ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ চৈত্র ১৪৩১, ০১ এপ্রিল ২০২৫, ০২ শাওয়াল ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

বিক্ষোভ দমনে গ্রেপ্তার, হত্যা, লাশ লুকানোর নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০২০ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০২৫
বিক্ষোভ দমনে গ্রেপ্তার, হত্যা, লাশ লুকানোর নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা

ঢাকা: জুলাই অভ্যুত্থানের সময় আন্দোলনকারীদের গ্রেপ্তার, হত্যা এমনকি মরদেহ লুকিয়ে ফেলারও নির্দেশ দেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিপ্লবীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সশস্ত্র ক্যাডার ও নিরাপত্তা বাহিনী যে সহিংসতা চালিয়েছে তা সমন্বয়ের ভূমিকায় ছিলেন ক্ষমতাচ্যুত এই প্রধানমন্ত্রী।

বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের (ওএইচসিএইচআর) তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। তৎকালীন সরকারের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার সাক্ষ্য অনুসারে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ওই নির্দেশনা উদ্ধৃত করা হয় প্রতিবেদনে। আর এ ধরনের নির্দেশনাকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডের সঙ্গে স্পষ্টতই সাংঘর্ষিক বলে মন্তব্য করেছে জাতিসংঘের সংস্থাটি।

গত ১২ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ করা এই প্রতিবেদন বাংলা ভাষাভাষী পাঠকদের সহজবোধ্যভাবে বোঝার সুযোগ করে দিতে অনলাইন নিউজপোর্টাল বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম এর সম্পাদকীয় বিভাগ ইংরেজি থেকে হুবহু বাংলায় অনুবাদ করেছে। বাংলায় অনুদিত সেই প্রতিবেদনটি ধারাবাহিকভাবে পাঠকদের কাছে সংবাদ আকারে তুলে ধরা হচ্ছে। আজ থাকছে সেই প্রতিবেদনের দ্বিতীয় পর্ব। এই পর্বে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রীর গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদন অনুসারে, জুলাই-আগস্টে অভ্যুত্থান চলাকালে এক হাজার ৪শর বেশি মানুষ হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই নিরাপত্তা বাহিনীর চালানো সামরিক অস্ত্র ও শটগানের গুলিতে মারা যান। হাজার হাজার ছাত্র-জনতা গুরুতর আহত হয়েছেন। পঙ্গু হয়েছেন অনেকেই। অনেকের দুই চোখ, কারো কারো এক চোখ অন্ধ হয়ে গেছে। ১১ হাজার সাতশর বেশি মানুষকে র‌্যাব ও পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্দোলনজুড়ে শেখ হাসিনা নৃশংসভাবে বিক্ষোভ দমন, হত্যা, গ্রেপ্তার এবং লাশ লুকাতে নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে নির্দেশ দেন। এমনকি আন্দোলনকারীদের কটাক্ষ করে বিভিন্ন মন্তব্যও করেন। এর মধ্যে পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ছাত্রদের সঙ্গে সমঝোতা করতেও নির্দেশনা আসে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের মুখে থাকা সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে।

শুধু রাষ্ট্রীয় বাহিনীই নয়, গুরুতর এই মানবাধিকার লঙ্ঘনে আওয়ামী লীগের সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনীগুলোও ব্যবহার করা হয়েছে। জাতিসংঘের প্রতিবেদন বলছে, রাজনৈতিক নেতৃত্বের পূর্ণজ্ঞাতসারে, সমন্বয় এবং নির্দেশনার ভিত্তিতেই এই নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে। আর সমন্বিতভাবে এসব ঘটনার নেতৃত্ব দিতেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

এ বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ঘটনার সঙ্গে জড়িত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার প্রত্যক্ষ সাক্ষী এবং অন্যান্য অভ্যন্তরীণ সূত্রের থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওএইচসিএইচআর এ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পেরেছে যে, পুলিশ, আধাসামরিক, সামরিক এবং গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সহিংস উপাদানগুলিকে (সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী) ব্যবহার করে একটি সমন্বিত এবং পদ্ধতিগত পন্থায় গুরুতর মানবাধিকারলঙ্ঘন করা হয়েছে। আর রাজনৈতিক নেতৃত্বের পূর্ণজ্ঞাতসারে, সমন্বয় এবং নির্দেশনার ভিত্তিতেই এই নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে। নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থার তৎপরতাগুলো সমন্বিতভাবে করার যুথবদ্ধ প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দিতেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বাস্তবে মাঠপর্যায়ে কী ঘটছে সেই পরিস্থিতি সম্পর্কে বিভিন্ন সূত্র থেকে নিয়মিত প্রতিবেদন পেতেন তারা উভয়ে।

অতিরিক্ত বল প্রয়োগের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্তকর্তাদের সাক্ষ্য অনুসারে, ২১ জুলাই এবং আগস্টের শুরুতে প্রধানমন্ত্রীকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তরফ থেকে প্রতিবেদন সরবরাহ করা হয়, যেখানে বিশেষভাবে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের বিষয়ে উদ্বেগের কথাও ছিল। রাজনৈতিক নেতা এবং পুলিশ ও সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা সম্পর্কে বাস্তব ধারণা নিতে সরাসরি মাঠ পরিস্থিতি পরিদর্শন করেন। এরপর আবার রাজনৈতিক নেতৃত্ব (হাসিনার সরকার) বিজিবি, র‌্যাব, ডিজিএফআই, পুলিশ ও ডিবির জন্য সরাসরি কিছু আদেশ ও নির্দেশনা জারি করে, যার মাধ্যমে তাদের কর্মকাণ্ডের অনুমোদন ও দিকনির্দেশ করা হয়। এসব বাহিনী প্রতিবাদকারী ও সাধারণ নাগরিকদের বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা এবং নির্বিচারে আটকের মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িয়ে পড়ে।

বিক্ষোভকারীদের দমন ও হত্যার বিষয়ে প্রতিবেদনের বিস্তৃত অংশে আরও বলা হয়, সম্পৃক্ত সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাক্ষ্য ও অন্তর্বর্তী সরকারের দেওয়া তথ্য ওএইচসিএইচআরের বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। কেননা, এই নির্বিচার বলপ্রয়োগ ১৮ জুলাই রাতে রাজনৈতিক নেতৃত্ব থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের দেওয়া নির্দেশনার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। পরদিন ১৯ জুলাই এই নির্দেশনা আরও জোরদার করা হয়।

ওএইচসিএইচআরের তথ্য অনুযায়ী, ১৮ জুলাই বিকেলে ও সন্ধ্যায় রামপুরায় বাংলাদেশ টেলিভিশনের সদরদপ্তরে একদল সহিংস বিক্ষোভকারী হামলা চালায়। টিভি স্টেশনে মোতায়েন পুলিশের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি ছিল। ২৮ জন সেখানে হামলা চালিয়েছিল। তারা টিভি চ্যানেলের চত্বরে যানবাহনে ও ভবনের একটি অংশে আগুন লাগিয়ে দেয়। সেসময় টিভির স্টাফরা ভবনের ভেতরে অবস্থান করছিলেন। তাদের জীবনরক্ষা এবং টিভি স্টেশনের নিয়ন্ত্রণ প্রতিপক্ষের হাতে চলে যাওয়া ঠেকানোর জন্য সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পুনঃনিশ্চিত আদেশে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা স্বীকার করেন যে, বিজিবিকে টিভি স্টেশনের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করতে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

প্রতিবেদনে একজন সাবেক সিনিয়র কর্মকর্তার বরাতে বলা হয়, বাংলাদেশ টেলিভিশনে হামলার পর থেকে বিজিবিকে ‘স্ট্রাইক ফোর্স’ হিসেবে ব্যবহার করাহয়। ১৮ জুলাই সন্ধ্যায় তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একটি ‘কোর কমিটি’ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন, যেখানে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন। ওই সভায় অংশ নেওয়াদের মধ্যে একজন ওএইচসিএইচআরকে জানিয়েছেন, বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিজিবি কমান্ডারকে প্রকাশ্যে নির্দেশ দেন, যেন তারা আরও সহজে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করেন।  

সিনিয়র কর্মকর্তাদের সাক্ষ্য অনুসারে, পরদিন ১৯ জুলাই আরেকটি বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নিজেই নিরাপত্তাবাহিনীর কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন বিক্ষোভ দমন করতে প্রয়োজনে বিক্ষোভকারীদের হত্যা করতে। তিনি বিশেষভাবে বলেন, ‘বিক্ষোভের মূল হোতাদের, দাঙ্গাকারীদের গ্রেপ্তার করো, হত্যা করো এবং তাদের মরদেহ লুকিয়ে ফেলো। ’ 

ওএইচসিএইচআরের মতে, এই সাক্ষ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সরকারের মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ১৯ জুলাই সাংবাদিকদের দেওয়া বক্তব্যের সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ, যেখানে তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তা বাহিনীকে দেখামাত্র গুলি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে’। এই ধরনের নির্দেশনা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডের সঙ্গে স্পষ্টতই সাংঘর্ষিক।

তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর ওই নির্দেশনার সারবত্তাও খুঁজে পেয়েছে জাতিসংঘের এই সংস্থাটি। এ বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ওএইচসিএইচআরের তথ্যমতে, প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহারের নির্দেশ পুনর্ব্যক্ত হওয়ার পরপরই এর প্রভাব সরাসরি মাঠ পর্যায়ে দেখা যায়। ১৮ জুলাই যেখানে আনুমানিক ১০০ জন নিহত হয়েছিলেন, সেখানে ১৯ জুলাই একদিনের ব্যবধানে নিহতের সংখ্যা প্রায় তিনশোতে পৌঁছে যায়।

‘এই প্রতিবেদনে উপস্থাপিত সব তথ্যের গভীর বিশ্লেষণের ভিত্তিতে ওএইচসিএইচআর মনে করে যে, ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্টের মধ্যে সাবেক সরকার এবং তার নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থা আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত সহিংস গোষ্ঠীগুলোর সহযোগিতায় পরিকল্পিতভাবে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতন চালিয়েছে। এসব আইন ভঙ্গের ঘটনা রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও নিরাপত্তা খাতের শীর্ষ কর্মকর্তাদের জ্ঞাতসারে, সমন্বয়ে ও নির্দেশনায় ঘটেছে। ’

আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের কী ধরণের অধিকার লঙ্ঘন করেছে সে বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, সাবেক সরকারের মাধ্যমে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের মধ্যে রয়েছে বেঁচে থাকার অধিকার লঙ্ঘন, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার অধিকার লঙ্ঘন, নির্যাতন ও অমানবিক আচরণ থেকে মুক্ত থাকার অধিকার লঙ্ঘন, আটক ব্যক্তিদের প্রতি মানবিক ও মর্যাদাপূর্ণ আচরণের অধিকার লঙ্ঘন, ন্যায়বিচারের অধিকার লঙ্ঘন, গোপনীয়তার অধিকার লঙ্ঘন, মতামত ও প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার লঙ্ঘন, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার লঙ্ঘন, বৈষম্যহীনতার অধিকার লঙ্ঘন, সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যসেবা লাভের অধিকার লঙ্ঘন, শিশুদের অধিকার লঙ্ঘন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে কার্যকর প্রতিকার পাওয়ার অধিকার লঙ্ঘন।  

তবে কাচের মতো নৃশংসতার বিষয়ে স্বচ্ছ প্রমাণ থাকলেও জাতিসংঘের সাক্ষাৎকারে সাবেক কর্মকর্তারা বলছেন ভিন্ন কথা। আবার সেসব কর্মকর্তার ওই মতকে যুক্তি দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছে সংস্থাটি ।  

এই বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ওএইচসিএইচআরের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে কয়েকজন সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দাবি করেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিরাপত্তা বাহিনীকে বলপ্রয়োগ সীমিত রাখতে এবং আইনের মধ্যে থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন, কিন্তু মাঠ পর্যায়ের বাহিনীগুলো তা লঙ্ঘন করে। তবে, এই দাবিগুলো কম বিশ্বাসযোগ্য। ঢাকাসহ সারাদেশে নিরাপত্তা বাহিনী একই ধরনের গুরুতর লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটিয়েছে। বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনী আওয়ামী লীগের অস্ত্রধারী সমর্থকদের নিয়ে সমন্বিত অভিযান চালিয়েছে, যা দীর্ঘ সময় ধরে চলেছে। ওএইচসিএইচআরের মতে, দেশের বিভিন্ন স্থানের সব নিরাপত্তা বাহিনী একইভাবে শীর্ষ নেতৃত্বের আদেশ এবং নির্দেশাবলী পরিকল্পিতভাবে উপেক্ষা করবে এমন সম্ভাবনা খুবই কম। বরং পূর্ববর্তী বছরগুলোতে সরকারের দমনের সময় প্রতিষ্ঠিত ধরন অনুসরণ করে আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে, যদিও ২০২৪ সালের জুলাই এবং আগস্টে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা ছিল নজিরবিহীন। সবচেয়ে গুরুতর লঙ্ঘনগুলোর বেশিরভাগই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অধীনে বিজিবি ও র‌্যাব এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর অধীনে ডিজিএফআই ও এনএসআই-এর মতো অভিজাত, সুপ্রশিক্ষিত এবং শৃঙ্খলাবদ্ধ সংস্থাগুলোর মাধ্যমে সংঘটিত হয়েছে।

১৯ জুলাইয়ের আলোচিত সেই বৈঠক ছাড়াও অন্যান্য বৈঠকেও বিভিন্ন নির্দেশনাও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সেই বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, অন্যান্য বৈঠকেও তিনি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে আন্দোলনকারীদের সরাতে সহিংস পদ্ধতি নিয়ে সিনিয়র নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাক্ষ্য অনুসারে, গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ও ডিজিএফআই-এর মাধ্যমে ছাত্রনেতাদের নির্বিচারে গ্রেপ্তার এবং আটকের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার পরিকল্পনা অনুমোদন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ২৯ জুলাই অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিনি ছাত্রনেতাদের জোরপূর্বক স্বীকারোক্তির ভিডিও প্রকাশ করে জনসংযোগ বিপর্যয় সৃষ্টির জন্য গোয়েন্দা শাখার প্রধানকে (হারুন অর রশীদ) সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন, যদিও ছাত্রদের নির্বিচারে আটক এবং জোরপূর্বক তদন্তের কোনো নির্দেশ তিনি দেননি। ৪ আগস্ট সকালে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের একটি বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন এবং সন্ধ্যায় তার বাসভবনে দ্বিতীয় বৈঠক করেন, যেখানে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং নিরাপত্তা খাতের সবচেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ‘মার্চ টু ঢাকা’ প্রতিহত করতে বলপ্রয়োগের পরিকল্পনায় সম্মত হন।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনটি প্রকাশের পরদিন ১৩ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন বলেন, অস্ত্রের ব্যবহার এবং আহত-নিহতের পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায়, একটা পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র বহুবিস্তৃত (ওয়াইডস্প্রেড) ও পদ্ধতিগতভাবে (সিস্টেমেটিক) একটা জনগোষ্ঠীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তাদের নিশ্চিহ্ন করার জন্য। এটা মানবতাবিরোধী অপরাধের পক্ষে একটা সুস্পষ্ট ও জোরালো প্রমাণ। এই প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার মাধ্যমে একটা এভিডেন্স (প্রমাণ) হিসেবে ট্রাইব্যুনালে আসবে।

তিনি আরও বলেন, যেহেতু জাতিসংঘ বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও সর্বজন গ্রহণযোগ্য একটা সংস্থা, তাই তাদের এ প্রতিবেদনটি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ। কোনো দলের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে প্রতিবেদনটি করা হয়নি। আমাদের (প্রসিকিউশন) সঙ্গেও কথা বলেননি জাতিসংঘের তদন্তকারীরা। তারা অপরাধীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। যেখানে কথা বলা দরকার, সেই জায়গায় কথা বলেছেন। সুতরাং এটা অকাট্য দলিল, প্রমাণ হিসেবে এই আদালতে ব্যবহার করা যাবে।

প্রথম পর্ব
হেলিকপ্টার থেকে গুলি প্রসঙ্গে যা আছে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে

বাংলাদেশ সময়: ০০১৭ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০২৫
ইএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।