ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

কারাগারে বসেই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের চাঁদাবাজি-সন্ত্রাস!

ইমরান আলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫১ ঘণ্টা, আগস্ট ৭, ২০১২
কারাগারে বসেই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের চাঁদাবাজি-সন্ত্রাস!

ঢাকা: কারাগারে বসেই চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে শীর্ষ সন্ত্রাসীরা। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ও গাজিপুরের কাশিমপুর কারাগারে প্রায় ৬০ জনের অধিক শীর্ষ সন্ত্রাসী চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে মদদ দিয়ে যাচ্ছে।

কারাগারে বসে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সহযোগীদের দিক নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছে এসব শীর্ষ সন্ত্রাসী। পাশাপাশি  আদালতে হাজিরার দিন সাঙ্গপাঙ্গদের সাথে সরাসরি সাক্ষাৎ করার সুযোগ পাচ্ছে এরা।

রাজধানীর শেওড়াপাড়া এলাকার ঝুট ব্যবসায়ী নূরুল ইসলামকে কাশিমপুর কারাগারে থাকা `কিলার আব্বাস` মোবাইল ফোনের মাধ্যমে হত্যার নির্দেশ দিয়েছে মর্মে খবরে প্রশাসনে তোলপাড় হচ্ছে।

তবে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার এম সোহায়েল বাংলানিউজকে জানান, কারাগারে বসে সন্ত্রাসীরা চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধাধের সাথে সম্পৃক্ত হচ্ছে মর্মে অভিযোগ তাদের কাছেও রয়েছে। বিষয়টি তারা খতিয়ে দেখছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ও গাজিপুরে কাশিপুমপুর কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীদের মধ্যে রয়েছে: সুইডেন আসলাম, বিকাশ কুমার বিশ্বাস, সানজিদুল ইসলাম ইমন, ভিপি হেলাল, আরমান, শহিদুল ইসলাম ঈদুল, `বোমা মোক্তার`, সবুর, ইসহাক সরকার, নাঈম আহমেদ টিটন, `পিচ্চি হেলাল`, `ফ্রিডম সোহেল`, রাকিবুজ্জামান, জোসেফ, আরশাদ, `হাতকাটা বক্কর`, নাঈমুল হোসেন ওরফে তাজ, `লম্বু সেলিম` ও ইব্রাহিম ও `কিলার আব্বাস` প্রমুখ।

এদের মধ্যে `বোমা মোক্তার` সর্বাধিক ৪৫, ইসহাক ২০, ইমন ও সবুর ১৬, জোসেফ ১৫, মাকসা ১৪, `সুইডেন আসলাম `ও ইব্রাহিম ১৩, হাবিবুর রহমান ও আরশাদ ১২ মামলার আসামি।

সূত্রে জানা যায়, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ও গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে বর্তমানে প্রায় ষাটজনেরও বেশি শীর্ষ সন্ত্রাসী আটক রয়েছে। কারাগারে থাকা এসব সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় প্রায় তিন শতাধিক মামলা রয়েছে। মামলাগুলো ঢাকা সিএমএম ও ঢাকা মহানগর দায়রা জজ এবং ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন। এসব মামলার কার্যক্রম চলাকালে প্রায়ই ওই সন্ত্রাসীদের আদালতে আনা হলে আদালতে হাজির হয় তাদের সাঙ্গ-পাঙ্গরা। সেখানে পুলিশকে উৎকোচ দিয়ে সহজেই সাঙ্গপাঙ্গদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পেয়ে যায় এরা।

আদালত সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মামলায় আদালতে কোনো কার্যক্রমই হয় না। হয় শুধু হাজিরা । তাদের মামলায় ভয়ে কেউ সাক্ষীও হয় না। পাবলিক সাক্ষী আসেই না। বছরের পর বছর সাক্ষ্যগহণ ছাড়াই মামলাগুলো ঝুলে থাকে। আসামিপক্ষ থেকেও মামলা দ্রত নিষ্পত্তির কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয় না। জামিনেরও চেষ্টা করে না এরা। কারাগারে থাকাটাই নিরাপদ মনে করে ওই সকল ভয়ংকর শীর্ষ সন্ত্রাসী।

সূত্র আরো জানায়, সন্ত্রাসীদের মামলায় সাক্ষী না আসায় আদালতের কার্যক্রমের আগে-পরে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সাঙ্গ-পাঙ্গদের ঘন্টার পর ঘন্টা দিক  আড্ডা চলে। এ সময় সাঙ্গ-পাঙ্গরা প্রয়োনীয় দিক নির্দেশনা পায়। দায়িত্বরত কিছু অর্থলোভী পুলিশ সদস্য ও আদালতের কিছু পেশকার, পিয়ন, সাঁটলিপিকার অবৈধভাবে সাঙ্গপাঙ্গদের সঙ্গে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের অবাধ আড্ডার সুযোগ করে দেন। শুধু আদালতে নয়, সিএমএম আদালতের হাজতখানায়ও এধরনের সুযোগ দেওয়া হয় বলে জোরালো অভিযোগ রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাঙ্গ-পাঙ্গরা আদালতে এসে তাদের গুরুদের কাছ থেকে নিয়মিত দিক নির্দশনা পেয়ে রাজধানীসহ সারাদেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। গত ১১ জুলাই শীর্ষ সন্ত্রাসী আরমানকে মালিবাগের ফোর মার্ডার মামলায় ঢাকার এক নম্বর দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। সেদিন সাক্ষী না আসায় মামলাটির কোনো কার্যক্রম হয়নি।

সকাল সাড়ে ১১টার মধ্যে তার হাজিরার কার্যক্রম শেষ হলেও ওই আদালতে সাঁটলিপিকারের কক্ষে কয়েক ঘন্টা সময় আরমান তার সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে আড্ডা দিয়েছে বলে জানা যায় গেছে। দায়িত্বরত পুলিশ এদের ওই আড্ডা নির্বিঘ্ন রাখতে দরজায় দাঁড়িয়ে পাহারা দিয়ে গেছেন।

সাঁটলিপিকরের রুমে তাকে মোবাইল ফোনেও কথা বলতে দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী। এর দিনকয় আগে সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমন, `কিলার আব্বাস`, ইয়াসিন খান পালাশ ওরফে `কাইলা পলাশ` আদালতে হাজিরা দিতে এসে তাদের সাঙ্গ-পাঙ্গদের নিয়ে আড্ডা দিয়েছে।

 কারাগারে ও খোদ আদালত প্রাঙ্গণে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের এ ধরনের সুযোগ করে দেওয়ার কারণে এরা এখন বাইরে থাকার চেয়ে কারাগারে থাকাটাই নিরাপদ ও সুবিধাজনক বলে মনে করছে। শেওড়াপাড়ার ঝুট ব্যবসায়ীকে কারাগারে থাকা `কিলার আব্বাস` হত্যার নির্দেশ দেওয়ার পর প্রশাসনে আবারও তোলপাড় চলছে। প্রশাসনের অনেকেই মনে করছেন কারাগারে থেকে নানা সুযোগ করে নিয়ে এরাই রাজধানীর আন্ডার ওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণ করছে।

র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার এম সোহায়েল বাংলানিউজকে বলেন, ``কিছু কিছু সন্ত্রাসী কারাগারে বসে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছে। একজন দাগী সন্ত্রাসীকে আদালত থেকে শুরু করে জেলখানা পর্যন্ত কঠোর নজরদারির মধ্যে রাখা উচিৎ। কিন্তু এরপরও অনেকেই সুযোগ পাচ্ছে। আমাদের গোয়েন্দা ইউনিট এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে। ``

এ ব্যাপারে ডিসি প্রসিকিউশন আনিছুর রহমান সন্ত্রাসীদের অবৈধ সুযোগ দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বাংলানিউজকে বলেন, ``শীর্ষ সন্ত্রাসীদের যখন কারাগার থেকে নিয়ে আসা হয়, তখন তাদের সঙ্গে আলাদা অস্ত্রধারী ফোর্স থাকে। আদালতে আসার পর তাদের মনিটরিংয়ে থাকেন সিনিয়র অফিসাররা। তারা যেন কোনো ধরনের অবৈধ সুযোগ নিতে না পারে সে ব্যাপারে প্রস্তুতি নেওয়া থাকে। আদালতের বিচারিক কার্যক্রম শেষ হলে পুনরায় কড়া নিরাপত্তায় কারাগারে পাঠানো হয়। আদালতে এসে এ ধরনের কর্মকাণ্ড করার কোনো সুযোগ নেই। ``

বাংলাদেশ সময়: ১২৪৩ ঘণ্টা, আগস্ট ০৭, ২০১২
আইএ/এআর/সম্পাদনা: নূরনবী সিদ্দিক সুইন, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর;  জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর [email protected]

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বাংলানিউজ স্পেশাল এর সর্বশেষ