বাংলানিউজ: রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে কিছু বলুন...
আকরামুজ্জামান: দীর্ঘ ৫০ বছরেরও বেশি সময় রাজনীতি করে আসছি, এ দীর্ঘ সময়ে অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়েছি। তবে যতই বিপদ আসুক, থেমে থাকিনি, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে ধারণ করে এগিয়ে গেছি।
ছাত্রজীবন থেকে সেই ১৯৬২ এর শিক্ষা আন্দোলন, আইয়ুবের সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন, বলতে গেলে ছোটকাল থেকেই রাজনীতির মাঠে সক্রিয় ছিলাম। ১৯৬৯ এর আন্দোলনে তখন পরিপূর্ণ যুবক। এ আন্দোলনে ছিলাম সক্রিয় ভূমিকায়। সবাই মিলে দেশ স্বাধীন করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম বলেই দেশ স্বাধীন হয়েছে।
পুরো জীবনটাই বিভিন্ন আন্দোলনের মধ্যে কেটেছে। ফেনীকে মহকুমা থেকে জেলায় উত্তীর্ণ করার জন্যও আন্দোলন করতে হয়েছে। রাজনীতির মাঠে কতটা সংগ্রাম করে এ যায়গায় আসতে হয়েছে, তা হয়তো বর্তমান প্রজন্ম জানে না। কী করে জানবে, আমাদের ইতিহাস তো লিখিত নেই।
বঙ্গবন্ধু হত্যার পর থেকেই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা অনেক নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন। বিএনপি-জামায়াত জোটসহ সামরিক সরকারগুলো ক্ষমতায় ছিল কিংবা অস্ত্রের জোরে ক্ষমতা দখল করেছে- কখনোই তাদের জনসমর্থন ছিল না। সে সময়টুকুতে তারা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর অত্যাচারের স্টিম রোলার চালিয়েছিল।
এক সময় তো নিরাপত্তা আইন ও বিনা বিচারে জেলে আটকে রাখার মত নির্যাতনমূলক আইন ছিল। সে সময়টা আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব নিয়ে অনেক কষ্ট করেছে। জোরালো নেতৃত্বের অভাব ছিল। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠনের পর আওয়ামী লীগ আরও উজ্জীবিত হয়।
২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত যখন ক্ষমতায় আসে, তারা আওয়ামী লীগকে একেবারে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার পাঁয়তারা করেছিল। তারা সেদিন (২১ আগস্ট) শেখ হাসিনাকে প্রাণে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র করে। সেদিন শেখ হাসিনাকে বাঁচানো না গেলে আজকের এই আওয়ামী লীগ পাওয়া যেতো না।
বাংলানিউজ: বঙ্গবন্ধুর আমলের আওয়ামী লীগ আর এখনকার আওয়ামী লীগে মিল-অমিল কোথায়?
আকরামুজ্জামান: বঙ্গবন্ধুর আমলে যারা রাজনীতি করেছে, তারা আন্দোলন-সংগ্রাম করে জীবন কাটিয়ে ছিল। তখন তো হালুয়া-রুটির ব্যবস্থা ছিল না। তখনকার আওয়ামী লীগ আর এখনকার আওয়ামী লীগে বিস্তর ফারাক। এখনকার নেতা-কর্মীরা ক্ষমতার খুব কাছাকাছি থাকায় তাদের অনেকের মধ্যে লোভ কাজ করে, রাজনীতি করে ব্যক্তিগত ফায়দা লোটার ফন্দি করে।
বাংলানিউজ: চলমান শুদ্ধি অভিযানের ব্যাপারে কী বলবেন?
আকরামুজ্জামান: শেখ হাসিনার চিন্তা-চেতনা খুবই স্বচ্ছ। দেরিতে হলেও দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটা সংগ্রামে নেমেছেন তিনি। এ অভিযানে কাউকেই তিনি ছাড় দিচ্ছেন না। অভিযান আপন ঘর থেকে শুরু করেছেন। বাংলানিউজ: দলে কী ধরনের নেতা-কর্মীরা মূল্যায়ন পাবেন?
আকরামুজ্জামান: সৎ, যোগ্য, ত্যাগী ও জনদরদী- এক কথায় ক্লিন ইমেজের নেতারাই দলে পদ-পদবিসহ মূল্যায়ন পাবেন। দলে মাদক ব্যবসায়ী-দুর্নীতিবাজদের কোনো জায়গা নেই। নতুন প্রজন্মের ভালো লোকগুলোকে রাজনীতিতে টেনে আনা দরকার।
বাংলানিউজ: সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন, কী পরিকল্পনা?
আকরামুজ্জামান: নেতা-কর্মীদের আকাঙ্ক্ষা ও ইচ্ছাকে বাস্তবায়িত করবো। রাজনীতির মূল উদ্দেশ্য হলো জনগণের পাশে থাকা। সেই জনগণের পাশে থাকার প্রাণান্তকর চেষ্টা থাকবে।
বাংলানিউজ: ফেনীতে সহ-অবস্থানের রাজনীতির ব্যাপারে কিছু বলুন...
আকরামুজ্জামান: আমি ব্যক্তিগতভাবে চাই জেলায় সব রাজনৈতিক দল একসঙ্গে মিলেমিশে থাকুক। রাজনীতির মাঠে গণতন্ত্রের চর্চা হোক। ফেনীর উন্নয়নে এমন সহাবস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলানিউজ: ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের পুনর্নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী সম্পর্কে...
আকরামুজ্জামান: এক কথায় তিনি দুর্দান্ত সংগঠক। পুরো জেলার সব নেতা-কর্মীকে তিনি একই ছাতার নিচে এনে রাজনীতি করছেন। এমনটা সত্যিই প্রশংসনীয়, এটা তার নিজস্ব স্টাইল।
বাংলানিউজ: দলের নেতা-কর্মীদের সর্বশেষ কী বার্তা দেবেন?
আকরামুজ্জামান: বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সোনার বাংলা গড়ার যে স্বপ্ন দেখেন, ১৯৪১ সালের যে ভিশন হাতে নিয়েছেন, সে ভিশন বাস্তবায়নের জন্য দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের সততার সঙ্গে কাজ করে যেতে হবে।
এক নজরে আকরামুজ্জামান
আকরামুজ্জামান ১৯৬৩ সালে ফেনী পাইলট হাইস্কুল থেকে এসএসসি, এরপর ফেনী সরকারি কলেজ থেকে আইএ, ১৯৬৮ সালে বিএ পরবর্তীতে এলএলবি পাস করেন। তিনি ছাত্রজীবন থেকেই সক্রিয় আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৬৪ সালে আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকার কারণে কারাবরণ করতে হয় তাকে।
১৯৬৬ ও ১৯৬৯ সালের ৬ দফা ও ১১ দফা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন আকরামুজ্জামান। ১৯৭০ এর নির্বাচন ও অসহযোগ আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে ভূমিকা রাখেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ভারতে ট্রেনিং নিয়ে এতেও অংশ নেন আকরামুজ্জামান। ১৯৭৩ সালে আইন পেশার সঙ্গে জড়িত হন তিনি। জেলা আইনজীবী সমিতির একাধিকবার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালনকারী আকরামুজ্জামান ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে ফেনী-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ৩০ বছর ধরে তিনি দলের ফেনী জেলা কমিটির ১ নং সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন। সবশেষ ২৬ অক্টোবর শনিবার ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে বিপুল ভোটে সভাপতি নির্বাচিত হন আকরামুজ্জামান।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০১৯
এসএইচডি/এইচএ/