সম্প্রতি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে এমন শত শত ব্যানার-পোস্টার-ফেস্টুন দেখা যায় বিভিন্ন সড়ক এবং অলি-গলিতে। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতাকর্মী নিজেদের ছবি বড় আকারে দিয়ে পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন লাগিয়েছেন নগরজুড়ে।
এসব পোস্টার-ব্যানার এবং ফেস্টুনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবির আকারের কয়েকগুণ বড় করে নিজেদের ছবি ছাপিয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নিম্ন পর্যায়ের সহযোগী সংগঠনের নেতারা। অথচ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কঠিন নির্দেশনা রয়েছে, কোনো অবস্থাতেই বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কারও ছবি দিয়ে ব্যানার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড ও পোস্টার তৈরি করা যাবে না।
লক্ষ করলে এসব পোস্টার-ফেস্টুনে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট আকারের ছবি স্থান পেয়েছে উপরে ডান অথবা বাম পাশের কোনো এক কোনায়। ব্যক্তি উদ্যোগে দেওয়া বেশির ভাগ পোস্টার-ব্যানারে প্রচারকারীদের নিজের অথবা যে নেতার অনুসারী তার ছবি দেওয়া হয়েছে বিশাল অংশজুড়ে। এসব পোস্টারে জাতির পিতা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার থেকে নিজেদের আত্মপ্রচারই বড় হয়ে উঠেছে।
আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ২০১৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর একটি চিঠির মাধ্যমে আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাদের বিলবোর্ড, পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ছাড়া অন্য কারো ছবি ব্যবহার না করার নির্দেশ দেন।
আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও দলীয় সভা-সমাবেশগুলোতে একাধিকবার নেতাদের বড় আকারের ছবি ব্যবহার নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারপরেও অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, কে শোনে কার কথা!
বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদের সভাপতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক এ বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ছোট বা বড় করে দেওয়া বা না দেওয়ায় কিছু যায় আসে না। বঙ্গবন্ধু সমগ্র বাঙালির হৃদয়ের মনি কোঠায় আছেন। তবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের দল আওয়ামী লীগের যে নেতাকর্মীরা এসব ব্যানার বা পোস্টার ছাপাচ্ছেন এবং সেখানে বঙ্গবন্ধুর ছবিকে ছোট করে দিয়ে, নিজেদের ছবি বড় করে দিয়ে আত্মপ্রচার করছেন, এটা তাদের রুচির পরিচয়। এদের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বিন্দুমাত্র ছিটেফোঁটা নেই।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কথা বলে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করার জন্য কিছু মানুষ সবসময় সুযোগ গ্রহণ করে। বর্তমানে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা এবং তার দল ক্ষমতায়। সুতরাং সেই দলের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করে দ্রুত নিজেদের স্বার্থ হাসিলা করা সম্ভব, এটাই হচ্ছে এখন। এরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে যোজন যোজন দূরে। যারা এমন পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন ছাপাচ্ছেন, তাদের অন্যান্য কাজগুলো মূল্যায়ন করলেই বোঝা যাবে, কেনো তারা বঙ্গবন্ধু এবং প্রধানমন্ত্রীর ছবি ছোট করে নিজেদের ছবি বড় করে দিচ্ছেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল ফারুক খান (অব.) এ বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, দলীয় নির্দেশনা না মানা সঠিক নয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে না বুঝেই অতি উৎসাহী হয়ে নেতাকর্মীরা এমন কাজ করে থাকে। তবে এগুলো করা ঠিক না। এখন সময় এসেছে আমাদের সবাইকে আরও দায়িত্বশীল হওয়ার। যারা নিজেদের ছবি বড় করে পোস্টার ছাপাচ্ছেন, দলের সিনিয়র নেতাদের উচিত হবে তাদের বোঝানো যে, দলীয় নির্দেশনা রয়েছে এমন পোস্টার, ব্যানার বা ফেস্টুন না ছাপানোর বিষয়ে। তাহলে তারা এই কাজ থেকে বিরত থাকবে।
সম্মেলন হোক কিংবা সভা সমাবেশ বা নির্বাচন, ব্যানার-পোস্টার-ফেস্টুনে শুধু আওয়ামী লীগ নয়, অন্য যে কেউই যেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবিকে ছাপিয়ে না যায়, সেদিকটায় সবাইকে আরও সচেতনতা অবলম্বনের প্রত্যাশা সচেতন দেশবাসীর।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০১৯
আরকেআর/এসএ