর এইচটি ইমাম সংবাদ সম্মেলন বলেন, নির্বাচন কমিশনে এসেছিলাম মূলত নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিকভাবে যে দায়িত্ব অত্যন্ত সুন্দরভাবে পালন করেছেন, সেজন্য আমাদের দলের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা সেই সঙ্গে অভিনন্দন জানানোর জন্য।
তিনি বলেন, এখানে বিশেষ কয়েকটি ব্যাপার ছিল। যেমন এবারের নির্বাচনের মতো এতো বড় আকারের নির্বাচন বাংলাদেশে কখনো হয়নি। এতো বিশাল সংখ্যক মানুষকে একত্র করে সমন্বয় যেটা এবারের মতো এতো সুন্দর সমন্বয় আর কখনো হয়নি। এটিই আমাদের সবচেয়ে গর্বের বিষয়। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সাংবিধানিকভাবে যা যা দায়িত্ব পালন করার ছিল, কমিশনকে সহায়তার করার, প্রত্যেকটি কাজ ছোট থেকে বড় পর্যায় পর্যন্ত সামরিক বেসামরিক, সেনাবাহিনী সবাই যেমন কাজ করেছেন, এগুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি এবং এই শৃঙ্খলাবোধটিকে কিভাবে ধরে রাখা যায়, সমন্বয়টাকে ধরে রাখা যায় এবং ভবিষ্যতে নির্বাচন-উপজেলা নির্বাচন আসছে আরো অন্যান্য নির্বাচন যাতে সুষ্ঠুভাবে করা যায় স্বচ্ছভাবে করা যায়, গ্রহণযোগ্যভাবে করা যায়, তা নিয়েও আলাপ-আলোচনা হয়েছে।
দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চ্যালেঞ্জের ব্যাখ্যায় এইচ টি ইমাম বলেন, চ্যালেঞ্জ যেটা সবচেয়ে বড় একইদিনে তিনশ’ আসনে নির্বাচন, সাড়ে ১০ কোটি ভোটার, তাদের একত্রে নিয়ে আসা এবং সেখানে শৃঙ্খলা বজায় রাখা, ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারা, তার ব্যবস্থা করা, এগুলো অসাধারণ একটি কাজ ছিল।
প্রত্যেকটা এলাকায় ব্যালট পেপার, ব্যালট বাক্সসহ নির্বাচন উপকরণ যথাসময়ে পাঠানো এবং সময়মতো যারা একত্র করতে পারে এই সমন্বয়টা সম্ভব হয়েছে সরকারের নানাভাবে সহায়তার কারণে। আমারা প্রত্যেকে চেষ্টা করেছি, যখন যা দরকার নির্বাচন কমিশন যা বলেছে, আমাদের একই কথা নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনার জন্য এককভাবে দায়ী, সব কর্তৃত্ব তাদের সংবিধানে দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সরকার সব সহায়তা করবে।
এইচ টি ইমাম বলেন, নির্বাচনে আমরা তাই করেছি। তা না হলে প্রায় ৭ লাখ প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারি নিয়োগ করা তাদের পাঠানো, এটি একদিকে অন্যদিকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য এতগুলো বাহিনী একত্র করে তাদের মধ্যে সমন্বয় এবং শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন করা সম্ভব হতো না।
গতকালই আইজি পুলিশ জানিয়েছে এবারই প্রথম এতোগুলো নির্বাচনের মধ্যে একজনও পুলিশ বাহিনীর কোনো সদস্য হতাহত হননি। অবাক কাণ্ড প্রতিবছরই নির্বাচনে এদের উপর আক্রমণ হয়। ২০০১ সালে ৫শ’জন, ২০০৭ সালে ১৭০ জন, ২০১৪ সালে ৩০৩ জন, এবারের নির্বাচনের আগে কিছুকিছু ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশে প্রায় ১৬ কোটি মানুষ। এমনিতেই ঝগড়া ঝাটি লেগে থাকে, ব্যক্তিগত রেশারেশি, জমি নিয়ে, নারীঘটিত, টাকা পয়সা এগুলো তো হয়ই। নির্বাচনের দিন কি এগুলো বন্ধ ছিল? এগুলো যোগ করেই হয়তো এ সংখ্যাটা এসেছে।
আমরা গর্ববোধ করি, নিশ্চিয় আপনারাও করবেন। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমরা গর্ববোধ করতে পারি। আমরা আগের চাইতে অনেক বেশি পরিপক্ক, অনেক ম্যাচুউরড হয়েছি এবং আমাদের প্রশাসনিক, সামরিক এবং আইন-শৃঙ্খলার সবদিক থেকে দক্ষতা অনেক বেড়েছে। সেসঙ্গে নির্বাচন কমিশনের যে দক্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছে, অসাধারণ। নির্বাচনের দিন, পরের দিন এই যে গেজেট নোটিফিকেশন নিখুঁতভাবে করা, অনেকেই সারারাত ধরে এ কাজকর্মগুলো করেছেন।
নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ এনে পুনঃভোট চাওয়া বিএনপির অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, এটা নির্বাচন কমিশনের বিষয়। এটা সংবিধানেরও বিষয়।
নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশনের প্রতি জনগণের আস্থা অনেক বাড়ল বলেও মন্তব্য করেন এইচ টি ইমাম।
তিনি বলেন, আপনারা বিস্মিত হবেন-বিদেশ থেকে যেসব ডেলিগেশন এসেছিল সবাই শান্তিপূরণ নির্বাচনের কথা বলেছেন।
আমেরিকা রাষ্ট্রদূত পর্যন্ত বলেছেন এবারের মতো দেশি-বিদেশি বিভিন্ন দল যেভাবে অভিনন্দন জানিয়েছেন, এতো সুষ্ঠু এতো সুন্দর নির্বাচন হয়নি এবং যেভাবে পৃথিবীব্যাপী স্বীকৃতি পাওয়া গেছে এবং আমাদের নির্বাচন পদ্ধতি নির্বাচন কমিশনের প্রতি যে আস্থা সবাই প্রকাশ করেছে তাতে আমরা গর্বিত।
প্রতিনিধি দলের আওয়ামী লীগের নেতা ড. মশিউর রহমান, ড. হাছান মাহমুদ, মো. আকতারুজ্জামান, একিএম রিয়াজুল কবীর কাওসার, ফজিলাতুন্নেছা বাপ্পী, ড. সেলিম মাহমুদ প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৬, ২০১৯
ইইউডি/এএটি