কালের পরিক্রমায় ১৯৮৪ সালের জুনে এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান আরেক সিলেটী সাবেক স্পিকার মরহুম হুমায়ূন রশিদ চৌধুরী। ১৯৮৫ সালের জুলাই পর্যন্ত এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।
সময়ের সঙ্গে সরকার বদল হয়ে আরও ১১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আবারও বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর আব্দুস সামাদ আজাদের হাতেই এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব ন্যাস্ত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০০১ সালের জুলাই মাস মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মন্ত্রণালয়টি ছিল সিলেটী এই প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদের হাতে।
তার মৃত্যুর পর দেড়যুগ কেটে যায়, মন্ত্রণালয়টিতে আধিপত্য ছিল না সিলেটী কোনো মন্ত্রীর। দীর্ঘ এসময় বিএনপি, তত্ত্বাবধায়ক সরকার, ও আওয়ামী লীগ সরকারের আমল কেটেছে।
অবশেষে ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-১ আসন থেকে মহাজোটের হয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিপুল ভোটে নির্বাচিত ড. এ কে আব্দুল মোমেনের হাত ধরে আবারও সিলেট ফিরে পায় পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়। বাংলাদেশের ২০তম পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে সোমবার (৭ জানুয়ারি) শপথ নেবেন জাতিসংঘের বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত অর্থমন্ত্রীর সহোদর ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে বর্তমানে সময়েও আবুল হাসনাত মাহমুদ আলী সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন।
এদিকে গুরুত্বপূর্ণ এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার খবরে নেতাকর্মী ও সিলেটের মানুষের মধ্যে ড. এ কে আবদুল মোমেনকে ঘিরে চলছে আলোচনা।
নির্বাচন পরবর্তী অনেকের ধারণা ছিল সহোদর হিসেবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের উত্তরসূরি হয়ে অর্থমন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাচ্ছেন ড. মোমেন!
অন্যদিকে ড. মোমেন জাতিসংঘে দায়িত্ব পালনকালে বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নে তার ভূমিকা সরকার মহলে প্রশংসা কুড়ায়। তাই দেশীয় সম্পর্ক জোরদারে তাকেই পররাষ্ট্র মন্ত্রী করা হতে পারে এমনটিও ছিল আলোচনায়।
অবশেষে সহোদরের নয়, বরং বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ আব্দুস সামাদ আজাদের উত্তরসূরি হলেন ড. মোমেন। তার হাত ধরে সিলেট ফিরে পেল পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়। আর ড. মোমেনের মাধ্যমেই সিলেটের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন সাধিত হবে এমনটি আশাবাদী এ অঞ্চলের মানুষের।
এক নজরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী: ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতেই ছিল এ মন্ত্রণালয়। ২০১৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসনাত মাহমুদ আলী ছিলেন দায়িত্বে। আর ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৩ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ড. দিপু মনি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ২০০৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০০৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত পররাষ্ট্র উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন ইফতেখার আহমদ চৌধুরী। এরআগে ২০০৬ অক্টোবর থেকে ২০০৭ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ইয়াজউদ্দিন আহম্মদ, নভেম্বর ২০০১ থেকে অক্টোবর ২০০৬ সাল পর্যন্ত মোরশেদ খান, ২০০১ সালের অক্টোবর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত একিউএম বদরুদ্দোজা, ২০০১ সালের জুলাই থেকে অক্টোবর বিচারপতি লতিফুর রহমান।
১৯৯৬ সালের মার্চ থেকে ২০০১ সালের জুলাই পর্যন্ত মরহুম আব্দুস সামাদ আজাদ, ডিসেম্বর ১৯৯০ থেকে মার্চ ১৯৯৬ পর্যন্ত এ এস এম মুস্তাফিজুর রহমান, জুলাই ১৯৮৫ থেকে ডিসেম্বর ১৯৯০ পর্যন্ত আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, জুন ১৯৮৪ সাল থেকে জুলাই ১৯৮৫ পর্যন্ত সাবেক স্পিকার মরহুম হুমায়ূন রশিদ চৌধুরী, মার্চ ১৯৮২ থেকে জুন ১৯৮৪ সালে এ আর শামস উদ দোহা, নভেম্বর ১৯৭৫ থেকে মার্চ ১৯৮২ সালে প্রফেসর মোহাম্মদ শামসুল হক, ১৯৭৫ এর আগস্ট থেকে নভেম্বর আবু সাঈদ চৌধুরী।
১৯৭৩ সালের মার্চ থেকে ১৯৭৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত ড. কামাল হোসেন, ১৯৯১ সালের ডিসেম্বর মার্চ ১৯৭৩ পর্যন্ত আব্দুস সামাদ আজাদ এবং ১৯৭১ সালের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত খন্দকার মোশতাক আহমেদ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৫১৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৭, ২০১৯
এনইউ/জিপি