শেষ পর্যন্ত আলোচনায়- ‘ইলেকশন’ না ‘সিলেকশন’। প্রদপ্রত্যাশীরাও দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের ওপর ভরসা রাখছেন।
দলীয় সূত্র জানায়, কাউন্সিল বিষয়ে বুধবার (০৪ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টায় সিলেট আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান এক নেতা প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। যে যাই বলুক, শেষ পর্যন্ত এই বৈঠকে নেতাদের ভাগ্য নির্ধারণ নেত্রীর ইশারায় হতে পারে বলে মনে করছেন দলের নেতারা।
এই প্রক্রিয়ায় গেলে সমঝোতার মাধ্যমেই কমিটি হবে, জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এক নেতা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নেতা বলেন, পুরনোদের আবারো মূল্যায়ন করা হবে! তাই কাউন্সিল হচ্ছে না সিলেট জেলা মহানগরের। এ কারণে কদর কমেছে কাউন্সিলরদের। এ যাবত কাউন্সিলরদের দ্বারস্থ হননি বা ফোনও পাননি পদপ্রত্যাশীরা।
সিলেটের একটি উপজেলা আওয়ামী লীগের জনৈক কাউন্সিলর এবং নগর আওয়ামী লীগের এক নেতা বাংলানিউজকে বলেন, রাত পোহালেই কাউন্সিল, কিন্তু এখনো পদপ্রত্যাশী কোনো নেতার একটি ফোনও আসেনি।
শীর্ষ পদগুলোতে ডজন খানেক প্রার্থী হলেও ঘুরেফিরে পুরনোরাই আলোচনায় রয়েছেন। তবে কিছুটা সংশয় জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমানকে নিয়ে। তার পরিবর্তে মন্ত্রী ইমরান আহমদ এই পদে আসার কথা থাকলেও সংসদ সদস্যরা পদে আসতে না পারার একটি ঘোষণায় লুৎফুর রহমানের পাল্লা ভারী হয়ে যায়। আবার এই পদে জেলার সহ-সভাপতি মাহমুদ উস সামাদ ও বর্তমান জেলার সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমানও আলোচনায় আছেন। দলের সহ-সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদও সভাপতি হওয়ার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করলেও শেষ পর্যন্ত বঞ্চিতই থাকছেন।
আর সভাপতি পদে দল প্রবীণ লুৎফুর রহমানের উপর ভরসা রাখলে সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী-ই বহাল থেকে যেতে পারেন। কেননা, আপাদমস্তক রাজনীতিবিদ ও দলের জন্য ত্যাগী নেতা হিসাবে তার খ্যাতি রয়েছে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত।
সাধারণ সম্পাদক পদে শক্ত প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাছির উদ্দিন খান ও অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দিন, বর্তমান সহ-সভাপতি শাহ ফরিদ আহমদ। এই তিনজনের মধ্যে প্রচারণায় এগিয়ে আছেন নাছির। তার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে নাজিম উদ্দিন প্রচারণা না চালিয়েও এগিয়েছিলেন নিজের গ্রহণযোগ্যতায়।
আর মহানগর আ’লীগের সভাপতি পদে সাবেক সিটি মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ও সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন আসাদ উদ্দিন। এ দু’টি পদেও পরিবর্তনের সম্ভাবনাও খুবই ক্ষীণ, মনে করছেন নেতাকর্মীরা। যদিও কামরান দলের কেন্দ্রীয় সংসদের কার্যনির্বাহী কমিটিতে আছেন। সভাপতি হওয়ার দৌড়ে তার সঙ্গে আলোচনায় আছেন সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট মফুর আলী, অ্যাডভোকেট রাজ উদ্দিন আহমদ ও মুক্তিযোদ্ধা আবদুল খালিক এবং যুগ্ম সম্পাদক ফয়জুল আনোয়ার আলোয়ার।
সাধারণ সম্পাদক পদে তালিকায় আছেন কমিটির যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, বিজিত চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম নাদেল ও এটিএম হাসান জেবুল, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক তপন মিত্র এবং বন ও পরিবেশ সম্পাদক জগদীশ চন্দ্র দাস। শেষ পর্যন্ত মাইনাস টু ফর্মুলায় তাদের সবাইকে পড়তে হচ্ছে, এমনটাই মনে করছেন নেতাকর্মীরা।
অবশ্য নেতাকর্মীরা জানান, বিগত চার দলীয় জোট সরকারের সময়ে যারা গ্রেনেড হামলায় আহত হয়েছেন, তাদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি থেকে বাদ না দিতেও নেত্রীর নির্দেশনা রয়েছে।
সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক তপন মিত্র বলেন, চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে সিলেটের গুলশান হোটেলে গ্রেনেড হামলায় প্রাণ গেছে সতীর্থ ইব্রাহিমের। তিনি নিজেও আহত হয়েছিলেন। সেই ভয়াল স্মৃতি এখনো তাড়া করে বেড়ায়। দল তাকে মূল্যায়ন করবে, আশাবাদী তিনি।
সিলেট নগর আ’লীগের সভাপতি পদে থাকা বদর উদ্দিন কামরান বলেন, সম্মেলনকে ঘিরে সিলেটে উৎসব বিরাজ করছে। নেতাকর্মীদের মধ্যেও সেই আমেজ। এরইমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। রাত পোহালেই সম্মেলন ও কাউন্সিল।
দীর্ঘ ৮ বছর পর সম্মেলন হওয়ার কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০১১ সালে কমিটি হয়। সে সময় দেশে রাজনীতিতে বৈরী পরিস্থিতি ছিল। আন্দোলন সংগ্রামে সেসময় রাজপথে থাকার কারণে কমিটি হয়নি। আর আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক দল, তাই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়ই সম্মেলন হচ্ছে। নগরে ৪২০ ও জেলাতেও অনুরূপ কাউন্সিলর রয়েছেন বলেন তিনি।
সিলেট আওয়ামী লীগে ২০০৫ সালের পর এবার তৃতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বৃহস্পতিবার (০৫ ডিসেম্বর)। দীর্ঘ বছর পর সম্মেলন হলেও কাউন্সিলরদের ভোট গ্রহণ না করার সম্ভাবনাই বেশি! শেষ পর্যন্ত নেত্রীর ইশারায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নাম ঘোষণা করতে পারেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
বাংলাদেশ সময়: ২২৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৪, ২০১৯
এনইউ/জেডএস