মানামা: বার্থ সার্টিফিকেটের সার্ভার বিকল থাকায় দেশে ও বিদেশে ডিজিটাল পাসপোর্ট কার্যক্রম অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছে। যাদের বার্থ সার্টিফিকেট (অনলাইনে) অথবা জাতীয় পরিচয়পত্র আছে কেবল তাদেরই ডিজিটাল পাসপোর্টের আবেদন জমা নেওয়া হচ্ছে।
বাহরাইনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছে, গত ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে এ অবস্থা চলছে।
এতে একদিকে যেমন হাজারো পাসপোর্ট প্রত্যাশী চরম বিড়ম্বনায় পড়েছে, তেমনি সময় নষ্টের কারণে নভেম্বরের মধ্যে সবার জন্য ডিজিটাল পাসপোর্ট কার্যক্রম পড়েছে চরম বিড়ম্বনায়।
বাহরাইনে ডিজিটাল পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে হয় অনলাইনে। স্বল্প শিক্ষিত ও সাধারণ শ্রমিকদের আবেদনের সুবিধার্থে বাহরাইনের যে কোন বাঙালি ইন্টারনেট দোকানে অনলাইনে আবেদন করে টোকেন সংগ্রহ করতে হয়। দূতাবাসের ব্যবস্হাপনায় নির্ভুল আবেদন ও টোকেন প্রদানের জন্য কিছু সংখ্যক ইন্টারনেট দোকানিকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
প্রবাসীদের অভিযোগ, সার্ভার বিকল থাকায় তারা ১০ দিন আগে অনলাইনে আবেদন করেও এখনো টোকেন পাননি।
মানামা বাঙালি গলির লিন্নাস ট্রাভেলস এর ফয়েজ আহমেদ জানান, বার্থ সার্টিফিকেট সার্ভার বিকল থাকায় গত ৯ দিনে তাদের কাছে ২০০টির ও বেশী পাসপোর্ট জমা হয়েছে। প্রবাসীরা টোকেনের জন্য প্রতিদিন ফোন করলেও তারা কোন সদুত্তর দিতে পারছেন না ।
গুদাইবিয়ার জাফর ইন্টারনেটের মাহমুদুল আমিন জানান, কিছু কোম্পানি প্রবাসীদের পাসপোর্ট তাদের জিন্মায় রাখে। ডিজিটাল পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে অনেক প্রবাসী নির্ধারিত সময়ের কথা বলে কোম্পানি থেকে তাদের পুরনো পাসপোর্ট নিয়ে আসে। এক্ষেত্রে সঠিক সময়ে পাসপোর্ট ফেরত দিতে না পারলে তারা সমস্যায় পড়বেন। এরইমধ্যে কিছু ব্যবসায়ী পাসপোর্ট ফেরতও নিয়ে গেছেন।
সালমাবাদের ইন্টারনেট দোকানি রফিকুল ইসলাম আঁকন বলেন, পাসপোর্টের জন্য অনলাইনে ফরম রেজিস্ট্রেশন করার ১৫ দিনের মধ্যে ফিঙ্গার, ছবি ও ডিজিটাল স্বাক্ষর না নেয়া হলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যায়। তাই এর দ্রুত সমাধান অত্যন্ত জরুরি।
বাহরাইনস্হ বাংলাদেশ দূতাবাসে ডিজিটাল পাসপোর্টের কাউন্টারে দায়িত্বরত কর্মকর্তা মহসিন কবির বাংলানিউজকে বলেন, যেখানে প্রতিদিন গড়ে ১৫০-২০০ জনের ফিঙ্গার, ছবি ও ডিজিটাল স্বাক্ষর নেয়া হতো, সেখানে এখন গড়ে ২০/২২ টি নেয়া হচ্ছে। শুধু যাদের বার্থ সার্টিফিকেট অথবা জাতীয় পরিচয়পত্র আছে তাদের ডিজিটাল পাসপোর্টের আবেদন নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বেশিরভাগ লোকেরই বার্থ সার্টিফিকেট/ জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় আমরা তাদের আবেদন নিতে পারছি না। খুব শিঘ্রই যদি এটি সচল না হয় তাহলে নভেম্বরের মধ্যে সব প্রবাসীর জন্য ডিজিটাল পাসপোর্ট নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ছে।
মহসিন কবির নামে অপর এক প্রবাসী বলেন, এ ব্যাপারে আমরা স্হানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের বার্থ অ্যান্ড ডেথ রেজিস্ট্রার প্রজেক্ট এর লিয়াজোঁ অফিসার মল্লিক সেলিম রেজার সাথে যোগাযোগ করেছি। তিনি রোববারের (১৫ ফেব্রুয়ারি) মধ্যে সার্ভার সচল হবার কথা জানালেও এখনো পর্যন্ত তা চালু হয়নি।
এমন পরিস্থিতিতে শরিফুল ইসলাম নামে বেসরকারি কোম্পানিতে কর্মরত এক প্রবাসী প্রশ্ন তোলেন, দেশে এতো দক্ষ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার থাকতে বার্থ সার্টিফিকেটের মত গুরুত্বপূর্ণ একটি জাতীয় সার্ভার কিভাবে এতোদিন বিকল থাকে?
এ প্রসঙ্গে বাহরাইনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের মিনিস্টার মেহেদী হাসান বাংলানিউজকে বলেন, বার্থ সার্টিফিকেট সার্ভার বিকল থাকায় শুধু বাহরাইনে নয়,
বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের সব দূতাবাস, এমনকি বাংলাদেশেও ডিজিটাল পাসপোর্ট কার্যক্রম চালানো সম্ভব হচ্ছে না। আমরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে সমস্যার কথা জানিয়েছি। তারা আশ্বস্ত করেছেন- খুব শিগগিরই এটি সচল হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০১৫৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৫