ক্ষমতাসীন দলের যুবসংগঠনটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, খুলনা মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয় ২০০৮ সালের ৬ জানুয়ারি। ৫১ সদস্যবিশিষ্ট এই কমিটির আহ্বায়ক করা হয় অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান পপলুকে।
খোদ নেতাদেরই অনেকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযোগ করেছেন, ‘মেয়াদ পেরোনো কমিটির নিয়ন্ত্রক নেতাদের স্বেচ্ছাচারিতা, অগণতান্ত্রিক ও নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে তারা ক্ষুব্ধ। আহ্বায়ক কমিটি গঠন হওয়ার পর আজ পর্যন্ত কোনো ওয়ার্ডে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হয়নি। যে কারণে নেতৃত্ব বিকাশ এবং সংগঠনে গতিশীলতা তৈরি হয়নি। ’
অবিলম্বে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করা না হলে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তারা।
নেতাকর্মীরা বলেন, এর আগে একাধিকবার কমিটি গঠন নিয়ে গুঞ্জন উঠলেও শেষ পর্যন্ত তা আলোর মুখ দেখেনি। ফলে ১১ বছর ধরে আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে নগর যুবলীগ।
তবে সম্প্রতি খুলনা মহানগর যুবলীগের কমিটি গঠন নিয়ে ফের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। তাই নেতাকর্মীরা মনে করছেন, নতুন কমিটি গঠন হলে সংগঠন আরও চাঙ্গা হবে। ইতোমধ্যে নেতাকর্মীরা তাদের পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারণা শুরু করেছেন।
নতুন কমিটিতে এবারও সভাপতি পদে আলোচনায় রয়েছেন বর্তমান আহ্বায়ক ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সরদার আনিসুর রহমান পপলু। তবে যুবলীগের পরিবর্তে খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদেও তাকে দেখা যেতে পারে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
এছাড়া সভাপতি পদে নতুন করে খুলনা মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও নগর যুবলীগের সদস্য সফিকুর রহমান পলাশের নাম জোরালোভাবে শোনা যাচ্ছে। তবে সাধারণ সম্পাদক পদে একমাত্র প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন খুলনা মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি শেখ শাহাজালাল হোসেন সুজন।
সংগঠন সূত্রে জানা যায়, আনিসুর রহমান পপলু ২০০৩ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত মহানগর যুবলীগের সভাপতি ও ২০০৮ সাল থেকে অদ্যবধি নগর যুবলীগের আহ্বায়কের পদে রয়েছেন। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে যুবলীগের শীর্ষ নেতৃত্বে থাকায় নেতাকর্মীদের কাছে বেশ গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে তার।
কিন্তু তিনমাসের আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে ১১ বছর ধরে সম্মেলন করতে না পারার ব্যর্থতাও তিনি এড়াতে পারেন না বলে মনে করেন পদপ্রত্যাশীরা।
সভাপতি পদে এবার সবচেয়ে বেশি আলোচনায় সফিকুর রহমান পলাশ। তিনি ২০০৩ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত খুলনা মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। এর আগে নগর ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও নির্বাহী সদস্যের দায়িত্বেও ছিলেন। ছাত্রলীগের নেতৃত্ব ছাড়ার পর যুবলীগের কর্মকাণ্ডে নিজেকে সক্রিয় রেখেছেন।
সাধারণ সম্পাদক পদে এখন পর্যন্ত একমাত্র প্রার্থী রয়েছেন বর্তমান মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি শেখ শাহাজালাল সুজন খুলনার ছাত্র ও যুব সমাজের কাছে পরিচিত মুখ। তিনি ২০১০ সালে খুলনা মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০১১ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের উপ-পাঠাগার সম্পাদক, ২০১৫ সালে মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি এবং পরবর্তীতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি।
পারিবারিক দিক থেকেও শেখ শাহাজালাল হোসেন সুজনের খ্যাতি রয়েছে। তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা শেখ শহিদুল হক ষাটের দশকে তুখোড় ছাত্রনেতা ছিলেন। তিনি খুলনা মহানগর শ্রমিক লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। ’৭৫ পরবর্তী সময়ে তিনি আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করতে আমৃত্যু কাজ করে গেছেন।
কমিটি গঠনের বিষয়ে নগর যুবলীগের যুগ্ম-আহবায়ক হাফের মো. শামিম সোমবার (২৮ জানুয়ারি) সকালে বাংলানিউজকে বলেন, দীর্ঘদিন হয়ে গেলো নতুন কমিটি হচ্ছে না। আহ্বায়ক কমিটিতে চলছে ১১ বছর। আমরা অনেকে চলে গেছি, অনেকে মারাও গেছে, আবার অনেকে অন্য কমিটিতে ঢুকে গেছে। একটা অচল অবস্থা আর কি। আমি মনে করি, সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি হওয়া উচিত। দলের স্বার্থে এখন নতুন নেতৃত্ব দরকার।
সভাপতি পদপ্রত্যাশী সফিকুর রহমান পলাশ বাংলানিউজকে বলেন, সুন্দর রাজনীতির জন্য চাই নতুন নেতৃত্ব। সম্মেলনের মাধ্যমে মেধাবীরা আসুক, যারা সংগঠনকে গতিশীল করবে। সম্মেলন হলে এই সময়ের যোগ্য লোকরাই কমিটিতে আসবে। এক্ষেত্রে আমাকে যদি দায়িত্ব দেওয়া হয় তবে আমি সঠিকভাবে পালন করব।
সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী নগর ছাত্রলীগের সভাপতি শেখ শাহাজালাল হোসেন সুজন বাংলানিউজকে বলেন, আমার বাবা ও বড় ভাই আমৃত্যু আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে গেছেন। আমার বাবা ও ভাইয়ের মৃত্যুর পর খুলনার আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা আমার অভিভাবক। আমি দীর্ঘ ১০ বছর মহানগর ছাত্রলীগ চালিয়েছি। এই ১০ বছরে আমি চেষ্টা করছি ছাত্রলীগ যেন কোনো দুর্নামের ভাগীদার না হয়। খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা যদি আমাকে যুবলীগের দায়িত্ব দেন, তবে আমি সঠিকভাবে পালন করব।
২০০৩ সালের এপ্রিলে মহানগর যুবলীগের সম্মেলনে আনিসুর রহমান পপলু সভাপতি ও আলী আকবর টিপু সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। একই বছরের ২৭ জুলাই ৯১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হয়। এ সময় অন্তঃকোন্দল চরমে পৌঁছালে ২০০৪ সালের শেষের দিকে কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। এর চার বছর পর ২০০৮ সালের ৬ জানুয়ারি আরেকটি সম্মেলনের লক্ষ্যে অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান পপলুকে আহ্বায়ক, মনিরুজ্জামান সাগর ও হাফেজ মো. শামিমকে যুগ্ম-আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়। এর ৯ মাস পর ৪৮ জনকে সদস্য করে ৫১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি করা হয়।
তিন মাসের মধ্যে মহানগর যুবলীগের সম্মেলন করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার কথা থাকলেও গত ১১ বছরেও তা করতে পারেনি তারা। এই কমিটির তিন সদস্য তানজীর আশরাফ যুথী, নাসিম সরদার ও এফ এম আবুল কামাল মারা গেছেন। যুগ্ম-আহ্বায়ক শামিম, তসলিম আহম্মেদ আশা নগর আওয়ামী লীগে পদ পেয়েছেন। স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন বিমান সাহা। এছাড়া বেশিরভাগ সদস্যই নিষ্ক্রিয়। অংশ নেন না সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডেও।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০১৯
এমআরএম/এইচএ/