ঢাকা, বুধবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩২, ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

শাপলা চত্বর হত্যাকাণ্ড-নিরাপদ সড়ক আন্দোলন নিয়ে যা আছে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০২৫
শাপলা চত্বর হত্যাকাণ্ড-নিরাপদ সড়ক আন্দোলন নিয়ে যা আছে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে

ঢাকা: ‘২০২৪ সালের প্রতিবাদগুলো ব্যতিক্রমী। কারণ রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী এবং শাসক দলের সহিংস সমর্থকদের দ্বারা নজিরবিহীন সংখ্যক বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ গুরুতর নির্যাতনের মুখেও আন্দোলনকারীদের জয় হয়।

তবে এগুলো পূর্ববর্তী বহু বছর ধরে প্রতিষ্ঠিত দমন ও বর্জনের একটি ধরন। ’

বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের (ওএইচসিএইচআর) তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে পূর্ববর্তী বছরগুলোর দমনের কয়েকটি উদাহরণও তুলে ধরা হয়েছে। রাজধানীর শাপলা চত্বরে হেফাজতের বিক্ষোভ নিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, একটি উজ্জ্বল উদাহরণ হলো ২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ড।

শুধু হেফাজতের ঘটনাই নয়, প্রতিবেদনে ২০১৮ সালের কোটা আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনসহ বিভিন্ন আন্দোলনে সহিংস আক্রমণ, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, পুলিশের বেআইনি শক্তি প্রয়োগের কথাও বলা হয়েছে।

গত ১২ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ করা এই প্রতিবেদন বাংলা ভাষাভাষী পাঠকদের সহজবোধ্যভাবে বোঝার সুযোগ করে দিতে অনলাইন নিউজপোর্টাল বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম-এর সম্পাদকীয় বিভাগ ইংরেজি থেকে হুবহু বাংলায় অনুবাদ করেছে। বাংলায় অনূদিত প্রতিবেদনটি ধারাবাহিকভাবে পাঠকদের কাছে সংবাদ আকারে তুলে ধরা হচ্ছে। আজ থাকছে সেই প্রতিবেদনের নবম পর্ব।

আওয়ামী লীগ সরকার গত ১৬ বছরে কিভাবে আন্দোলন দমন করতো সে বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, আগের বেশ কয়েকটি ঘটনায় পুলিশ এবং অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনী, সশস্ত্র ও সহিংস আওয়ামী লীগ সমর্থকদের সাথে নিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র, কম প্রাণঘাতী অস্ত্র, গণহারে নির্বিচারে গ্রেপ্তার, নির্যাতন ও দুর্ব্যবহার, সাধারণ নজরদারি, হয়রানি এবং ভয় দেখানোর একটি সমাহার ঘটিয়ে বৃহৎ বিক্ষোভ দমন করেছে। এর একটি উজ্জ্বল উদাহরণ হলো ২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ড । ২০১৮ সালেও কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্র বিক্ষোভ ছাত্রলীগ সমর্থকদের দ্বারা সহিংস আক্রমণ, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, পুলিশের বেআইনি শক্তি প্রয়োগ এবং গণগ্রেপ্তার ও ভয় দেখানোর মাধ্যমে দমন করা হয়।

২০২১, ২০২২ এবং ২০২৩ সালে রাজনৈতিক বিরোধীদল, সুশীল সমাজ এবং পোশাক শ্রমিকদের আরও ধারাবাহিক বিক্ষোভ ও বেআইনি বলপ্রয়োগের মাধ্যমে দমন করা হয়েছিল, যার মধ্যে ছিল বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং গণহারে নির্বিচারে গ্রেপ্তার।

এসব ধরন কেন দিন দিন তীব্র হয়েছে সে বিষয়ে বলা হয়, নিরাপত্তা খাতের রাজনীতিকরণ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সামরিকীকরণ, বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে অপ্রয়োজনীয় বলপ্রয়োগ, প্রাতিষ্ঠানিক দায়মুক্তি এবং ভুক্তভোগীদের প্রতিকারের অভাবের কারণে এই লঙ্ঘনের ধরনগুলো সক্রিয় এবং তীব্রতর হয়েছে, যা নাগরিক ও রাজনৈতিক ভিন্নমত দমন করার উদ্দেশ্যে প্রণীত দমনমূলক আইনের দ্বারা আরও সুসংহত হয়েছে। যদি এই সক্ষম কাঠামোগুলো ভেঙে মৌলিক সংস্কার করা না হয়, তাহলে ভবিষ্যতে যে কোনো স্বৈরাচারী সরকার, যে রাজনৈতিক মতাদর্শেরই হোক না কেন, নাগরিক ও রাজনৈতিক ভিন্নমত দমন এবং নতুন করে প্রতিবাদ করতে এগুলোকে পুনরায় সক্রিয় করার চেষ্টা করতে পারে।

অন্তর্বর্তী সরকারে সংস্কার উদ্যোগ নিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, বৃহত্তর সংস্কার উদ্যোগের অংশ হিসেবে, অন্তর্বর্তী সরকার পুলিশ, বিচার ব্যবস্থা, দুর্নীতি দমন, গণমাধ্যম, নারী বিষয়ক নীতি ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রসহ বেশ কয়েকটি সংস্কার কমিশন প্রতিষ্ঠা করেছে। ২০২৪ সালের জুলাই এবং আগস্ট মাসে সংঘটিত লঙ্ঘনের পুনরাবৃত্তি না হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে এই কমিশনগুলো গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হতে পারে, যদি তারা মানবাধিকার-ভিত্তিক সংস্কারগুলোকে সমর্থন করে এবং তা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও ভবিষ্যতে নির্বাচিত সরকার উভয়ের দ্বারা যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয়।

বাংলাদেশ সময়: ০৮০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০২৫
ইএস/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।