শুক্রবার (০৩ জানুয়ারি) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের প্রথম যৌথসভায় তিনি এ কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটা সরকার সফলভাবে কাজ করতে পারবে তখনই যখন তার দল সুসংগঠিত থাকে।
তিনি বলেন, ‘এই শক্তিটাই সব থেকে বেশি কাজে লাগে একটা দেশকে উন্নত করতে। যেটা আমি নিজে উপলব্ধি করি। এবং যে কারণে আমি সবসময় সংগঠনের ওপর গুরুত্ব দেই। ’
বিভিন্ন সময় দলের ক্রান্তিলগ্নে তৃণমূল আওয়ামী লীগের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা সবসময় সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়। নিজেদের জীবন পণ করেই তারা এই সংগঠনকে ধরে রেখেছে। ’
তিনি বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ একটা শক্তিশালী সংগঠন। এদেশের রাজনীতিতে কেউ যদি কিছু শিখিয়ে থাকে সেটা আওয়ামী লীগই প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে করে যাচ্ছে। এই ঐতিহ্যটা আমাদের ধরে রাখতে হবে। ’
১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে সপরিবারে হত্যার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘উদ্দেশ্য একটা ছিল যে, এমনভাবে আওয়ামী লীগকে শেষ করে দেওয়া, কোনোদিন যেন এই সংগঠনটা ক্ষমতায় আসতে না পারে। বা রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব নিতে না পারে। ’
সংগ্রামের পথ পাড়ি দিয়ে ৯৬ সালে আওয়ামী লীগের সরকার গঠনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন ‘অনেক ঘাত-প্রতিঘাত, চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আমরা ৯৬ সালে সরকার গঠন করি। বাংলাদেশের জনগণ প্রথম আশার আলো দেখতে পান, তারা প্রথম দেখতে পান যে সরকার জনগণের সেবক। মানুষ প্রথম উপলব্ধি করে সরকার জনগণের সেবা করে। ’
টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের এগারো বছর পূর্ণ হলো একটানা। এখন অন্তত এইটুকু বলতে পারি, মানুষের যে আস্থা-বিশ্বাস, সমর্থন আমরা পেয়েছি, বাংলাদেশের মানুষ যেটা জানেন একমাত্র আওয়ামী লীগ থাকলে উন্নয়ন হয় সে কথা প্রমাণ করতে পেরেছি। ’
‘মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেকে বলেছিল বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে কী হবে, বটমলেস বাস্কেট হবে। আজকে তারা সে কথা বলতে পারবে না। বরং আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমরা যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পেরেছি, সেটা শুধু আমাদের এখানেই না সারা বিশ্বব্যাপী খুবই সমাদৃত এবং স্বীকৃত। ’
বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগকে নানা অপবাদ দেওয়া হয়েছে মন্তব্য করে ৮১ সাল থেকে টানা দলটির সভাপতির দায়িত্বপালন করে আসা শেখ হাসিনা বলেন, ‘কত রকমের অপবাদ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দেওয়া হয়েছে। আজকে আমরা প্রমাণ করেছি, একমাত্র আওয়ামী লীগই এদেশকে উন্নত করতে পারে, সমৃদ্ধ করতে পারে, এগিয়ে নিতে পারে এবং আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এটা আওয়ামী লীগই করেছে। ’
ব্যাপকভাবে মুজিববর্ষ উদযাপন করার কথা জানিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘১০ জানুয়ারি জাতির পিতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস থেকে আমরা কাউন্টডাউন শুরু করে ১৭ মার্চ জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আমরা মুজিববর্ষ শুরু করবো। বছরব্যাপী সারাদেশে অনুষ্ঠান করবো। ’
মুজিববর্ষকে সামনে রেখে নবউদ্যমে সামনে এগিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আমরা আবার নবউদ্যমে জাতির পিতার দেওয়া এই স্বাধীনতাকে-বাংলাদেশকে আরও উন্নত করবো, স্বাধীনতাকে আমরা আরও অর্থবহ করবো। ’
‘যেন বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বে মর্যাদা নিয়ে চলতে পারে। এখন যে মর্যাদা পেয়েছে এর চেয়ে আরও বেশি মর্যাদা নিয়ে আরও উন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ যেন গড়ে উঠতে পারে সেটাই আমাদের লক্ষ্য। সে লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করে যাবো। ’
বক্তব্যের শুরুতে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রয়াত সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের কথা স্মরণ করেন। এ যৌথসভা সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের প্রতি উৎসর্গ করা হয়।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে যৌথসভায় দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের সব সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে এ সভা শুরু হয়ে কিছুক্ষণ চলার পর মূলতবি ঘোষণা করা হয়।
সভা শেষে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বাংলানিউজকে বলেন, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের প্রথম যৌথসভা শনিবার (০৪ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টায় পর্যন্ত মূলতবি করা হয়েছে। মূলতবি সভা আগামীকাল ৬টায় গণভবনে শুরু হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১১০৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৩, ২০২০/আপডেট: ১২৪৫ ঘণ্টা
এমইউএম/জেডএস