আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা জানান, আওয়ামী লীগের কাছে, দেশে মানুষের কাছে বঙ্গবন্ধু পরিবারের প্রতি অন্যরকম এক অনুভূতি কাজ করে। এ দেশের জন্য, এ দেশের মানুষের জন্য এই পরিবারের যে আত্মত্যাগ সেটাই এর প্রধান কারণ।
২০১৬ সালের ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, আমি থাকতে নতুন নেতৃত্ব আসুক। আমি চাই বেঁচে থাকতেই নতুন নেতা নির্বাচিত করে দলকে শক্তিশালী করতে। কিন্তু কাউন্সিলরা তার বক্তব্য সমস্বরে তা প্রত্যাখান করেন। চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে ডয়চে ভেলের সঙ্গে এক সাক্ষাতকারে প্রধানমন্ত্রী রাজনীতি থেকে অবসরের কথা জানিয়েছিলেন। তিনি বলেন, সব মিলিয়ে চতুর্থবার আমি প্রধানমন্ত্রী। আমি আর চাই না, একটা সময় এসে বিরতি দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি, যেনো তরুণ প্রজন্মের জন্য জায়গা করে দেওয়া যেতে পারে। এরপরে সংবাদ সম্মেলনেও তিনি এই ইচ্ছার কথা জানান।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা বিরোধী দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবার জীবন দেন। বিদেশে অবস্থান করায় বঙ্গবন্ধু দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা প্রাণে বেঁচে যান। দীর্ঘ নির্বাসনের পর ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফেরেন শেখ হাসিনা। ওই বছর ১৫ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে তার অনুপস্থিতিতেই শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। দেশে ফেরার পর থেকে শেখ হাসিনা টানা ৩৮ বছর সফলতার সঙ্গে নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন। তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ টানা তিন বারসহ মোট চার বার রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসে। চার বাররের মতো তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া তিনি তিন বার সংসদে বিরোধী দলের নেতাও ছিলেন।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক ওই নেতারা আরও জানান, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর আওয়ামী লীগ ভেঙে যায়। দলের মধ্যে সৃষ্টি হয়, ধারা, উপধারা। বহুধা ধারা বিভক্ত আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ করে আজকের অবস্থায় নিয়ে এসেছেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করার পাশাপাশি ক্ষমতায় এসে দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। যোগ্যতা, দক্ষতা, মেধায় শেখ হাসিনার বিকল্প তিনি নিজেই। আওয়ামী লীগের জন্য, দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য শেখ হাসিনার প্রয়োজন।
আগামী ২০-২১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এ সম্মেলনেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুনরায় আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হবেন এটাই সর্বস্তরের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর দাবি।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, আওয়ামী লীগে এ বিষয়ে কোনো চিন্তাই নেই। শেখ হাসিনা তো ক্যানভাস করে আওয়ামী লীগের সভাপতি হননি। আমরা আমাদের প্রয়োজনে ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনাকে সভাপতি করেছি। আজকেও তিনি তার ইচ্ছায় থাকবেন না, থাকবেন আমাদের ইচ্ছায়, আমাদের প্রয়োজনে, আওয়ামী লীগের প্রয়োজনে, দেশ-দেশের ১৬ কোটি মানুষের প্রয়োজনে। বাংলাদেশ এগিয়ে নেওয়ার জন্যই আমরা ওনাকে চাইবো। আমাদের প্রয়োজনে এনেছি, আমাদের প্রয়োজনে এই পদে থাকবেন।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, আওয়ামী লীগ এখন শেখ হাসিনার বিকল্প ভাবছে না। এ ধরনের ভাবনার কোনো প্রয়োজন নেই, সুযোগ নেই। তাই শেখ হাসিনা পরবর্তী দলের নেতৃত্বে কে আসবেন সেটা এখনই ভাবার কোনো প্রয়োজন নেই। আওয়ামী লীগ এ বিষয়ে এখনই কিছু ভাবছে না।
বাংলাদেশ সময়: ০৮২১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৪, ২০১৯
এসকে/এনটি