ঢাকা, শুক্রবার, ৩০ মাঘ ১৪৩১, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৪ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার নিয়ে এখনই মন্তব্য করতে চায় না বিএনপি

তানভীর আহমেদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০১২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৫
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার নিয়ে এখনই মন্তব্য করতে চায় না বিএনপি

ঢাকা: নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন যেসব সুপারিশ জমা দিয়েছে, সেগুলোর পক্ষে-বিপক্ষে এখনই কোনো মন্তব্য করতে রাজি নয় বিএনপি।

দলটির শীর্ষ নেতারা বলছেন, শুনেছি সুপারিশ দেওয়া হয়েছে।

তবে সেখানে কী আছে, তা আমরা অনুষ্ঠানিকভাবে জানি না। তাই এখনই মন্তব্যের সময় নয়।

শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রব্যবস্থা সংস্কারে গুরুত্ব দিচ্ছে। এই সংস্কারের জন্য ছয়টি সংস্কার কমিশনও গঠন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ছয়টি সংস্কার কমিশন পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। কমিশনগুলোর দেওয়া সুপারিশ নিয়ে বিশ্লেষকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
সৃষ্টি হয়েছে।

জানা গেছে, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারে প্রায় দেড়শটি সুপারিশ করেছে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। গত ১৫ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন জমা দেনমকমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার। এতে ১৬টি ক্ষেত্রে প্রায় ১৫০টি সুপারিশ দেওয়া হয়েছে।

সংস্কার প্রস্তাবের উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো হলো—

১. দুই বারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হওয়া যাবে না।
২. বিরোধী দলের পক্ষ থেকে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার দিতে হবে।
৩. রাষ্ট্রপতি হবেন নির্দলীয়।
৪. তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় এবং স্থানীয় নির্বাচন দেওয়া।
৫. ২০ জন সদস্য নিয়ে গঠিত হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার।
৬. জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন হবে।
৭. দুইবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর যেন কেউ রাষ্ট্রপতি না হন।
৮.একই সঙ্গে কেউ যেন প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা এবং দলীয় প্রধান না হন।
৯.সংসদের উচ্চকক্ষ হবে সংখ্যানুপাতিক ভিত্তিতে।
১০.উচ্চকক্ষের অর্ধেক সদস্য হবেন দলীয়, বাকি অর্ধেক হবেন নির্দলীয়। নির্দলীয় সদস্যদেরও রাজনৈতিক ১১.দলগুলোই মনোনয়ন দেবে। কিন্তু সেখানে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব থাকবে।
১২.সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব নির্ধারণ হবে ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে।
১৩.সংসদের আসন ১০০টি বাড়ানো। এরমধ্যে এক-চতুর্থাংশ নারীদের জন্য সংরক্ষিত করা এবং এগুলো ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে নির্বাচন করা, যার মাধ্যমে নারীরা সরাসরি নির্বাচিত হবেন।
১৪.দল নিরপেক্ষ, সৎ, যোগ্য এবং সুনামসম্পন্ন ব্যক্তি যাতে রাষ্ট্রপতি হতে পারেন, সেজন্য নির্দলীয় রাষ্ট্রপতি সুপারিশ করা হয়েছে। একটি বৃহত্তর নির্বাচকমণ্ডলীর দ্বারা রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। এই নির্বাচকমণ্ডলীতে থাকবেন সংসদ সদস্য এবং স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা।

এসব প্রস্তাবের বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে কেবলমাত্র প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। এটা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার যাচাই-বাছাই করে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে পরবর্তী সিদ্ধান্তে উপনীত হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেছেন, সংস্কার কমিশন একটি সম্ভাব্য প্রস্তাব প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করেছে। এখন চলমান অন্তর্বর্তী সরকার এটিকে যাচাই-বাছাই করে  রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত করবে। সুতরাং এটি একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, যা নিয়ে মন্তব্য করার সময় আসেনি।

দলটির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, কী কী বিষয়ে সংস্কার প্রস্তাব করা হয়েছে, সে বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো মন্তব্য চাওয়া হয়নি। সুতরাং বিক্ষিপ্তভাবে মন্তব্যের কোনো সুযোগ নেই।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, নির্বাচন সংস্কার কমিশন কী প্রস্তাব দিয়েছে, তা দেখার সুযোগ এখনও হয়নি। সেখানে মন্তব্যের কিছুই নেই।

সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন পরবর্তীতে দেশের সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে গণআন্দোলনে রূপ নেয়। রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের এক পর্যায়ে গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের টানা পনেরো বছরের স্বৈরাচারী শাসনামলের পতন ঘটে।

এরপর ৮ আগস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। তাদের অভীষ্ট লক্ষ্য এখন রাষ্ট্রব্যবস্থার সংস্কার।

এ লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার বেশ কয়েকটি কমিশন গঠন করে। রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে কেউ যাতে আর স্বৈরাচার হয়ে উঠতে না পারেন, রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে কেউ যেন আর শেখ হাসিনার মতো ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠতে না পারেন, এমন অনেকগুলো কারণেই সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য কয়েকটি কমিটি করার পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মতবিনিময় করছে।

রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য কতদিন সময় লাগবে, তা নিয়ে অবশ্য বিএনপির সঙ্গে অন্যান্য দলের কিছুটা মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে। বিএনপি সংস্কারের পাশাপাশি নির্বাচনের রোডম্যাপ চায়। যেটা অনেকে আবার চায় না। বিশেষ করে জামায়াতের বক্তব্য হলো, রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য সরকারকে যৌক্তিক সময় দেওয়া উচিত, কোনো সময়সীমা বেঁধে দেওয়া ঠিক হবে না।

বাংলাদেশ সময়: ০০১৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৫
টিএ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।