ঢাকা: পাকিস্তানের রক্তাক্ত থাবা থেকে বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে অবিস্মরণীয় অবদানের জন্য ৫২ বিদেশি নাগরিক ও সংগঠনকে সম্মাননা দেবে সরকার। স্বাধীনতা দিবসের ৪০তম বার্ষিকীতে আগামী ২৬ মার্চ এদের সম্মাননা জানানো হবে।
সম্মাননা পাচ্ছেন এমন ব্যক্তিত্বদের মধ্যে ভারতীয় ১৭ জন, যুক্তরাষ্ট্রের ৮ জন, বৃটেনের ৭ জন, রাশিয়ার ৪ জন, নেপালের ১ জন, ফ্রান্সের ১ জন, ভুটানের ১ জন, আয়ারল্যান্ডের ১ জন, অস্ট্রেলিয়ার ১ জন, জাপানের ৩ জন, নেদারল্যান্ডের ১ জন, সুইডেনের ১ জন, জার্মানির ১ জন রয়েছেন। এছাড়া চারটি আন্তর্জাতিক সংগঠনও এ সম্মাননা পাচ্ছে।
প্রাথমিকভাবে প্রস্তুতকৃত ৩৮৮টি নামের মধ্য থেকে এই ৫২ ব্যক্তি ও সংগঠনকে এ বছর সম্মাননা দেওয়ার জন্য বাছাই করা হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র এসব তথ্য জানিয়ে বলেছে, পর্যায়ক্রমে তালিকাভুক্ত সবাইকে সম্মাননা জানানো হবে। সম্মাননা হিসেবে তাদের ৫০ গ্রাম ওজনের একটি স্বর্ণপদক ও বাংলাদেশের সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।
আগামী ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে ৫২ জনের মধ্যে অনেক ব্যক্তি ও সংগঠনের প্রতিনিধি ঢাকায় এসে সম্মাননা নেবেন। এদের মধ্যে যারা আসতে পারবেন না তাদের সংশ্লিষ্ট দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা জানানো হবে বলেও সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এরইম ধ্যে যারা মারা গেছেন তাদের মরণোত্তর সম্মাননা দেওয়া হবে।
এসব ব্যক্তি ও সংগঠনকে সম্মাননা জানানোর বিষয়গুলো জানিয়ে আমন্ত্রণপত্র পৌঁছানোর কাজ চলতি সপ্তাহে শুরু হতে পারে বলে সূত্র জানায়।
ভারতীয় বিশিষ্ট নাগরিকরা হলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত ইন্দিরা গান্ধী, পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী কমরেড জ্যোতি বসু, আসামের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও কংগ্রেস নেতা শচীন্দ্র লাল সিংহ, কংগ্রেস নেতা প্রয়াত সিদ্ধার্থ শংকর রায়, কূটনীতিক ডি পি ধর, সাবেক ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী আই কে গুজরাল, ভারতীয় সাবেক সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল এসএএম মানেকশ, মুক্তিযুদ্ধকালীন ইস্টার্ন কমান্ডের প্রধান লে. জে. জগজিৎ সিং অরোরা, কূটনীতিক সমর সেন, শহীদ ল্যান্স নায়েক আলব্যার্ট এক্কা, সঙ্গীতজ্ঞ পণ্ডিত রবি শংকর, প্রয়াত মাদার তেরেসা, গীতিকার গোবিন্দ হালদার, ব্যারিস্টার সুব্রত রায় চৌধুরী, লোকসভার সাবেক স্পিকার পি এ সাংমা, বিচারপতি সা`দাত আবুল মাসুদ। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হওয়া ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তা-সদস্যরাও রয়েছেন এ তালিকায়।
রাশিয়ার নাগরিকরা হলেন ইয়াকভ অ্যালেকসান্দ্রোভিচ মালিচ, রিয়ার অ্যাডমিরাল সের্গেই পাভলোভিচ জুনেকো ও তার বাহিনী, সাবেক মন্ত্রী আলেক্সি নিকোলায়েভিচ কোসিগিন এবং তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়েনের সুপ্রিম কাউন্সিলের সভাপতি নিকোলাই ভিতরোভিচ পদগোর্নি।
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা হলেন সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি, সিনেটর ফ্রাংক চার্চ, সিনেটর উইলিয়াম স্যাক্সবি, মুক্তিযুদ্ধকালীন ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের কনসাল জেনারেল আর্চার কে. ব্লাড, গায়িকা জোয়ান বায়েজ, সেপ্টেম্বর অব যেশোর রোড খ্যাত কবি অ্যালেন গিন্সবার্গ, জয়বাংলা চলচ্চিত্রের নির্মাতা লেয়ার লেভিন এবং ফাদার টিম ও ফাদার ইভান্স (যৌথ)।
বৃটিশ নাগরিকরা হলেন, এডওয়ার্ড হিথ, ব্রুস ডগলাস মান, হ্যারল্ড উইলসন, জুলিয়ান ফ্রান্সিস, পিটার শোর, সাংবাদিক সায়মন ড্রিং, বিটলস-খ্যাত গায়ক জর্জ হ্যারিসন।
নেপালের প্রয়াত কংগ্রেস নেতা বিশ্বেশ্বর প্রসাদ কৈরালা (বি পি কৈরালা), ভুটানের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিয়েনপো উগেন তাসিং, আয়ারল্যান্ডের নাগরিক শ্যন ম্যাকব্রাইড, ফ্রান্সের আঁদ্রে ম্যালরো, অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক প্রয়াত উইলিয়াম এ এস অডারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডের মানবাধিকারকর্মী মিসেস কিনটেন ওয়াট ব্যাগে, সুইডেনের সংসদ সদস্য লারস লিয়নবুর্গ, জার্মানির সুনীল দাশগুপ্ত এবং জাপানের নাগরিক প্রয়াত তাকাশি হায়াকাওয়া, তাকামাশা সুজুকি ও সাংবাদিক নাওয়াকি উসুই।
এছাড়া চারটি সংগঠন বিশেষ সম্মাননা পাওয়ার জন্য বিবেচিত হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- জাতিসংঘের শরনার্থী বিষয়ক হাইকমিশন ও এর তৎকালীন ডেপুটি হাইকমিশনার প্রিন্স সদররুদ্দীন আগা খান (যৌথ), জেনেভাভিত্তিক ইন্টারন্যারন্যাশনাল কমিশন ফর জুরিস্টস, বৃটেনের গণমাধ্যম বিবিসি ও ভারতের বাংলা বেতার আকাশবাণী।
মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা বিদেশি নাগরিকদের সম্মাননা জানানোর জন্য গত বছরের ২২ এপ্রিল একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। ওই কমিটি এদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন দেশের যেসব বরেণ্য রাজনীতিক, দার্শনিক, শিল্পী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, বিশিষ্ট নাগরিক এবং সংগঠন স্বাধীনতার পক্ষে ঐতিহাসিক অবদান রেখেছেন তাদের খুঁজে বের করে।
একই সঙ্গে তাদের সম্মাননা দেওয়ার জন্য ১৭ সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করে সরকার। পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি এই কমিটির চেয়ারপারসন।
গত প্রায় এক বছর ধরে একাধিক বৈঠক করে কমিটি ৩৮৮ জনের একটি তালিকা তৈরি করে। এ তালিকা থেকেই ৫২ জনকে সম্মাননা জানানোর জন্য বাছাই করা হয়েছে। তবে অন্যদের আগামী বছরগুলোতে বিজয় দিবস ও স্বাধীনতা দিবসে ধারাবাহিকভাবে সম্মাননা জানানো হবে বলে জানায় সূত্র।
বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকেও আলোচনা করা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন সাপেক্ষে এদের সম্মাননা জানানোর জন্য আমন্ত্রণ জানানো শুরু হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫০ ঘণ্টা, মার্চ ০৫, ২০১১