ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আওয়ামী লীগ

কারা আসছেন খুলনা নগর যুবলীগের কমিটিতে?

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৯, ২০১৯
কারা আসছেন খুলনা নগর যুবলীগের কমিটিতে?

খুলনা: দীর্ঘ ১১ বছর ধরে আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে চলছে খুলনা মহানগর যুবলীগের কার্যক্রম। নতুন কমিটি করার ক্ষেত্রে ‘গ্রিন সিগন্যাল’র অপেক্ষায় ছিলেন স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। সম্প্রতি সেই সংকেত পাওয়ার পর নতুন কমিটিতে কে কোন পদ পাচ্ছেন, তা নিয়ে শুরু হয়েছে আলাপ-আলোচনা, জল্পনা-কল্পনা।

নেতা-কর্মীরা বলছেন, তিন মাসের জন্য গঠিত খুলনা মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটি সাড়ে ১১ বছর পার করেছে। দীর্ঘদিন ধরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ায় নতুনরা আসতে পারছেন না নেতৃত্বে।

ফলে নাজুক হয়ে পড়েছে সংগঠনটি। সম্মেলন না হওয়ায় নেতা-কর্মীরা অনেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। এখন তরুণ নেতৃত্বের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন হলে নেতা-কর্মীরা আবার সক্রিয় হয়ে উঠবেন।

সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, খুলনা মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয় ২০০৮ সালের ৬ জানুয়ারি। ৫১ সদস্যবিশিষ্ট এই কমিটির আহ্বায়ক করা হয় আনিছুর রহমান পপলুকে। যুগ্ম-আহ্বায়ক মনোনীত হন এস এম মনিরুজ্জামান ও হাফেজ মো. শামিম। তিন মাসের মধ্যে সম্মেলন করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার কথা থাকলেও গত সাড়ে ১১ বছরে তা করতে পারেননি তারা।  

খুলনা মহানগর যুবলীগের কমিটি গঠন নিয়ে আলোচনা চলছে বেশ কিছুদিন ধরে। সম্প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠিত সভায় সেপ্টেম্বরের মধ্যে সম্মেলন আয়োজন করতে কেন্দ্র থেকে স্থানীয় নেতাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়।

কেন্দ্র থেকে সম্মেলন করার জন্য একমাসের সময় বেঁধে দেওয়ার পরে খুলনা মহানগর যুবলীগের কমিটি নিয়ে পুনরায় তোড়জোড় শুরু হয়। তবে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, সম্মেলন ছাড়াই হতে চলেছে মহানগর যুবলীগের কমিটি।

নতুন কমিটি গঠনের খবরে আলোচনায় রয়েছেন প্রবীণ-নবীনের সমন্বয়ে তিনজন প্রার্থী। এদের মধ্যে সভাপতি পদে আলোচনায় আছেন বর্তমান যুগ্ম-আহ্বায়ক এস এম মনিরুজ্জামান সাগর ও মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শফিকুর রহমান পলাশ। আর সাধারণ সম্পাদক পদে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আছেন মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি শেখ শাহাজালাল হোসেন সুজন।

কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা বলেন, ছাত্রলীগ থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে প্রবেশ করা যায় না। এজন্য ছাত্রলীগের পর সবাই যুবলীগে যেতে চায়। যারা দীর্ঘদিন যুবলীগের রাজনীতি করেছে নতুন কমিটিতে তাদের প্রাধান্য না থাকাই ভালো। ছাত্রলীগের সাবেকদের জায়গা দিতে হবে। এজন্য সাংগঠনিক ব্যক্তি ও তরুণদের নিয়ে কমিটি গঠন করতে হবে। যেন যুবলীগকে কেউ ‘আদু’ ভাইয়ের সংগঠন বলতে না পারে।

সভাপতি প্রার্থী শফিকুর রহমান পলাশ ২০০৩ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত খুলনা মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। এর আগে মহানগর ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও নির্বাহী সদস্যের দায়িত্বেও ছিলেন। ছাত্রলীগের নেতৃত্ব ছাড়ার পর যুবলীগের কর্মকাণ্ডে নিজেকে সক্রিয় রেখেছেন তিনি।  

সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচিত নাম মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি শেখ শাহাজালাল হোসেন সুজনের বাবা মুক্তিযোদ্ধা শেখ শহিদুল হক ষাটের দশকের তুখোড় ছাত্রনেতা হিসেবে পরিচিত। তিনি খুলনা মহানগর শ্রমিক লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতিও। ’৭৫ পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন হিসেবে তিনি দক্ষিণাঞ্চলের আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করতে আমৃত্যু কাজ করে গেছেন।

শেখ সুজন ২০১০ সালে খুলনা মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০১১ সালে  ছাত্রলীগের উপ-পাঠাগার সম্পাদক, ২০১৫ সালে মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি এবং পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন।  

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পলাশ ও সুজন বিএনপি-জামায়াত হঠাও আন্দোলনে রাজপথে সক্রিয় থেকে সিনিয়র নেতাদের আস্থাভাজন হয়েছেন। বিশেষ করে খুলনা সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আব্দুল খালেকের আস্থা অর্জন করতে পেরেছেন তারা। ‘ক্লিন ইমেজ’র কারণে ঊর্ধ্বতন পর্যায়ও তাদের পছন্দ করে।  নতুন কমিটিতে সভাপতি পলাশ ও সাধারণ সম্পাদক সুজনই হবেন।  

সভাপতি প্রার্থী সাবেক ছাত্রনেতা শফিকুর রহমান পলাশ বাংলানিউজকে বলেন, দলের দুর্দিনে সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি। ওয়ান ইলেভেনের সময় নেত্রীর মুক্তির আন্দোলনে যেন রাজপথে না নামি সেজন্য তৎকালীন বিশেষ একটি বাহিনীর অফিসাররা লিখিত দিতে বলেছিলেন। তা দিলে আমার কোনো সমস্যা থাকবে না বলেছিল। সে সময় অনেকে সই করেছিল কিন্তু আমি দেই নি। যে কারণে অনেক অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেছি। আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা বিশেষ করে বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুষ্পুত্র শেখ হেলাল উদ্দিন এমপি, সালাউদ্দিন জুয়েল এমপি, খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান আমাকে নিয়ে যে সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটাই আমি মেনে নেবো। নবীনদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করা হলে মহানগর যুবলীগ আরও বেশি সংগঠিত হবে।  

কবে কমিটি গঠন হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যে নতুন কমিটি গঠন করা হবে বলে ‘গ্রিন সিগন্যাল’ পেয়েছি।  

সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ও মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি শেখ শাহাজালাল হোসেন সুজন বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমান খুলনার যুবসমাজের চাহিদা একটা তরুণ্যনির্ভর নেতৃত্ব। সে হিসেবে আমাদের স্থানীয় নেতারা যদি আমাকে উপযুক্ত মনে করেন তাহলে আমি এই পদের জন্য নিজেকে উপযুক্ত মনে করি।  

অনেকে আপনার কম বয়স নিয়ে কথা বলছে- এ বিষয়ে জানতে চাইলে জবাবে সুজন বলেন, বর্তমান যুগ তারুণ্যনির্ভর, আপনারা দেখে থাকবেন বর্তমান সময়ে আওয়ামী যুবলীগের যতগুলো ইউনিটের কমিটি হয়েছে সেখানে সদ্য সাবেক হওয়া এবং অনেক কমিটিতে বর্তমান ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত আছে এমন নেতাদের নেতৃত্ব দেওয়া হয়েছে, তারা আমার থেকে আরও জুনিয়র এবং রাজনীতির দিক থেকেও নতুন। আমি সেক্ষেত্রে নিজেকে এই পদের জন্য যোগ্য মনে করি। নগর যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতা ও সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র আলী আকবর টিপু যখন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হন তিনিও ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক থেকেই যুবলীগে আসেন এবং এসময় তার বয়স আমার থেকেও কম ছিল।

বাংলাদেশ সময়: ১০০৭ ঘণ্টা,  সেপ্টেম্বর ০৯,  ২০১৯
এমআরএম/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

আওয়ামী লীগ এর সর্বশেষ