ঢাকা: মাঠ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) কাজের মূল্যায়নের ভিত্তিতে র্যাংকিংয়ের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ডিসিদের পাঁচ শতাধিক কাজের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোকে মূল্যায়নে সূচক নির্ধারণের প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বলছে, ডিসিদের মূল্যায়নে তারা সূচক নির্ধারণের প্রাথমিক কাজ শুরু করেছেন। এজন্য একটি নীতিমালা দরকার। সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে কোনো নির্দেশনা এলে সেগুলো প্রাধান্য দিয়ে নীতিমালা করবেন।
চলতি বছর ডিসি সম্মেলনের সময় বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশেনের সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ডিসিদের র্যাংকিংয়ের কথা বলেন। বিষয়টি আমলে নিয়ে কাজ করছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, এটা (ডিসি র্যাংকিং) নিয়ে আমরা কাজ করছি। র্যাংকিংয়ের জন্য কী কী ইন্ডিকেটর (সূচক) সেট করা হবে সেটা নিয়ে হোমওয়ার্ক করছি। এটা একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। প্রধান উপদেষ্টা স্যার বলেছেন, আমরা কাজ করছি।
কীভাবে র্যাংকিং করে মূল্যায়ন করা হবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটা চিন্তা হয়েছে যে আমরা ২০-৩০টি ইন্ডিকেটর সেট করবো। আরকেটা চিন্তা করছি যে ৫০টি ইন্ডিকেটর সেট করবো। ২০-৩০টি ইন্ডিকেটর সেট করার যে চিন্তা, সেখানে ওদের (ডিসি) কাছ থেকে কোনো তথ্য নেব না। সিস্টেম থেকে তথ্য নেব। যেমন- ভূমি উন্নয়ন কর আদায়, খাদ্য শস্য সংগ্রহ- এমন বিষয়গুলো সিস্টেমে বা ওয়েবসাইটে ও মন্ত্রণালয়ে পাওয়া যাবে। আবার চিন্তা করছি, এপিএ (বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি) থেকে মূল্যায়ন। তাহলে জেলা প্রশাসকের এপিএ এমনভাবে সেট করবো যেন তার মোট পারফরমেন্স চলে আসে। তখন তিন মাসভিত্তিক রিপোর্ট নেব। এমনি এপিএতে ত্রৈমাসিক একটা মূল্যায়ন করি। তখন হয়তো সেটা করা যাবে।
জনগণ যাতে হয়রানির শিকার না হয় সেটার ওপর জোর দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা- এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওই কর্মকর্তা বলেন, সরকার অনলাইন সেবা দিচ্ছে। কারো বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ ওঠে এটা নেগেটিভ মার্কিং হবে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ, তাকে সঠিক সময়ে অফিসে পাওয়া যাচ্ছে কি না- এক্ষেত্রে এসব বিষয় গুরুত্বপূর্ণ।
সরকারের সঙ্গে মাঠ পর্যায়ে জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণ ও মতামত প্রদানের জন্য ডিসি অফিসে প্রতি বুধবার ১১টা থেকে গণশুনানির আয়োজন করা হয়েছে। এটি প্রত্যেক ডিসির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এর বাইরেও মানুষ আসে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা হচ্ছে, ডিসি অফিসে মানুষ এলে তাদের কথা শুনতে হবে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, খাদ্য উৎপাদন বা ধান উৎপাদনের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিটি জেলার জন্য নির্দিষ্ট টার্গেট দেওয়া থাকে। তার ওপর ভিত্তি করে জাতীয় টার্গেট ঠিক করা হয়। কৃষি মন্ত্রণালয়ের টার্গেট সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসককে অর্জন করতে হয়। জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব হলো, কৃষি অফিসার, ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে নিয়ে কোনো জমি যেন খালি না এটা মনিটরিং করবেন। এটা তার দায়িত্ব। যথাযথভাবে সার, বীজ দিতে পারলে টার্গেট পূরণ হবে। এ টার্গেট প্রতিটি জেলা পূরণ করতে পারলে তখন সে ফুল মার্কস পাবে। ওপর থেকে সিদ্ধান্ত পেলে আমরা কাজ শুরু করবো। তবে এজন্য নীতিমালা তৈরি করতে হবে। না হলে ক্রাইটেরিয়া (মানদণ্ড) ঠিক করা যাবে না।
ডিসিদের মূল্যায়ন ও র্যাংকিংয়ের বিষয় নিয়ে প্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহিদ খান বলেন, র্যাংকিং হতে পারে একটা ভালো পদক্ষেপ, যেটার মধ্য দিয়ে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হবে এবং সবাই ভালো কাজ করার চেষ্টা করবেন। কিন্তু অতীতে এরকম অনেক কিছু চালু করা হয়েছিল, শুদ্ধাচার পুরস্কারও চালু করা হয়েছিল, সেগুলোর কোনো ফল আসেনি। বাংলাদেশের জন্য যেটা দরকার, স্বাধীন সিভিল সার্ভিস, স্বাধীন পুলিশ সার্ভিস, স্বাধীন জুডিশিয়ারি, স্বাধীন কমিশন। তাহলে বাংলাদেশের অনেক সমস্যার সমাধান হবে। যারা কর্মচারী আছেন তাদেরকে আইন মান্য করে, বিধি-বিধান মান্য করে, সংবিধান অনুসরণ করে, সংবিধানের অধীনে কাজ করার চেষ্টা করতে হবে। সেটাই হলো এখন আমাদের আসল কাজ।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০২৫
এমআইএইচ/এজে