আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচন, স্থানীয় পর্যায়ে দলের কোনো নেতার প্রভাব ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা, বিভিন্ন সময় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশের ঘটনা দলের তৃণমূল পর্যায়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। এর ফলে দলের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
বিষয়গুলো নিয়ে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন বলে দলীয় সূত্র জানায়। বিষয়গুলো নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছে এবং দ্রুতই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের নীতির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা জানান, বিএনপি ও জামায়াত থেকে অনেকেই বিভিন্নভাবে আওয়ামী লীগে এসে ভিড়ছেন। স্থানীয় নেতাদের কেউ কেউ নিজেদের গ্রুপ ভারী করতে তাদের স্থান করে দিচ্ছেন এবং কাছে টানছেন। এতে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব আরও বাড়ছে। অনুপ্রবেশকারীরা আওয়ামী লীগে যোগ দিলেও আওয়ামী লীগের রাজনীতি ও আদর্শ ধারণ করেনি। পুরোনো রাজনৈতিক আদর্শ ও অপকর্ম থেকেও বেরিয়ে আসেনি। যার ফলে নানা ধরনের সমস্যা তৈরি হচ্ছে যার দায়ভার আওয়ামী লীগের ওপরই পড়ছে।
এবারের উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে ব্যাপক হারে প্রার্থী হওয়া এবং সেই প্রার্থীকে দলের স্থানীয় পর্যায়ের কোনো কোনো গুরুত্বপূর্ণ নেতা, এমপি ও মন্ত্রীরা সমর্থন দিয়েছেন। এতে স্থানীয় পর্যায়ে নতুন করে অভ্যন্তরীণ কোন্দল তৈরি হয়েছে। বিষয়টি দলের জন্য উদ্বেগজনক। এদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন তাদের চিহ্নিত করে তালিকা করা হয়েছে। তালিকায় এক থেকে দেড়শো জনের নাম রয়েছে। তবে এদের ব্যাপারে আরও খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। অচিরেই এদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থার চিঠি দেওয়া হবে বলে জানান আওয়ামী লীগ নেতারা।
সার্বিক পরিস্থিতি কাটিয়ে দলে শৃঙ্খলা ফিরিযে আনতে সিনিয়র নেতাদের নেতৃত্বে ৮ বিভাগে যে ৮টি টিম করা হয়েছে অচিরেই টিমগুলো কাজ শুরু করবে। আগামী অক্টোবরে দলের জাতীয় কাউন্সিল পর্যন্ত তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে টিমগুলো কাজ করে যাবে।
আগামী শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের যৌথ সভা অনুষ্ঠি হবে। এ সভায় দলের সাংগঠনিক বিষয়সহ সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা ও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান বাংলানিউজকে বলেন, বিএনপি-জামায়াত থেকে এসে কেউ যাতে আওয়ামী লীগের কোনো পদে আসতে না পারে সে ব্যাপারে দলের সকলকে সতর্ক করা আছে। স্থানীয় পর্যায়ে কোনো কোনো জায়গায় তাদের ব্যাপারে আমরা সতর্ক। এই সব দল থেকে এসে আওয়ামী লীগের সঙ্গে কাজ করতে পারে। তবে তাদের আওয়ামী লীগের সদস্য হতে হলে একটা সময় পর্যন্ত পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে করতে হবে। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কিছু ওয়ার্ড কমিটিতে এই সমস্ত দল থেকে আসা কেউ কেউ স্থান পেয়েছে, এরকম অভিযোগ থাকায় আমরা ওই কমিটিগুলোকে অনুমোদন দেইনি।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, উপজেলা নির্বাচনে যারা দলের বিরুদ্ধে কাজ করেছেন তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। এদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদের ব্যাপারে বিস্তারিত খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। কে কোন ধরনের সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন সে অনুযায়ী তাদের চিঠি দেওয়া হবে। সবার ধরন তো এক না। বিএনপি-জামায়াত থেকে অনেকেই আওয়ামী লীগে ঢুকছেন। এরা দলে ঢুকে অপকর্ম করছেন। অনেকে গুপ্তচর হয়ে ঢুকছেন। এ ধরনের অপরাধীরা আওয়ামী লীগে ঢুকে যাতে কোনো অপরাধ করতে না পারে সে ব্যাপারে সতর্ক অবস্থান নেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগকে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না।
সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বাংলানিউজকে বলেন, যে ৮টি টিম করা হয়েছে এই টিমগুলো আগামী কাউন্সিল পর্যন্ত কাজ করবে দলের তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠনকে শক্তিশালী করার জন্য। এই সময়ে জেলা উপজেলা থেকে শুরু করে যে সব কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে সেগুলোর সম্মেলন করা, নতুন কমিটি করা এবং দলের সদস্য নবায়ন ও নতুন সসদ্য করার কাজ হবে। বিএনপি-জামায়াত থেকে আসা, যুদ্ধাপরাধীদের পরিবারের কোনো সদস্য যাতে আওয়ামী লীগের সদস্য হতে না পারে বা কোনো কমিটিতে ঢুকতে না পারে সে দিকেও সতর্ক দৃষ্টি রাখা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৩৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০১৯
এসকে/এমজেএফ