রোববার(২৪ নভেম্বর) সকালে খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনকে সফল বলে আখ্যায়িত করেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। প্রত্যেকের বক্তব্যে ছিল সম্মেলন নিয়ে ভূয়সী প্রশংসা।
সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ও জেলার নেতারা জাতীয় ও আঞ্চলিক ইস্যু নিয়ে বক্তব্য রাখলেও তিনজনের বক্তব্য উপস্থিত নেতাকর্মীদের দিয়েছে বাড়তি খোরাক। আর তারা হলেন পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং, খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা রণ বিক্রম ত্রিপুরা এবং আলোচিত আওয়ামী লীগ নেতা জাহেদুল আলম।
মূলত সম্মেলনে জাহেদুল আলম তার বক্তব্যে অতীতের ভুলত্রুটির জন্য সবার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এক পর্যায়ে পার্বত্যমন্ত্রীকে ইঙ্গিত করে সব ধরনের উন্নয়ন বান্দরবান এবং রাঙামাটিতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে রণ বিক্রম ত্রিপুরা তার বক্তব্যে অতীতে দল বিরোধী কর্মকাণ্ডের কথা স্মরণ করে দেন। অপর দিকে জাহেদুলের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে পাল্টা জবাব দিয়েছেন পার্বত্যমন্ত্রী।
সম্মেলনে জাহেদুল আলম তার দীর্ঘ বক্তব্যের এক পর্যায়ে বলেন, অতীতে আমার অনেক ভুল-ভ্রান্তি ছিল। আমি তার জন্য সবার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। আমার বয়স হয়ে গেছে। এখন নতুনদের সময়। আমি নতুনদের চলার পথে সারথী হয়ে থাকতে চাই।
এক পর্যায়ে তিনি বলেন, তিন পার্বত্য অঞ্চলের মধ্যে খাগড়াছড়ি পিছিয়ে আছে। পার্বত্যমন্ত্রী বীর বাহাদুর বান্দরবানের হওয়ার কারণে বান্দরবান এবং রাঙামাটিতে উন্নয়ন হচ্ছে বেশি। বান্দরবানে বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে। তিনি মন্ত্রীকে এখানকার উন্নয়নের জন্য নজর দেওয়াসহ খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজকে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবি জানান।
এরপর জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রণ বিক্রম ত্রিপুরা বলেন, বঙ্গবন্ধু আদর্শের দল আওয়ামীলীগ। এটি কারো ব্যক্তিগত দল ভাবার সুযোগ নেই। কেন্দ্র মনে করে খাগড়াছড়িতে বিভক্তি আছে। আপনারা এই সম্মেলন দেখে বলেন বিভক্তি আছে কিনা। কেউ যদি দলে থেকে, দলের সুযোগ সুবিধা নিয়ে দল বিরোধী কর্মকাণ্ড করে তা পুরো দল দায় নেবেনা। যারা বার বার দলে থেকে দল বিরোধী কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকে তাদের বিষয়ে তিনি সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান।
জাহেদুল আলম খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক। গত পৌর নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়াসহ একাধিক অভিযোগে তাকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কৃত করা হয়।
এদিকে পার্বত্যমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং জাহেদুল আলমের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে এক পর্যায়ে বলেন, আমি তিন জেলার মন্ত্রী। আমাকে বান্দরবনের মন্ত্রী বললে ভুল হবে। সবখানে সমানভাবে উন্নয়নের কাজ চলছে। বান্দরবানে যে বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে সেটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। আমরা নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে করেছি।
এদিকে বক্তব্য চলাকালীন বীর বাহাদুরকে এই বিষয়ে কথা না বলতে কেন্দ্রীয় নেতারা ইশারা দিলেও তিনি বক্তব্য চালিয়ে যান।
এসময় তিনি জাহেদুল আলমকে দেখিয়ে বলেন, পারলে আপনারা উদ্যোগ নিয়ে অর্থ সংগ্রহ করে বিশ্ববিদ্যালয় করেন। আমিসহ যেখানে যেখানে যাওয়ার দরকার যাবো। প্রয়োজনে বিল্ডিং করে দেব। এদিকে তিনি প্রত্যেক উপজেলায় যাওয়ার কথা বলেন। আগামী চার বছর উন্নয়ন করতে না পারলে খাগড়াছড়ি আর আসবেন না বলেও জানান তিনি।
সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ।
খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার সভাপতিত্বে এতে আরো উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম, পার্বত্যমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, তিন পার্বত্য জেলা নারী সংসদ সদস্য বাসন্তি চাকমা।
সম্মেলনে শেষে কাউন্সিলরদের মতামতের ভিত্তিতে খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাকে পুনঃরায় সভাপতি, নির্মলেন্দু চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক এবং দিদারুল আলমকে সাংগঠনিক সম্পাদক ঘোষণা করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ০৭০৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৯
এডি/এসএইচ