ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ব্যাংকিং

প্রাইম ইসলামী লাইফে গ্রাহকের টাকা লোপাট

মাহফুজুল ইসলাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৬
প্রাইম ইসলামী লাইফে গ্রাহকের টাকা লোপাট

ঢাকা: নিয়ম বর্হিভুতভাবে গ্রাহকের ৭২ কোটি টাকা লোপাট করেছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিমা খাতের প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি। বিভিন্ন ভাউচারের মাধ্যমে এ টাকা লোপাট করে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা ব্যয় দেখিছে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ।

যা বিমা আইনের লঙ্ঘন।  

বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) বিশেষ প্রতিবেদেন এসব তথ্য উঠে এসেছে।

আইডিআরএ’র প্রতিবেদন অনুসারে, ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত মোট ৭ বছরে প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম আয়ের ভিত্তিতে নির্ধারিত ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের চেয়ে ৭১ কোটি ৭০ লাখ টাকা বেশি দেখিয়েছে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। বিমা বিধিমালা ১৯৫৮ এর ৩৯ বিধি মতে প্রথম বর্ষ ব্যবসার জন্য ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের সর্বোচ্চ সীমা ৯০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।

কিন্তু কোম্পানিটি নির্ধারিত সীমার চেয়ে ২০১৫ সালে ৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা, ২০১৪ সালে ১৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা, ২০১৩ সালে ২৪ কোটি ৩ লাখ টাকা, ২০১২ সালে ১৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকা, ২০১১ সালে ৭ কোটি ৯৮ লাখ টাকা, ২০১০ সালে ২ কোটি ১৩ লাখ টাকা এবং ২০০৯ সালে ৪৯ লাখ টাকা বেশি খরচ দেখিয়েছে। যা বিমা বিধিমালা ১৯৫৮ এর বিধি ৩৯ এর লঙ্ঘন।  

আলোচিত ওই সময়ের মধ্যে ২০১৫ সালে লাইফ ফান্ড দাঁড়িয়েছে ৭৫৭ কোটি ৯৪ লাখ টাকা, ২০১৪ সালে ৭১১ কোটি ৯৮ লাখ টাকা, ২০১৩ সালে ৬২১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা, ২০১২ সালে ৫৩৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকা, ২০১১ সালে ৪৪২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা, ২০১০ সালে ৩৩৭ কোটি ৮৯ লাখ টাকা এবং ২২৫ কোটি ৮২ লাখ টাকায়।

অবৈধ খরচের বিষয়টি স্বীকার করেন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ শাহ আলম। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘গত কয়েক বছর (২০০৯-১৫ সাল) বিমা আইন ভঙ্গ করে কিছু বেশি খরচ করা হয়েছে। তবে গ্রাহকের টাকা লোপাট কিংবা আত্মসাৎ করা হয়নি। প্রকৃতভাবেই খরচ করেছি, সবগুলোর ভাউচার রয়েছে’।

তিনি বলেন, ‘আইডিআরএ’র এ আইন অনেক পুরনো। নতুন করে রিনিউয়াল ইনকামের ওপর ব্যবস্থাপনা ব্যয় আরো বাড়ানো দরকার। কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছি। তারা আমাদের প্রস্তাব গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন। নতুন করে আইন পরিবর্তন করা হলে আগামীতে মানতে চেষ্টা করবো’।


আইডিআরএ’র সদস্য ও মুখপাত্র জুবের আহমেদ খান বাংলানিউজকে বলেন, কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে নিয়ম বহির্ভুত খরচ পাওয়া গেছে। কোম্পানিটির বিষয়ে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


জানা গেছে, এর আগেও কোম্পানিটির বিরুদ্ধে লভ্যাংশ বিতরণ, প্রিমিয়াম ও আমানত সংগ্রহ, বিনিয়োগসহ ১৭টি বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছিলো আইডিআরএ। এর মধ্যে ইসলামী জীবন বিমা হিসেবে পরিচিত প্রাইম ইসলামী লাইফে লভ্যাংশ বিতরণ, প্রিমিয়াম ও আমানত সংগ্রহ, বিনিয়োগসহ নানা অনিয়মের বিষয়টি আইডিআরএ’র নজরে রয়েছে।

এসব অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত করতে নিয়োগ দেওয়া হয় নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোম্পানিকে। এরপর আইডিআরএ থেকে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের করা তদন্ত প্রতিবেদনের সার-সংক্ষেপ প্রাইম ইসলামী লাইফে পাঠিয়ে একাধিকবার ব্যাখ্যা চাওয়া হয়।

প্রতিবেদনে অনুসারে, ২০০৮ সালের লভ্যাংশ ঘোষণার ক্ষেত্রে কোম্পানিটি বড় ধরনের জালিয়াতির আশ্রয় নেয়। কোম্পানির পর্ষদ ২০০৯ সালের ২৯ জুন ওই বছরের জন্য ৩০ শতাংশ বোনাস শেয়ার অনুমোদন করে। অথচ গাণিকের (অ্যাকচ্যুয়ারি) প্রতিবেদন পাওয়া যায় এর এক মাস পর ২৯ জুলাই। যাতে গাণিকের স্বাক্ষরটিও প্রশ্নসাপেক্ষ।

তদন্ত প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে,  কোম্পানিটির ২০১০ সালের মোট বিনিয়োগযোগ্য তহবিল ছিল ২৫১ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১১২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা বা ৪৪ দশমিক ৫৮ শতাংশই প্রতিষ্ঠানটি পুঁজিবাজারে সদস্যপদ কেনাসহ শেয়ারে বিনিয়োগ করে। যা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের নির্দিষ্টসীমা বিমা আইনের ১০ এ (টু) (ই) বিধি অনুযায়ী ৩০ শতাংশ অতিক্রম করেছে। এখান থেকে কোম্পানি ২৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা মুনাফা করে।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৫২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৬
এমএফআই/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।