ঢাকা: বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লক্ষ প্রবাসী,বিদেশে তাদের আচার আচরণ ও কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেশ ও জাতির ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে, লাল সবুজের পতাকাকে গৌরবের আসনে প্রতিষ্ঠিত করে।
প্রবাসীরা তাদের মূল্যবান রেমিট্যান্স প্রেরণ করে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছেন, এজন্য তাদেরকে অনেকে ‘রেমিট্যান্স ফাইটার’ বলেও অভিহিত করে থাকেন।
কিন্তু কিছু সংখ্যক প্রবাসীর অবৈধ,অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে ভূলুন্ঠিত হচ্ছে দেশের ভাবমূর্তি। দীর্ঘদিনের নজরদারিত্বের অভাবে বাহরাইনে বাংলাদেশিদের অপরাধপ্রবৃত্তি উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে।
গত ২২ মার্চ রাস রুমান এলাকার একটি অ্যাপার্টমেন্টে (২০১৩ সালের ২৯শে এপ্রিল) তাহের অন্তজ (৩১) নামে এক স্বদেশীকে পূর্বপরিকল্পিত নৃশংসভাবে হত্যা করার দায়ে সালাম জুলাহাস ও সুজন বাদশা নামে দুই বাংলাদেশিকে মৃত্যুদণ্ড দেয় বাহরাইনের একটি আদালত।
৪ এপ্রিল হামাদ টাউনের হামালা এলাকার তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মালেক মিয়া নামে এক বাংলাদেশিকে রশিদ মৃধা নামে অপরএক বাংলাদেশি ধারালো কাঁচ দিয়ে গলায় আঘাত করে নির্মমভাবে হত্যা করে ।
সাম্প্রতিক সময়ের বাংলাদেশিদের দ্বারা সংগঠিত এ ধরনের কয়েকটি অপরাধ নিয়ে বাহরাইনের সরকার রীতিমত নড়েচড়ে বসেছেন, চিন্তিত বাহরাইনের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং খোদ বাহরাইনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লেফটেন্যান্ট জেনারেল শেখ রাশিদ বিন আবদুল্লা আল খলিফা।
সম্প্রতি বাহরাইনে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত তার সাথে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি বলেন -বাংলাদেশিরা সামান্য বিষয় নিয়ে একে অপরের সাথে মারামারি তথা হত্যার মত জঘন্য অপরাধ করতেও দ্বিধা করেন না, যা বাহরাইনের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে বিনষ্ট করছে। এ ব্যাপারে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন ।
বাহরাইনে বাংলাদেশি অপরাধীরা ভিসার দালালি,চুরি,ডাকাতি,মারামারি, হাইজ্যাক, হত্যা,ধর্ষণ,পতিতা ব্যবসা, চাঁদাবাজি,অবৈধপানীয়,ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে টাকা উদ্ধারের নাটক সাজিয়ে কাউকে জিম্মি, মারপিট,মুক্তিপণ দাবি,মাদক পাচার আর অবৈধ অনুপ্রবেশ ছাড়াও মদ খেয়ে মাতলামি, প্রকাশ্যে জুয়া খেলা, এমনকি ছিনতাইয়ের মতো ছিঁচকে অপরাধে জড়িত।
অপরাধীদের বেশিরভাগ অবৈধ হবার কারণে কোন ঘটনার পর তাদেরকে খুঁজে বের করা দুষ্কর । মাঝে মাঝে মধ্যম পর্যায়ের দু একজন আটক হলে ও অপরাধীদের সিন্ডিকেট তাদের উদ্ধার করে নিয়ে আসে এবং গডফাদারেরা বরাবরই থেকে যায় অধরা।
মূলত যারা দালালের খপ্পরে পড়ে উচ্চ মূল্যে ফ্রি ভিসা কিনে বাহরাইন আসে তাদের অধিকাংশই এখানে এসে মালিক খুঁজে পায় না অথবা ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর (দালালেরমাধ্যমে উচ্চ মূল্যে) নবায়ন না করে অবৈধ হয়ে পড়ে।
অন্য দেশের শ্রমিকেরা বাহরাইনে বিনাখরচে ভিসা পেলেও বাংলাদেশিরা দালালের মাধ্যমে উচ্চ মূল্যে ভিসা ক্রয় করে আসে ।
এদিকে অবৈধ শ্রমিকদের কাজে পাওয়া গেলে নিয়োগকর্তাকেই মোটা অঙ্কের জরিমানার বিধানের কারণে বাহরাইনে অবৈধদের এখন আর কেউ কাজে নিতে চায় না। তাই কর্মসঙ্কটে পড়ে অনেকে এ পথে জড়িয়ে পড়ে ।
অপরদিকে বাংলাদেশিদের দ্বারা কোন অপরাধ সংগঠিত হলে ভারতীয় সাংবাদিক নিয়ন্ত্রিত স্থানীয় মিডিয়াগুলো তা ফলাও করে প্রচার করে। বাংলাদেশিদের দ্বারা সংঘটিত তুচ্ছ অপরাধও সেখানকার প্রভাবশালী দৈনিকগুলোর হেড লাইন হচ্ছে অহরহ। এ কারনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বাংলাদেশ বাহরাইন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে।
এ ব্যাপারে বাহরাইনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল কে এম মমিনুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন-অপরাধীদের তালিকার জন্য তিনি সাধারন প্রবাসী,সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর কাছে নাম আহ্বান করেছিলেন। কিন্তু কোন সাড়া মেলেনি। তবে দূতাবাসের উদ্যোগে এ ব্যপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন ।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০১৫
আরআই