বাহরাইন ঘুরে: বাহরাইনে বাংলাদেশিদের বিনিয়োগের অবারিত সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন ইউনিভার্সিটি অব বাহরাইনের ইসলামিক ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ওমর ফারুক। আর এই বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নার্সিং ইনস্টিটিউট বা গার্মেন্টস আউটলেটের সম্ভাবনাই উজ্জ্বল বলে মনে হয়েছে অভিজ্ঞ এই শিক্ষকের কাছে।
বাংলাদেশি হলেও তিনি বাহরাইনে এসেছেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে। সেখানকার আপার আইওয়া ইউনিভার্সিটিসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়িয়েছেন ২৭ বছর। বাহরাইনে এসে এর আগে রয়েল ইউনিভার্সিটি অব উইমেন এ পালন করেছেন ফ্যাকাল্টি অব বিজনেস ডিন এর দায়িত্ব। পড়িয়েছেন বাহরাইন ইনস্টিটউট অব ব্যাংকিং অ্যান্ড ফিন্যান্স ও সেন্টার ফর ইসলামিক ফিন্যান্সে।
তাই আন্তমহাদেশীয় শিক্ষার ধরন ও চর্চা ছাড়াও সমসাময়িক বাণিজ্য চিন্তাও বেশ সাবলীলভাবে ধরা দেয় তার অভিজ্ঞ বিশ্লেষণে।
মানামার হোটেল ওরিয়েন্টাল প্যালেসে বসে তাই বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপে সাধ ও সাধ্যের মিশেলে বাংলাদেশিদের সামনে অন্তহীন এক সম্ভাবনার দুয়ার মেলে ধরেন তিনি।
দৃঢ় প্রত্যয়ে বলেন, বাহরাইনে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নার্সিং ইনস্টিটউট হতে পারতো। এখানে ফিলিপিন ও ইন্ডিয়ার মেডিকেল ইনস্টিটিউট আছে। অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে ইন্ডিয়ান মালিকানায়। বাংলাদেশিদেরও এখানে অনেক পণ্য রফতানি ও বিনিয়োগের সুযোগ আছে।
বিনিয়োগের প্রেক্ষাপট আর একটু খোলাসা করে অধ্যাপক ওমর ফারুক বলেন, গার্মেন্টস সেক্টরে বাংলাদেশ আছে রিটেইল চেনগুলোর সঙ্গে। ফলে বাংলাদেশের ভাগে মুনাফা জমছে কম। ২০ ডলারের জিন্সে পাচ্ছে মাত্র এক কি দুই ডলার। বাকিটা তুলে দিতে হচ্ছে অন্যের হাতে। তাই এখানে গার্মেন্টস রিলেটেড আউটলেট হতে পারে। এক্ষেত্রে উদ্যোগটা যথাযথ হওয়া জরুরি।
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে জন্ম নেওয়া এই শিক্ষাবিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে উচ্চ শিক্ষা শুরু করলেও পরবর্তীতে ব্যাচেলর, মাস্টার্স ও পিএইডি ডিগ্রি অর্জন করেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে। তারপর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার প্রদীপ হাতে কাটিয়ে দেন ২৭ বছর। গত সেপ্টেম্বর থেকে পড়াচ্ছেন ইউনিভার্সিটি অব বাহরাইনে।
এতো দীর্ঘ সময় দেশের বাইরে থাকলেও দেশের পরিস্থিতি বেশ ভালোই খেয়ালে আছে তার।
বাংলাদেশের সঙ্গে বাহরাইন বা মার্কিন মুলুকের শিক্ষা ব্যবস্থার তুলনামূলক প্রসঙ্গ আসতেই তাই বলেন, বাংলাদেশে তো সরষেতেই ভূত। এমন কোথাও আছে কি না জানি না যেখানে ছাত্ররা শিক্ষকের গায়ে হাত। ভিসিকে আটকে রাখে। অথচ ইতিহাসের পজিটিভ সাইড হলো ছাত্রসমাজের গৌরব ও ঐতিহ্য। তাই ছাত্র রাজনীতিতে যে দুর্বৃত্তায়ন তাকে ডিফেন্ড করার কোনো সুযোগ নেই।
এমন মন্তব্যের সঙ্গে প্রত্যাশার পারদ চড়িয়ে তিনি জুড়ে দেন, এসব থেকে মুক্ত হতে পারলে বাংলাদেশের অনেক দূর এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ আছে।
এখানেও যে একটি শিক্ষিত শ্রেণি আছে তা বাংলাদেশের লোক জানে না।
অধ্যাপক ওমর ফারুক জানান, ইউনিভার্সিটি অব বাহরাইনে ইকোনোমিক অ্যান্ড ফিন্যান্স বিভাগে শিক্ষার্থী সংখ্যা দুই হাজার। আর গোটা ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী সংখ্যা ২২ হাজার। শিক্ষক আছেন সাতশ’ জন। এখানে বাইরের শিক্ষার্থী কম। আর স্থানীয় শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই নারী।
নারী শিক্ষায় বাহরাইন অনেক এগিয়ে জানিয়ে তিনি বলেন, এখানে ছেলেরা সিরিয়াস না। মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে বাহরাইনের নারীরাই সবচেয়ে এগিয়ে আছে শিক্ষায়।
ওমর ফারুক বলেন, মানের দিক দিয়ে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাহরাইন কিছুটা পিছিয়ে আছে। অনেক রিসোর্স থাকলেও পারস্য উপসাগরের এই দ্বীপরাষ্ট্র শিক্ষায় তেমন ডেভেলপ করতে পারেনি। তবে শিক্ষার মান যাই হোক, নেতৃস্থানে আছে ইউনিভার্সিটি অব বাহরাইন।
তিনি জানান, বাহরাইনে ইউনিভার্সিটির সংখ্যা ডজনখানেক। আছে মেডিকেল স্কুল। এরাবিয়ান গালফ স্কুল। রয়েল ইউনিভার্সিটি বেশ মডার্ন। তবে বেশ পুরনো প্রতিষ্ঠান। অনেক দিনের ঐতিহ্য আছে।
বাহরাইনে আসার পেছনে বিশেষ কোনো কারণ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমেরিকা দেখার পর একটু দুনিয়া দেখতে ইচ্ছা হলো। এখানে বেশ ভালো লাগছে।
ইসলামিক ফিন্যান্স নিয়ে কাজ করতে চেয়েছেন স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমেরিকাতে কিছু অবদান রাখার সুযোগ আমার হয়েছে। আর এখানে নতুন বিভাগ খোলা হয়েছে। তাই নতুন ফিল্ড, চ্যালেঞ্জটাও বড়। তবে অনেক দিক থেকে কনট্রিবিউট করার সুযোগ আছে।
মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটা দেশেই ভালো কিছু ইউনিভার্সিটি আছে জানিয়ে তিনি বলেন, সৌদি আরবের বেশ ক’টি ইউনিভার্সিটি মানসম্পন্ন। সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার ইত্যাদি দেশে অনেক নামকরা পশ্চিমা প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাস আছে। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানে লোকাল পার্টিসিপেশন খুব কম।
ফিন্যান্স ছাড়াও একাত্তরের জেনোসাইড এবং রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল বিষয়ে ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে অধ্যাপক ওমর ফারুকের। এসব নিয়ে তার চিন্তাতেও আছে নিজস্বতার ঢং।
তিনি বলেন, বিশ্বের বেশ কয়েকটা ভার্সিটিতে জেনোসাইডের ওপর ডিগ্রি দেওয়া হয়। কিন্তু বাংলাদেশের কোথাও এমন ডিগ্রির সুযোগ নাই। ২০০১ সালের আগ পর্যন্ত ইন্টারনেটে সার্চ দিলে যা আসতো তাতে মনে হতো, মুক্তিযুদ্ধে বুঝি কেবল হিন্দুরা মারা গেছে। তাই আমি জেনোসাইড নিয়ে ওয়েব পেজ ডেভেলপ করেছি।
রবি ঠাকুর ও নজরুল উভয় নিয়েই এগুনো দরকার বলে অভিমত দিয়ে তিনি বলেন, দু’জনই বাংলার সম্পদ। কিন্তু একজনের ভক্ত অন্যদের দেখতে পারে না। এভাবে কোন পক্ষের অবহেলা খারাপ লাগে। নজরুল-রবীন্দ্রনাথকে নিয়েই এগুতে পারলে ভালো হয়।
অধ্যাপনার পাশাপাশি বাংলাদেশ স্কুল বাহরাইনের স্ট্রাস্টি বোর্ডেরও মেম্বার অধ্যাপক ওমর ফারুক। বড় মেয়ে নাওয়ার ফারুকি গালফ উইকলির অ্যাসিসট্যান্ট এডিটর।
বাংলাদেশে আসার পরিকল্পনা আছে কি না জানতে চাইলে বলেন, ডিসিশন নেইনি। তবে সম্ভাবনা কম। আর ক’বছর পর তো রিটায়ার্ডই হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০১৪