ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ চৈত্র ১৪৩১, ০৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৪ শাওয়াল ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে ব্যবহার হয়েছিল যেসব অস্ত্র

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০০৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২, ২০২৫
ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে ব্যবহার হয়েছিল যেসব অস্ত্র

ঢাকা: জুলাই-আগস্টের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অন্তত চৌদ্দশ’র মতো মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে হাজারের অধিক গুলিতে মুত্যু হয়ে থাকতে পরে বলে ধারণা করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের (ওএইচসিএইচআর)।

বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের (ওএইচসিএইচআর) তথ্যানুসন্ধান করেছে।

গত ১২ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ করা এই প্রতিবেদন বাংলা ভাষাভাষী পাঠকদের সহজবোধ্যভাবে বোঝার সুযোগ করে দিতে অনলাইন নিউজপোর্টাল বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম-এর সম্পাদকীয় বিভাগ ইংরেজি থেকে হুবহু বাংলায় অনুবাদ করেছে। বাংলায় অনূদিত প্রতিবেদনটি ধারাবাহিকভাবে পাঠকদের কাছে সংবাদ আকারে তুলে ধরা হচ্ছে। আজ থাকছে সেই প্রতিবেদনের চুতর্থ পর্ব।

আন্দোলনকারীদের মৃত্যু নিয়ে জাতিসংঘের সংস্থাটি ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের তদন্ত বিশ্লেষণ করেছে। সেখানে কোন ধরনের অস্ত্রে মৃত্যু হয়েছে, তা তাদের বিশ্লেষণে উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের তদন্তে ১৩০টি মৃত্যুর বিশ্লেষণ থেকে দেখা গেছে, মোট মৃত্যুর ৭৮ শতাংশই আগ্নেয়াস্ত্রের গুলিতে হয়েছে। ওএইচসিএইচআর অনুমিত এক হাজার ৪০০টি মৃত্যুর মধ্যে গুলিতে মৃত্যু হাজারের বেশি হতে পারে। এসব মৃত্যু সাধারণত রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যবহার করা অস্ত্রের মাধ্যমে ঘটেছে, যা সাধারণ নাগরিকদের কাছে সহজলভ্য নয়।

কেমন রাইফেলের গুলিতে মৃত্যু হয়েছে সে বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মোট মৃত্যুর ৬৬ শতাংশই উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন স্বয়ংক্রিয় ও আধা-স্বয়ংক্রিয় রাইফেলের গুলিতে হয়েছে। বিক্ষোভ দমনে পুলিশও এসব অস্ত্র ব্যবহার করেছে। আরও ১২ শতাংশ মৃত্যু শটগানের গুলিতে হয়েছে। শটগানে এসব প্রাণঘাতী গুলিভর্তি (শিল্প মানদণ্ড অনুসারে ‘নম্বর ৮ ধাতব গুলি’) ছিল। এই অস্ত্র বাংলাদেশ পুলিশ ও আনসার/ভিডিপির সদস্যরাও ব্যবহার করেন। এই তথ্য আরও বড় পরিসরের একটি নির্ভরযোগ্য ও গোপনীয় সূত্রের তথ্যের সঙ্গে মিলে যায়, যা নিশ্চিত করেছে যে, অধিকাংশ মৃত্যু নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যবহৃত অস্ত্রের কারণেই হয়েছে।

‘এই পরিসংখ্যানগুলো ওএইচসিএইচআরের ফরেনসিক চিকিৎসক এবং অস্ত্র বিশেষজ্ঞ দ্বারা সংগৃহীত এবং বিশ্লেষণ করা অন্যান্য তথ্যের সাথে মিলে যায়, যা দেখায় যে, গুলিবিদ্ধদের শরীরে যে গুলি পাওয়া গেছে, তা বাংলাদেশ অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরিতে তৈরি ৭ দশমিক ৬২×৩৯ মিলিমিটার আকারের সামরিক মানের গুলি। ’

এ ছাড়াও নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের ওপর বিশেষ ধরনের বর্মভেদী (আর্মার-পিয়ার্সিং) ৭ দশমিক ৬২ মিলিমিটার ক্যালিবারের গুলি কিছু ঘটনায় ব্যবহার করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

বেসামরিক অস্ত্র নিয়ে জাতিসংঘের এই সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্দোলন চলাকালে যেসব ক্ষেত্রে বেসামরিক লোকেরা আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেন, সেসব ক্ষেত্রে তাদের হাতে পিস্তল, রিভলভার, সাবমেশিন গান, দেশীয় অস্ত্র এবং স্পোর্টিং শটগান দেখা যায়। কিছু ঘটনায়, বিশেষ করে আগস্টের শুরুর দিকে, কিছু ব্যক্তিকে ট্যাকটিক্যাল শটগান ও আধা-স্বয়ংক্রিয় রাইফেল ব্যবহার করতেও দেখা যায়। তবে বেসামরিকদের ব্যবহৃত অস্ত্রের কারণে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল খুবই কম।

আরও পড়ুন>

প্রথম পর্ব

হেলিকপ্টার থেকে গুলি প্রসঙ্গে যা আছে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে

দ্বিতীয় পর্ব
বিক্ষোভ দমনে গ্রেপ্তার, হত্যা, লাশ লুকানোর নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা

তৃতীয় পর্ব
রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সঙ্গে হামলার নেতৃত্বে সশস্ত্র আওয়ামী সমর্থকরা

বাংলাদেশ সময়: ০০০৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ০২, ২০২৫
ইএস/এমজেএফ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।