এ তহবিল থেকে দেশের ৩৪টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ৬ শতাংশ সুদে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদে সর্বোচ্চ ৩৫ কোটি টাকা ঋণ পাবেন পোশাক কারখানার মালিকরা। এ ঋণ দিতে জাপানের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকার অর্থায়নে ২৯৭ কোটি টাকার (৪১৪ কোটি জাপানিজ ইয়েন) পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে মাত্র ২ শতাংশ ঋণ নিয়ে গ্রাহক পর্যায়ে বিতরণ করতে হবে। ঋণ বিতরণের জন্য সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) ২৫টি ব্যাংক ও ৯টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে এ চুক্তি সাক্ষর হয়। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী, জাইকার কান্ট্রি ডিরেক্টর তাকাতোশি নিশিকাতা এবং ৩৪টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন অ্যাজেন্সির (জাইকা) আরবান বিল্ডিং সেফটি প্রজেক্ট-এর অধীনে স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়া হবে। মাত্র দুই শতাংশ সুদহারে ব্যাংকগুলোকে তহবিল সরবারহ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
পোশাক কারখানার ভবন পুনঃনির্মাণ, স্থানান্তর, সংযোজন বা রেট্রোফিটিং, চলতি মূলধন এবং অগ্নিনিরাপত্তার জন্য তহবিল থেকে ঋণ সুবিধা দেওয়া হবে। গ্রাহকদের সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ সুদহারে এ ঋণ দেবে ব্যাংকগুলো। পুনঃঅর্থায়ন তহবিল থেকে একজন গ্রাহক সর্বোচ্চ ৩৫ কোটি টাকা ঋণ সুবিধা পাবেন। তিন বছর বাড়তি সময়সহ ঋণ পরিশোধের সময় ১৫ বছর। তবে প্রয়োজনে প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষে গ্রাহকের এ অর্থের পরিমাণ বাড়তে পারে।
প্রকল্পের তহবিলের মোট আকার ৪২৪ কোটি জাপানি ইয়েন। আর ঋণ তহবিলের পরিমাণ ৪১২ কোটি ৯০ লাখ জাপানি ইয়েন। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ২৯৭ কোটি টাকা। বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিজিএপিএমইএ‘র সদস্য এমন তৈরি পোশাক খাতের ভবন মালিক অথবা কারখানার মালিকেরা এ ঋণ সুবিধা পাবেন।
অনুষ্ঠানে গভর্নর ফজলে কবির বলেন, তৈরি পোশাক শিল্পে নিরাপদ কর্মপরিবেশ সৃষ্টি করতে কাজ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আগামী ২০২১ সালে ৫ হাজার কোটি ডলার রফতানির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। তা অর্জনে জাইকার সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। একই সঙ্গে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে তা সহায়ক হবে।
তহবিলটি পরিচালনা করছে বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস বিভাগ। ঋণ নিতে ওই বিভাগের সঙ্গে ব্যাংকগুলো চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। যেসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কম, ন্যূনতম মূলধন সংরক্ষণ করেছে এবং ধারাবাহিক মুনাফা করছে সেইসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠাগুলোকে চুক্তির জন্য মনোনীত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী ব্যাংকগুলো হলো- ব্যাংক এশিয়া, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন, ঢাকা ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইস্টার্ন, আইএফআইসি, যমুনা, মার্কেন্টাইল, মিডল্যান্ড, মধুমতি, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট, ন্যাশনাল, এনসিসি, এনআরবি কমার্শিয়াল, এনআরবি গ্লোবাল, ওয়ান, প্রাইম, পূবালী, শাহজালাল ইসলামী, সাউথইস্ট, স্ট্যান্ডার্ড, ফারমার্স, প্রিমিয়ার, ট্রাস্ট ও ইউসিবি ব্যাংক।
১০টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান চুক্তির জন্য মনোনীত হলেও ৯টি প্রতিষ্ঠান চুক্তি করেছে। এগুলো হলো- বাংলাদেশ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, বে-লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, ফারইস্ট ফাইন্যান্স, আইডিএলসি ফিন্যান্স, ইন্ড্রাস্টিয়াল অ্যান্ড ইনফ্রাস্টাকচার ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স, আইপিডিসি, ইসলামিক ফাইন্যান্স, প্রিমিয়ার লিজিং ও ইউনিয়ন ক্যাপিটাল। লঙ্কাবাংলা মনোনীত হলেও চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন জাইকা বাংলাদেশ অফিসের চিফ রিপ্রেজেন্টেটিভ তাকাতোশি নিশিকাতা, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী, অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিস এ খান, আইডিএলসি ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ খান প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি: ১৩, ২০১৭
এসই/এমজেএফ