এরমধ্যে পূর্ণ মন্ত্রী হচ্ছেন- ২৪ জন, প্রতিমন্ত্রী- ১৯ জন ও উপমন্ত্রী হচ্ছেন- তিনজন। রোববার (৬ জানুয়ারি) মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. শফিউল আলম সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানিয়েছেন।
নতুনভাবে বণ্টন করা দফতর অনুযায়ী এবার রাজশাহী বিভাগের অন্যতম জেলা সিরাজগঞ্জ-১ আসন থেকে বাদ পড়েছেন নির্বাচিত সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নাসিম। মন্ত্রীসভায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে বাদ পড়েছেন তিনি। তার স্থলে পদোন্নতি পেয়েছেন প্রতিমন্ত্রী ডা. জাহিদ মালেক। মোহাম্মদ নাসিম স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ছিলেন।
এর আগে ১৯৯৬ সালেও স্বরাষ্ট্র, গৃহায়ন ও গণপূর্ত, ডাক এবং টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বর্তমানে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য। ফলে রাজশাহী বিভাগে থেকে বাদ গেলেন মোহাম্মদ নাসিম।
তবে নতুনভাবে মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পেয়েছেন নওগাঁ-১ আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য সাধন চন্দ্র মজুমদার। এছাড়া রাজশাহী-৬ আসনের সংসদ সদস্য শাহরিয়ার আলম এবারও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে যাচ্ছেন। আর একই দফতরেই থাকছেন বিভাগের অপর জেলা নাটোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
এবারের মন্ত্রিসভায় পূর্ণ মন্ত্রী হচ্ছেন নওগাঁ-১ আসনের সাধন চন্দ্র মজুমদার।
রাজশাহী বিভাগের সাপাহার, পোরশা ও নিয়ামতপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত নওগাঁ-১ আসন। এ আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য সাধন চন্দ্র মজুমদারকে এবার খাদ্য মন্ত্রী করা হচ্ছে। খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের জায়গায় স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন তিনি।
পেশায় ব্যবসায়ী সাধন চন্দ্র মজুমদার রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত আছেন। তিনি এবার নিয়ে টানা তিনবারের সংসদ সদস্য। আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে ২০০৮ সালে এক লাখ ৭৭ হাজার ২৫১ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তবে ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন। এক লাখ ৮৭ হাজার ৫৯২ ভোট পেয়ে ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নওগাঁ-১ আসন থেকে বিশাল ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন তিনি।
রাজশাহী-৬ (চারঘাট-বাঘা) আসনের সংসদ সদস্য মো. শাহরিয়ার আলম ও নাটোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য জুনাইদ আহমেদ পলক নিজ নিজ মন্ত্রণালয়েই থাকছেন।
এরমধ্যে শাহরিয়ার আলম একজন ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ। তিনি ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী জেলায় সর্বোচ্চ ব্যবধানে প্রথমবারের মত নির্বাচিত হন। রাজশাহী-৬ (চারঘাট-বাঘা) আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ওই সময় জাতীয় সংসদের তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের ১৪ জানুয়ারি থেকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। এবারও তিনি একেই মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হচ্ছেন।
এছাড়া জুনাইদ আহ্মেদ পলক একজন আইনজীবী এবং রাজনীতিবিদ। তিনি ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী বিভাগের নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলা থেকে আওয়ামী লীগের নির্বাচিত বাংলাদেশের সর্বকনিষ্ঠ সংসদ সদস্য।
তিনি ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচিত সরকারের সংসদ সদস্য, ডাক এবং টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এবারও তাকে ওই মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী করা হচ্ছে।
এদিকে স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এএইচএম কামরুজ্জামানই ছিলেন রাজশাহী সদর থেকে বঙ্গবন্ধু সরকারের পূর্ণমন্ত্রী।
এর পর আওয়ামী লীগ সরকারের তিন মেয়াদে আর পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী পায়নি বিভাগীয় শহর রাজশাহী। ফলে রাজশাহীর অভূত উন্নয়নের স্বপ্ন অধরাই থেকে গেছে।
টানা ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আবারও জয়ের মুখ দেখে আওয়ামী লীগ। জয়লাভের পর সরকার গঠন করে দলটি। ওই সময় রাজশাহী বিভাগের পার্শ্ববর্তী জেলা শহর নওগাঁ থেকে বাণিজ্যমন্ত্রী করা হয় প্রয়াত নেতা আবদুল জলিলকে।
সেই সঙ্গে রাজশাহী থেকে আওয়ামী লীগ নেত্রী অধ্যাপিকা জিনাতুন নেসা তালুকদার ও নাটোর থেকে আবদুল কুদ্দুসকে প্রতিমন্ত্রী করা হয়। যমুনাপাড়ের সিরাজগঞ্জ থেকে দলটির জ্যেষ্ঠ নেতা মোহাম্মদ নাসিমকে দেওয়া হয় পূর্ণমন্ত্রীর দায়িত্ব।
ফলে স্বাধীনতা পরবর্তী ১৯৯৬, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে দলটি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ট হলেও পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী পায়নি রাজশাহীর মানুষ। তবে টানা তৃতীয়বারের মতো এবার সরকার গঠন করছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট। এরই মধ্যে শপথ নিয়েছেন নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা। সোমবার নতুন মন্ত্রীসভার শপথগ্রহণের কথা রয়েছে।
পদ্মাপারের মানুষগুলোর প্রত্যাশা ছিল এবার অন্তত রাজশাহীর কোনো সংসদ সদস্যকে পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী হিসেবে ঠাঁই দেওয়া হবে হ্যাট্রিক সরকারের চমকের মন্ত্রিসভায়।
বাংলাদেশ সময়: ০৪৩৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৭, ২০১৯
এসএস/জিপি